রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রস্তুত

আন্দোলনের নামে সহিংসতা মোকাবিলায় হার্ডলাইনে থাকছে সরকার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকবে কঠোর অবস্থানে। রাজপথে জ্বালাও পোড়াওয়ের সঙ্গে জড়িতদের কোনো ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। রাজধানীসহ দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যা যা প্রয়োজন, তার সবটুকুই প্রয়োগের নির্দেশনা পেয়ে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সরকার ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পাঁচ জানুয়ারি ঘিরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনের ঘোষণা এবং নাশকতা নিয়ে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার আশঙ্কা প্রকাশ করার পর কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে আগাম ব্যবস্থা হিসাবে সাড়ে তিন হাজার নামের তালিকা নিয়ে সাঁড়াশি অভিযানেরও প্রস্তুতি চলছে। সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, কোনোভাবেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে দেওয়া হবে না। এ জন্য সহিংসতা প্রশ্নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জিরো টলারেন্সে থাকার নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত ১৭টিসহ বিগত দিনের আন্দোলনপ্রবণ জেলাগুলোর ওপর সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে সন্দেহভাজন নেতা-কর্মীরা।  যোগাযোগ করা হলে পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, সহিংসতার পথ বেছে নিয়ে জ্বালাও-পোড়াও করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা বা যে কোনো ব্যক্তি ফৌজদারি অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছে। ভবিষ্যতেও করবে। রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযানের বিষয় নয়, যারা অপরাধে জড়িত রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান সব সময়ই চলছে। জনগণের প্রয়োজনে ও দেশের স্বার্থে পুলিশ সব কিছু করতে প্রস্তুত। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তিতে বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। এই সময়টিকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচনায় এনে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা কর্মকৌশল প্রণয়ন করেছেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ইতিমধ্যেই ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারের কাছে বিশেষ নোট পাঠানো হয়েছে। বিগত দিনগুলোতে জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত ১৭টিসহ আন্দোলন প্রবণ জেলাগুলোর ওপর সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই বার্তায়। ভাঙচুর, পিকেটিং, অগ্নিসংযোগকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর থাকারও নির্দেশনা দেওয়া হয় ওই বার্তায়। এ ছাড়া তালিকাভুক্তদের বিরুদ্ধে আগাম ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের এক পদস্থ কর্মকর্তা জানান, সরকারি সম্পদ ও জনগণের জানমাল রক্ষায় শীঘ্রই দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হচ্ছে। পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি এ অভিযানে কোথাও কোথাও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সম্পৃক্ত করা হতে পারে। নাশকতায় সরাসরি জড়িত ও ইন্ধনদাতাদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। গ্র্রেফতারের তালিকায় রয়েছেন সাড়ে তিন হাজার বিএনপি, জামায়াত-শিবির নেতা। এ ছাড়া রয়েছে জঙ্গি ও পেশাদার অপরাধীদেরও নাম। রাজধানীর প্রতিটি থানার ওসিদের ডিএমপির সদর দফতর থেকে এ বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, যে রাজনৈতিক নেতাদের উসকানিতে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে তারাই মূলত নজরদারির মধ্যে রয়েছে। তালিকাভুক্তদের বিরুদ্ধে হত্যা, যানবাহনে অগ্নিসংযোগসহ একাধিক মামলা রয়েছে। কেউ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক দলের নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে নানা রকমের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ঢাকার ৯০টি ওয়ার্ড, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, টেকনাফ, খুলনা, সিলেট, যশোর, কুমিল্লা, সিলেটসহ আরও কয়েকটি এলাকায় জামায়াত-শিবিরের আনাগোনা বেড়ে গেছে। পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের তৎপরতা রয়েছে। ওইসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

সর্বশেষ খবর