মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

ধামাচাপা চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা

ধামাচাপা চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা

মামলা চাঞ্চল্যকর, অথচ হত্যা রহস্য উদ্ঘাটিত হচ্ছে না দীর্ঘদিনেও। দেশজুড়ে আলোচিত খুনের ক্লু খুঁজে পাচ্ছেন না তদন্তকারীরা। ধারণার ওপর ভর করেই চলছে তাদের তদন্ত। এ কারণে সুরাহা হচ্ছে না আলোচিত সব হত্যার রহস্য। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বার বার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হওয়ায় খুনের রহস্য উন্মোচনে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, প্রকৃত আসামিদের বাঁচানোর জন্যই তদন্তে গতি নেই। কয়েকটি মামলায় ১০বার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। মূলত মামলাগুলো ধামাচাপা দিতেই বছরের পর বছর ধরে তদন্ত করা হচ্ছে।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শতাধিক চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত করছে র‌্যাব, সিআইডি, ডিবি ও থানা পুলিশ। কয়েকটি মামলা ঝুলে আছে ৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে। ৬ বছরেও হত্যাকাণ্ডের মোটিভই উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। এসব মামলার অধিকাংশই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলে রয়েছে স্পর্শকাতর মামলা হিসেবে। আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলো হচ্ছে- গোপীবাগের ‘সিক্স মার্ডার’, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ড, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ড, পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল করিম হত্যা, মীরহাজীরবাগ এলাকায় পরিবহন ব্যবসায়ী জুয়েল হোসেন ও তার বন্ধু পোশাক ব্যবসায়ী মারুফ হোসেন টুটুল হত্যাকাণ্ড, অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম বাচ্চু ও তুর্কি অ্যাসোসিয়েটসের পরীবাগ অফিসে রমজান আলী হত্যা মামলা অন্যতম। নিহতের স্বজনরা জানান, আট বছরেও অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। সাত বছরেও উদ্ঘাটন করতে পারেনি তুর্কি অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের পরীবাগ অফিসে রমজান আলী হত্যার রহস্য। একইভাবে পাঁচ বছরেও শনাক্ত করতে পারেনি মীরহাজীরবাগে দুই বন্ধু হত্যাকাণ্ডের মোটিভ। তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে জুয়েল ও টুটুলকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। চাঞ্চল্যকর এ জোড়া হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে ১০বার তদন্ত কর্মকর্তার বদল ঘটে। এতে সঠিকভাবে এগুতে পারেনি তদন্ত কর্মকাণ্ড। জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ৬৪/৬ আর কে মিশন রোডের চারতলা বাড়ির দ্বিতীয়তলায় ছয়জনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় খুন হন কথিত ‘আধ্যাত্মিক পীর’ ইমাম মাহদির সেনাপতি দাবিদার লুৎফর রহমান ফারুক, তার বড় ছেলে সরোয়ার ইসলাম ফারুক, পীরের মুরিদ শাহীন, অনুসারী মজিবুর, মঞ্জুরুল আলম ও রাসেল ভূঁইয়া। ঘটনার সময় বাসায় থাকা অন্য পুরুষ ও নারীদের হত্যা করা হয়নি। লুট হয়নি কোনো মালামালও। খুনের তালিকায় কথিত পীরের আরেক ছেলে আবদুল্লাহ আল ফারুকের নাম ছিল। তবে তিনি বাসায় না থাকায় প্রাণে রক্ষা পান। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আবদুল্লাহ ফারুক অচেনা ১০-১২ জনকে আসামি করে ওয়ারী থানায় একটি মামলা করেন। সূত্র জানায়, এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পুলিশের সন্দেহের দৃষ্টি ছিল জঙ্গিদের প্রতি। কিন্তু ওই পর্যন্তই। পুলিশ আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের করতে পারেনি। মামলার তদন্ত এক রকম থেমে আছে। ডিবি পুলিশ মামলার তদন্ত করছে।
গত ২৭ আগস্ট রাজধানীর পূর্বরাজাবাজারের নিজ বাসায় গলা কেটে হত্যা করা হয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, শরিয়ত ও সুফিবাদে বিশ্বাসী ছিলেন মাওলানা ফারুকী। তাই  বিভিন্ন সময়ে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তার মতাদর্শ বিরোধীরাই পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে। কিন্তু পুলিশ এ মামলার রহস্যের জট খুলতে পারেনি। পুলিশের ধারণা, জঙ্গিরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
২০১২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়নি দীর্ঘদিনেও। প্রথমে পুলিশ, পরে গোয়েন্দা পুলিশ এবং সর্বশেষ র‌্যাব এ মামলার তদন্ত করলেও রহস্যের জট খুলতে পারেনি কেউ। মামলাটি ধামাচাপা পড়ে গেছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

সর্বশেষ খবর