রবিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

উৎকণ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়

নতুন নির্বাচন দাবির আগে নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংলাপ জরুরি

বাংলাদেশ ইস্যুতে দুটি এজেন্ডাকে সামনে রেখে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। সরকারের প্রতি তাদের আহ্বান স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করার। আন্দোলনরত পক্ষগুলোকে যে কোনো মূল্যে সহিংসতা পরিহার করার আহ্বান তাদের। ইতিমধ্যে প্রকাশিত বক্তব্য ও বিবৃতিগুলোতে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। বিদেশি কূটনীতিকরা বলছেন, নতুন নির্বাচনের দাবির আগে নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংলাপ জরুরি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সর্বশেষ বিবৃতিতে বাংলাদেশ পরিস্থিতির একটি পটভূমি উঠে এসেছে। এতে বর্তমান সংঘাতের সূচনা হিসেবে ৫ জানুয়ারির বর্ষপূর্তিতে বিএনপি চেয়ারপারসন ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিতে সরকারের বাধা দেওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। বলা হয়, এরপর সহিংসতায় এক ডজনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। বিরোধী দলের অনেক বড় নেতাকে আটক করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দুই পক্ষকে সংযত হতে বলেছে জাতিসংঘ সংস্থা। সরকারের প্রতি তাদের আহ্বান, বিরোধী নেতাদের যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, সেটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তাও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এ ছাড়া শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, চলাচল ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে হত্যার ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্থার।
অন্যদিকে, ইউরোপের ২৭ দেশের জোট ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিবৃতিতেও বাংলাদেশে রাজনৈতিক বা গণতান্ত্রিক চর্চা সঙ্কুচিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ইইউর সর্বশেষ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিশন প্রধানরা গণতান্ত্রিক স্পেস সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ায় শঙ্কিত। শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ কোনোভাবেই সভা-সমাবেশ, আন্দোলন এবং বাক-স্বাধীনতার অধিকারের বিনিময়ে হওয়া উচিত নয়। দ্রুত সহিংসতা পরিহার গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সব অংশীদারের মধ্যে সত্যিকার সংলাপ শুরুর জন্য তারা ফের আহ্বান জানান। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বক্তব্যেও একই বিষয়ের প্রতিচ্ছবি। স্টেট ডিপার্টমেন্টের সর্বশেষ বিবৃতিতে বলা    হয়েছে, ‘আমরা সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহার করার আহ্বান জানাই। সব দলকে সংযত আচরণ করতে এবং সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই এবং জনগণের স্বাধীনভাবে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারকে আহ্বান জানাই।’ এর বাইরে ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকেও বিবৃতি দিয়ে উভয় পক্ষ থেকে পরিমিতি বোধ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন কূটনীতিকরা নিজ নিজ রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত। পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলোর মতো প্রকাশ্যে সার্বিক পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক উদ্বেগ প্রকাশ না করলেও এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চলাফেরাও সঙ্কুচিত করে নিয়ে এসেছেন কূটনীতিকরা। অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় তারা বলছেন, বিভিন্ন পক্ষ থেকে অবিলম্বে সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নতুন নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন বা সরকারের পদত্যাগ এ পরিস্থিতির ইতি ঘটাবে না। প্রয়োজন নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে দুই দলের একমত হওয়া। যে প্রক্রিয়ায় দুপক্ষই নিজেদের সুসংহত মনে করবে। মূলত এ জন্যই সংলাপের প্রয়োজন। সেখানে বৃহৎ পরিসরে স্থানীয় রাজনীতিকদের বাইরে নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ জরুরি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর