রবিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

জামায়াতের বিচার করতে আইন সংশোধন হচ্ছে

মন্ত্রিসভায় খসড়া উঠছে কাল

জামায়াতের বিচার করতে আইন সংশোধন হচ্ছে
যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এর দুটি ধারায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনাসহ অনেকগুলো ধারায় পরিবর্তন, সংযোজন ও সংশোধন আনছে সরকার। ইতিমধ্যে সংশোধিত ও সংযোজিত অংশের খসড়াও প্রস্তুত করেছে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ (আইনপ্রণয়ন) ও সংসদবিষয়ক বিভাগ। চূড়ান্ত এ খসড়াটি আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠতে পারে বলে জানা গেছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ব্যক্তির অপরাধের ক্ষেত্রে সংগঠনকে দায়ভার বহন করতে হবে বলে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদ্যমান অধ্যাদেশের চতুর্থ ধারার উপ-ধারা-১ এ আগে ছিল কোনো ব্যক্তি একক বা যৌথভাবে কোনো অপরাধ সংগঠন করলে তাদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদাভাবে বিচারের মুখোমুখি করা যাবে। এতে করে সংগঠনকে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। এ অবস্থায় ব্যক্তির অপরাধের জন্য তার সংগঠনকে এই অপরাধ বহনের কথা উল্লেখ করে এই উপ-ধারাটিতে সংশোধন আনা হচ্ছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে নতুন করে সংযোজন করা হচ্ছে- ‘কোন ব্যক্তি এককভাবে অপরাধে জড়িত হলে তার দায়ভার সংগঠনকে বহন করতে হবে।’ শুধু তাই নয়, সংগঠনের কোনো পর্যায়ে কোনো কমিটিতে অর্থাৎ সংগঠনের নির্বাহী কমিটি, সাধারণ কমিটি, আঞ্চলিক কমিটি কিংবা স্থানীয় কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট অন্য যে কোনো কমিটির সদস্য হলেও তার অপরাধের দায়ভার ওই সংগঠনের ওপর বর্তাবে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংগঠনেরও বিচার হবে। 
আইনের ধারা ২০ এর উপ-ধারা ২ তে আগে ব্যক্তির শাস্তির কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা ছিল। কিন্তু সংশোধনীতে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের শাস্তির বিষয়টিও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে সংগঠনের শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, আদালত অভিযুক্ত সংগঠনকে সরাসরি নিষিদ্ধ করতে পারবে। ভবিষ্যতে এই নামে অথবা ভিন্ন কোনো নামে একই ধরনের সংগঠনের কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করতে পারবে। শাস্তির ক্ষেত্রে শুধু যে সংগঠনকেই সংযোজন করা হয়েছে তা নয়। এ ক্ষেত্রে শাস্তির রকমফেরও সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আগে ছিল ট্রাইব্যুনাল যে রূপ মনে করে সে রূপ শাস্তি দিতে পারবে। কিন্তু সংযোজনীতে শাস্তিকে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যেমন সংগঠন নিষিদ্ধ করা, সংগঠনের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, সংগঠনের ভবিষ্যৎ কোনো কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং সংগঠনের দায়িত্বে থেকে কৃত অপরাধের জন্য ব্যক্তির শাস্তিও মৃত্যুদণ্ড দিতে পারবে। আগের আইনে এগুলো ছিল না। এখন শাস্তির আওতা বাড়ানো হয়েছে। অহেতুক বিতর্ক এড়াতে আইনে শাস্তির মাত্রা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যদিও শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনেও কোনো সমস্যা ছিল না। আদালত যে রূপ মনে করতেন সে রূপ শাস্তিই দিতে পারতেন। এ ছাড়া বিদ্যমান এ আইনের প্রস্তাবনার ধারায় পূর্বে উল্লেখিত ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনকেও অপরাধের জন্য সার্বিকভাবে দায়বদ্ধ করা হচ্ছে। এই আইনের ধারা ৯, ১০এ, ১২, ২১এ -ও ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠন যুক্ত হচ্ছে। এই আইন সংশোধনের ফলে শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামসহ যেসব সংগঠন যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের বিচারের প্রক্রিয়া সহজ হচ্ছে।
সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধের জন্য সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন বিতর্ক দেখা দেয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইতিপূর্বে একাধিকবার বলেছেন, বিদ্যমান আইনে জামায়াতে ইসলামীকে বিচার করা যাবে না। জামায়াতে ইসলামীর বিচার করতে হলে আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনতে সংশোধন করতে হবে।

সর্বশেষ খবর