সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
পে-কমিশনের প্রতিবেদন

সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২০০ সর্বোচ্চ ৮০ হাজার

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন বেতন ৮ হাজার ২০০ টাকা প্রস্তাব করে  অষ্টম জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গতকাল অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। কমিশন গ্রেডের সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে ১৬-তে আনার প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে।
বেতন কমিশন প্রতিবেদনে প্রথম গ্রেডের জন্য ৮০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় গ্রেডে ৭০ হাজার টাকা, তৃতীয় গ্রেডে ৬০ হাজার টাকা, চতুর্থ গ্রেডে ৫২ হাজার টাকা, পঞ্চম গ্রেডে ৪৫ হাজার    টাকা, ষষ্ঠ গ্রেডে ৩৭ হাজার টাকা, সপ্তম ৩২ হাজার টাকা, অষ্টম গ্রেডে ২৫ হাজার টাকা, নবম গ্রেডে ১৭ হাজার টাকা, দশম গ্রেডে ১৩ হাজার টাকা, ১১তম গ্রেডে ১১ হাজার ৫০০ টাকা, ১২তম গ্রেডে ১০ হাজার ৫০০ টাকা, ১৩তম গ্রেডে ১০ হাজার টাকা, ১৪তম গ্রেডে ৯ হাজার ৫০০ টাকা, ১৫তম গ্রেডে ৯ হাজার টাকা এবং ১৬তম ৮ হাজার ২০০ টাকা বেতনের প্রস্তাব করেছে। এ ছাড়া সিনিয়র সচিবের ৮৮ হাজার টাকা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের এক লাখ টাকা বেতন করার প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রতিবছর ১ জুলাইয়ে ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল সকালে সচিবালয়ে কমিশন চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন কমিশনের সদস্যদের নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। অর্থমন্ত্রী প্রতিবেদন গ্রহণের পর বলেন, মনে হচ্ছে, এটা একটা ভালো রিপোর্ট। ‘আমাদের ইচ্ছা, এটা (পে স্কেল) কার্যকর করব ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে। তিনি বলেন, নতুন পে স্কেলের ফলে মূল্যস্ফীতিতে কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না। এ সময় অর্থসচিব মাহাবুব আহমেদসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদনে এই প্রথমবারের মতো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। স্বেচ্ছা অবসর যাওয়ার সময় ২০ বছর করার সুপারিশ করেছে কমিশন। এ ছাড়া বেতন কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে সেসব হচ্ছে, বিসিএস পাস করে চাকরিতে যোগদানকারী কর্মকর্তার প্রারম্ভিক বেতন ২৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পৃথক একটি বেতন কাঠামো গঠন। রাষ্ট্রায়ত্ত লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন বেতন কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত।  প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় কমিশন চেয়ারম্যান ড. ফরাসউদ্দিন এর সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, প্রথমবারের মতো সরকার চার সদস্যের পরিবারের থেকে ছয় সদস্যের পরিবারের জন্য বেতনকাঠামো সুপারিশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেতন গ্রেড ও স্কেলের মধ্যে ২০টি ধাপ থাকবে এবং ১৫ বছরে বেতন দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার মতো বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৪র্থ থেকে ১৬তম গ্রেড বা স্কেলের বেতনে একই হারে অর্থাৎ শতকরা ৫ ভাগ প্রথমবারের মতো চক্রবৃদ্ধি হারে বার্ষিক বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, এতে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি হবে শতকরা ৬৩ দশমিক ৭ ভাগ। বর্তমান জাতীয় বাজেট অনুপাতে বেতন-ভাতা, অবসর ভাতা, সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান মিলে খরচ শতকরা ১৪ দশমিক ২ ভাগ বাড়বে। নতুন বেতন কার্যকর হলে বর্তমান প্রাপ্ত ২০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা বাতিল হয়ে যাবে। অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন ভাতা হিসেবে ছুটি পাওনা সাপেক্ষে নগদায়ন বছরে ১২ মাসের পরিবর্তে ১৮ মাস করার সুপারিশ করা হয়েছে। এলপিআর ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া যায় কি না, সে বিষয়েও সুপারিশ করেছে কমিশন। কমিশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, বেতন-ভাতার বাইরে সরকারি চাকুরেদের বাসস্থান একটি বড় সমস্যা। এ বিষয়ে কমিশন বিভিন্ন বিকল্প সুপারিশ রেখেছে। এর একটি  হলো রিয়েল এস্টেটদের মাধ্যমে সরকারের পুরোনো বাড়ি-ঘর ভেঙে অথবা খাসজমি দিয়ে ৬০-৪০ ভিত্তিতে আবাসনের ব্যবস্থা করা। অপর একটি বিকল্প হলো, ৩০ জন বা ১০ জনের গ্রুপকে ৫ বা ১০ কাঠা জমি গৃহনির্মাণের জন্য দেওয়া। এক্ষেত্রে ৫০ মাসের বেতন ব্যাংক রেটে দেওয়া যেতে পারে। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণ ফান্ডের আওতায় দৈনিক বাংলার মোড়ে যে বিরাট ভূমি রয়েছে, তার থেকে ২০ বা ২৫ কাঠা জমি বিক্রি করে ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন  জোগাড় করে ‘সমৃদ্ধির সোপান’ নামে একটি ব্যাংক স্থাপনের সুপারিশ বিবেচনা করা যেতে পারে। এই ব্যাংকটি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মালিকানায় হবে। ব্যাংকে ১০-১২ লাখ লোকের মধ্য থেকে পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন করা হবে। চাকরি বিষয়ে ব্যাপক সংস্কার ও পুনর্গঠন ভেবেচিন্তে করাই সমীচীন হবে।

সর্বশেষ খবর