সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
কিবরিয়া হত্যা মামলা

আরিফ হারিছের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

আরিফ হারিছের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

সাবেক অর্থমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র (চার্জশিট) গ্রহণ করেছেন হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। একই সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং হবিগঞ্জের পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জি কে গউছসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রশিদ আহমেদ মিলন গতকাল এ মামলার চার্জশিট গ্রহণ করে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। শুনানি শেষে আদালতের বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে উভয় পক্ষের অন্তত সাতজন আহত হন। ১৩ নভেম্বর তৃতীয় দফা সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি সিলেট অঞ্চলের সিনিয়র এএসপি মেহেরুন নেছা পারুল। কিন্তু ওই চার্জশিটে ত্রুটি থাকায় ৩ ডিসেম্বর তা সংশোধনের জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সংশোধিত চার্জশিট জমা দেন মেহেরুন নেছা পারুল। শুনানি শেষে মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয় ৮ জানুয়ারি। হবিগঞ্জের তথা সিলেট বিভাগের গত কয়েক দিনের আলোচ্য বিষয় ছিল শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট প্রসঙ্গ। আরিফুল হক এবং জি কে গউছের নাম সম্পূরক চার্জশিটে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়। শনিবার হবিগঞ্জ শহরে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। সম্পূরক চার্জশিটের বিষয়ে শুনানির জন্য গতকাল নির্ধারিত তারিখ থাকায় সকাল থেকেই কোর্ট প্রাঙ্গণে চাঞ্চল্য দেখা যায়। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। ৩ ডিসেম্বর বিএনপির নেতা-কর্মীরা কোর্ট প্রাঙ্গণে হট্টগোল করলে এবার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও উপস্থিত হন। ফলে কোর্টের বাইরে ও ভেতরে দেখা দেয় উত্তেজনা। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কিবরিয়া হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। মামলার বাদী অ্যাডভোকেট মো. আবদুল মজিদ খান এমপি ও আইনজীবী আলমগীর ভূঁইয়া বাবুল আদালতে আবেদন করেন চার্জশিট গ্রহণপূর্বক বিচারের কার্যক্রম শুরু করার জন্য। তাদের সঙ্গে আরও অর্ধশতাধিক আইনজীবী একই দাবি জানান। এ সময় বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা মামলার এফআইআরে নাম না থাকার পরও আরিফুল হক, জি কে গউছ ও হারিছ চৌধুরীর নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদ করেন এবং উল্লিখিত ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানান। বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হইচই শুরু হলেও বিচারক রশিদ আহমেদ মিলন চার্জশিট গ্রহণ করে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে মামলার বাদী আবদুল মজিদ খান এমপি ও আইনজীবী আলমগীর ভূঁইয়া বাবুল বলেন, ‘আদালত চার্জশিট গ্রহণপূর্বক বিচারকাজ শুরু এবং পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। ফলে দীর্ঘ ১০ বছর পর কিবরিয়া হত্যার বিচারে আর কোনো বাধা রইল না। এখন আমরা দ্রুত এ মামলার বিচার দেখতে চাই।’ বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের পক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালেহ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতেই হারিছ, আরিফ ও গউছের নাম সম্পূরক চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ : আদালতে মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ ও আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির খবর ছড়িয়ে পড়লে বাইরে বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী মিছিল শুরু করেন। তখন কাউন্টার মিছিল বের করেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। প্রদক্ষিণের সময় দুটি মিছিল কোর্ট মসজিদের সামনে মুখোমুখি হয়। একটি মিছিল অপরটিকে অতিক্রম করার সময় শুরু হয় পাল্টপাল্টি স্লোগান। একপর্যায়ে একটি মিছিল থেকে অপরটিতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এর পরই শুরু হয় সংঘর্ষ। পরস্পরের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ফলে জায়গাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ বাধা দিলে মিছিল দুটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে প্রেসক্লাবের সামনে আবারও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের সাতজন আহত হন। এদের মধ্যে যুবলীগ নেতা ইকবাল আহমেদ খান, যুবদল নেতা ইমরান আহমেদ, ছাত্রলীগ নেতা সাঈদ খোকন, জাকির হোসেন ও ইমন আহমেদ হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
আসমা কিবরিয়ার মন্তব্য : সম্পুরক চার্জশিট গ্রহণ প্রসঙ্গে কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া বলেন, ‘কাজ তো সবে শুরু। আমি দেখতে চাই ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে যায়। তারপর আমি এ ব্যাপারে আমার প্রতিক্রিয়া জানাব।’
বহিষ্কার হচ্ছেন দুই মেয়র : স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ১২(১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়রের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হলে কমিশনের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে ক্ষেত্রমতো মেয়রকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে। একই ধরনের বিধান রয়েছে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯-এর ৩১(১) ধারায়। ফলে কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশিট আদালতে গৃহীত হওয়ায় মেয়র পদ থেকে আরিফুল হক চৌধুরী ও জি কে গউছের সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বৈদ্যেরবাজারে আওয়ামী লীগের জনসভা শেষে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ পাঁচজন। আহত হন আরও ৭০ জন। এ ঘটনায় আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন।

সর্বশেষ খবর