শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সাবেক ছাত্রনেতাদের

বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সাবেক ছাত্রনেতাদের

বিএনপির আন্দোলন ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ছাত্রদলের সাবেক নেতারা। তাদের অভিযোগ, আন্দোলনে তৃণমূলের নেতারা মাঠে থাকলেও ঢাকাসহ সারা দেশে কেন্দ্রীয় নেতারা থাকেন আÍগোপনে। তারা দলীয় দায়িত্ব পালনের চেয়ে নিজেদের সম্পদ রক্ষার কাজে ব্যস্ত থাকেন বেশি। আগামী দিনের আন্দোলনে ঢাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ব্যর্থ হলে তাদের বাড়ি ঘেরাও করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
কমিটিতে যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয় না দাবি করে তৃণমূল থেকে আসা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিপি-জিএসরা বলেন, মাঠের নেতাদের বাদ দিয়ে ঢাকা থেকে পকেট কমিটি করা হয়। গুলশানের চেয়ারম্যান কার্যালয়ে চাটুকার, আমলা আর ব্যবসায়ীদের একচ্ছত্র আধিপত্য।
গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ’৯০-র ডাকসু এবং সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জাতীয় কনভেনশনে বিএনপি সমর্থিত সাবেক ছাত্রনেতারা এসব মন্তব্য করেন। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত না থাকলেও মঞ্চে এবং দর্শক সারিতে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে তাদের অনেককেই বিব্রত হতে দেখা গেছে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে দিনব্যাপী এ কনভেনশনের প্রথমার্ধে সকাল সোয়া ১০টায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কর্মসূচি উদ্বোধনী বক্তব্য দেন। এর পর তৃণমূল থেকে আসা প্রায় অর্ধশত ছাত্রনেতা বক্তব্য দেন। বক্তব্যে ছাত্রনেতারা সবাই আন্দোলন ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন।
সারা দেশ থেকে প্রায় চার হাজার সাবেক ছাত্রনেতা এই কনভেনশনে অংশ নেন। খুলনা বিভাগে সাবেক ছাত্রনেতা আজিজুল বারী হেলাল, চট্টগ্রাম বিভাগে শফিউল বারী বাবু, ঢাকা বিভাগে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে আমিরুল ইসলাম খান আলীম, বরিশাল বিভাগে এ বি এম মোশাররফ হোসেন ও সিলেট বিভাগে আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল দায়িত্ব পালন করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ছাত্রনেতারা দলের অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন। সব ভেদাভেদ ভুলে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের কথাও বলেন তারা। ছাত্রনেতারা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাবেক ছাত্রনেতাসহ তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সব সময় যোগাযোগ করার সুযোগ তৈরি করতে হবে। তাহলেই মাঠের বাস্তব চিত্র বোঝা যাবে। তাদের আশঙ্কা, আন্দোলনে নামার আগে এসব সংকটের সমাধান না হলে আন্দোলন ব্যর্থ হতে পারে। বরিশালের বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মাহবুবুল হক নান্নু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিএনপিতে মোটাতাজাকরণ প্রকল্প শুরু হয়েছে। অন্য দলের নেতাদের নেতৃত্বে বসানো হচ্ছে। আমি অনেক দিন ধরে গুলশান অফিসে যাই না। কারণ সেখানে ব্যবসায়ীদের মর্যাদা বেশি। আর তারেক রহমানকে যারা গালি দেয়, তাদের মূল্যায়ন করা হয়।’ সারা দেশে আন্দোলন হলেও ঢাকা কেন ‘ব্যর্থ’ হয়েছে-  এমন প্রশ্ন তুলে টাঙ্গাইল জেলার সাবেক ছাত্রনেতা ফরহাদ ইকবাল বলেন, ‘ঢাকার নেতাদের বলতে হবে তারা আগামীতে রাজপথে থাকবেন কিনা? তৃণমূলে আমরা প্রস্তুত, ঢাকার  নেতাদের সংগঠিত হতে হবে।’ খুলনা থেকে আসা এক ছাত্রনেতা বলেন, ‘হাতে চুরি পরে লুকিয়ে থেকে আন্দোলন হবে না। দলের মধ্যে আওয়ামী জাতীয়তাবাদীদের প্রতিরোধ করতে হবে। লুকিয়ে থাকাদের দিয়ে এই স্বৈরাচারের পতন ঘটানো যাবে না।’ ঢাকা মহানগরকে শক্তিশালী করতে সংগ্রাম কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন ময়মনসিংহ থেকে আসা মোতাহার হোসেন। তিনি বলেন, ঢাকায় আন্দোলন সফল হলে তৃণমূলেও সফল হবে। খুলনার ছাত্রনেতা শফিকুল আলম তুহিন বলেন, ‘খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবনে অবরুদ্ধ আর তারেক রহমান বিদেশে নির্বাসনে থাকবেন- এটা আমরা দেখতে চাই না।’
দ্রুত আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণার দাবি জানিয়ে যশোরের সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘এখানে আপস নয়, লড়াই করতে হবে। ৫ জানুয়ারির আন্দোলনে ঢাকার নেতারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। তৃণমূল প্রস্তুত রয়েছে, এখন ঢাকা  থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত করতে হবে।’ সিলেটের সাবেক এক ছাত্রনেতা বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে কোনো কমিটি তৃণমূল নেতৃত্বে চাপিয়ে দিলে হবে না। সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই কমিটি গঠন করতে হবে।’ ইডেন কলেজের সাবেক ভিপি ও সাবেক এমপি হেলেন  জেরিন খান বলেন, ‘৫ জানুয়ারি আন্দোলন পূর্ণ সফল না হওয়ার জন্য শেখ হাসিনা দায়ী নয়, আমরাই দায়ী। ২৪ বছর রাজনীতি করছি, সামনের কাতারে থাকার চেষ্টা করেছি। দুঃখ হয়, গত তিন বছরেও ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। অথচ প্রায় ৫০ জনের মতো লোক প্রতিনিয়ত ম্যাডামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।’

সর্বশেষ খবর