রবিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

ওবামার চড়া স্বরে স্বভাবতই খুশি সাউথ ব্লক

ঋতুপর্ণা রায়, নয়াদিল্লি

ওবামার চড়া স্বরে স্বভাবতই খুশি সাউথ ব্লক

নয়াদিল্লির বিমান ধরার আগে শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার আসন্ন সফরের স্বরটি বেঁধে দিলেন পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিয়ে। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ একটি বড় বিষয় হয়ে উঠতে চলেছে তা আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে। শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ‘আমি এ কথা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় আমেরিকা পাকিস্তানের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে ঠিকই। তথাপি সে দেশ জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। এটা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। মুম্বাই হামলার পিছনে যারা রয়েছে তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত।’ ওবামার এই চড়া স্বরে স্বভাবতই খুশি সাউথ ব্লক। এমন একটি সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমন মন্তব্য করছেন যখন সীমান্তে ভারত এবং পাকিস্তানের উত্তেজনার পারদ চড়ে রয়েছে। গত চার মাস ধরে লাগাতার ছায়াযুদ্ধ চলছে সীমান্তে এবং কাশ্মীরে। চলছে পাক অনুপ্রবেশ। এই পরিপ্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউস কেন ইসলামাবাদকে সরকারিভাবে অস্ত্র সাহায্য করছে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল ভারতীয় রাজনৈতিক শিবিরে। বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মোদি সরকারও। ওবামার সফরে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, পরমাণু চুক্তি পরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক অগ্রগতির প্রত্যাশা করা হচ্ছে দু’তরফ থেকেই। এমন সময়ে যাতে পাকিস্তানের ছায়া আসন্ন শীর্ষ বৈঠকে কোনো ভাবেই না পড়তে পারে, আজ সে কারণেই ওবামা সক্রিয় হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সাধারণভাবে মার্কিন দেশের নেতা দক্ষিণ এশিয়ায় সফরে এলে ভারতের পর পাকিস্তানে যান এবং তারপর সেখান থেকে আমেরিকার ফিরতি বিমান ধরেন। অতীতে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে ভারতে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা সংক্রান্ত বহু প্রতিশ্র“তি এবং কৌশল শেষ পর্যন্ত লঘু হয়ে যায় যখন সেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট কয়েক ঘণ্টা ব্যবধানেই ইসলামাবাদে পৌঁছান। কেননা সেখানে গিয়ে আরও একদফা ঘোষণা করতে দেখা যায় তাকে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ওবামা কিন্তু সচেতনভাবে এবার সেই রাস্তা ধরছেন না। ভারতের বিশাল বাজার এবং নরেন্দ্র মোদি আসার ফলে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তার হিসাব করেই চলছে তার সরকার এবং মার্কিন বাণিজ্য সংস্থাগুলো। তাই আসন্ন সফরে ভারত এবং পাকিস্তানকে একই বন্ধনীতে রাখেনি ওবামা প্রশাসন। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, পাকিস্তানে না গিয়ে সন্ত্রাস বিরোধিতার প্রশ্নে একটি বার্তাও ইসলামাবাদকে দিতে চাইছে ওয়াশিংটন। ওবামার সফরটি নিয়ে শুক্রবার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে একটি সম্মেলন করেছেন সে দেশের ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইসার বেন রোডস। তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে ওবামা প্রশাসনের সন্ত্রাসবিরোধী ভূমিকার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিয়ে আলোচনা হবে। সন্ত্রাসবাদ বিরোধিতায় একটি নতুন চুক্তির কথাও ভাবা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে পাকিস্তানের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেছেন রোডস। বলেছেন, ‘দক্ষিণ এশিয়াই হলো আসল ঘাঁটি। সেখানেই আল কায়দার শিকড় প্রোথিত রয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার নেওয়ার পর থেকেই বারাক ওবামা যথেষ্ট সংখ্যক আল কায়দা নেতাকে যুদ্ধক্ষেত্রে নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম হয়েছেন। এর মধ্যে ওসামা বিন লাদেনও রয়েছে। পাকিস্তান নিজেই যে সন্ত্রাসবাদের অন্যতম বড় শিকার সে কথা উল্লেখ করে ভারতের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। বলেছেন, ‘আমরা দেখেছি যে পাকিস্তানে বর্বরোচিত সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত সবচেয়ে দ্রুত ঘটনার নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছে। পাকিস্তানের  মানুষের কাছে পৌঁছেছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি এ কথাও বুঝিয়ে দিয়েছেন, ওবামা-মোদি আসন্ন বৈঠকে আইএসআইএল বা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের অন্য কোনো দিক নয়, আল কায়দা আইএসআই নিয়েই সুনির্দিষ্ট আলোচনা হবে দুই নেতার। রোডসের কথায়, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সন্ত্রাসবিরোধী আলোচনা এবং কর্মসূচির একটি নির্দিষ্ট দিক রয়েছে। যারা দক্ষিণ এশিয়ায় ঘাঁটি গেড়ে বসে রয়েছে তাদেরই মোকাবিলার কৌশল তৈরি করা হবে। ইরাক এবং সিরিয়ায় আস্তানা তৈরি করা আইএসআইএল নিয়ে কথা চালানো হচ্ছে আরব এবং ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে।

 

সর্বশেষ খবর