বৃহস্পতিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

দেখা করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ খালেদা জিয়ার

দেখা করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ খালেদা জিয়ার

ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গুলশান কার্যালয়ে সমবেদনা জানাতে আসা অনেকের সঙ্গে দেখা করতে না পারায় তিনি দুঃখ প্রকাশও করেছেন। কোকোর মৃত্যুর পাঁচ দিন পর গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বেগম জিয়া এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম না উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘বিএনপি ও ২০ দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-জোটের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ আমার কার্যালয়ে শোক ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছেন। সর্বস্তরের মানুষকে আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তারা আমার কার্যালয়ে এসে শোক প্রকাশ ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছেন। এ সময় তারা আমার সঙ্গে দেখা করতে না পারায় আমি গভীরভাবে দুঃখিত।’ কোকোর জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বিএনপি-প্রধান বলেন, ‘আশা করি পরিস্থিতির বিবেচনায় সবাই বিষয়টিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি আপনাদের মাঝে আছি। যতদিন বেঁচে আছি আপনাদের সঙ্গেই থাকব, ইনশা আল্লাহ।’ প্রসঙ্গত, আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে সমবেদনা জানাতে গুলশান কার্যালয়ে গেলেও খালেদা জিয়ার দেখা পাননি প্রধানমন্ত্রী। কোনো নেতা বা কর্মকর্তাও তার সঙ্গে দেখা করেননি। পরে প্রধানমন্ত্রী সেখান থেকে ফিরে যান। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে কোকোর জানাজায় শরিক হওয়া দেশ-বিদেশের মানুষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। বেগম জিয়া বলেন, ‘আরাফাত রহমান কোকো রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের পুত্র হিসেবে আমাদের রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠেছে। তা সত্ত্বেও সে কখনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। কেবল সে ক্রীড়াঙ্গনেই নিজেকে যুক্ত রেখেছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয়, শুধু শহীদ জিয়া পরিবারের একজন সদস্য হওয়ার কারণে তাকে নানামুখী জুলুম-নির্যাতন, হেনস্তা ও অপপ্রচারের শিকার হতে হয়েছে। অসুস্থ হয়ে প্রবাসে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়ও সে চরম প্রতিহিংসামূলক বৈরিতা থেকে রেহাই পায়নি। ভাগ্যের এমনই নিষ্ঠুর পরিহাস, মা হিসেবে আমি প্রায় আট বছর ধরে এই অসুস্থ সন্তানের মুখ দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলাম। অবশেষে আমাকে সন্তানের লাশ গ্রহণ করতে হলো। সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে আমি এর বিচারের ভার অর্পণ করলাম।’ বিএনপি-প্রধান বলেন, ‘আমার এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর আকস্মিক মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই মা হিসেবে আমি গভীরভাবে শোকাহত এবং মানসিকভাবে বিপর্যন্ত। এই গভীর বেদনা ও শোকের মুহূর্তে সবার কাছ থেকে যে বিপুল সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও সমবেদনা পেয়েছি তা আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে। কুয়ালালামপুরে কোকোর প্রথম নামাজে জানাজায় অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে যে বিপুলসংখ্যক মানুষের ঢল নেমেছে আমি তার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। অন্যান্য দেশেও প্রবাসীদের বিপুল অংশগ্রহণে গায়েবানা জানাজার আয়োজনের জন্য আমি তাদেরও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিএনপি, আমাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, ২০ দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে কোকোর রুহের মাগফিরাতের জন্য গায়েবানা জানাজা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন যারা করেছেন আমি তাদেরও আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি।’
বেগম জিয়া বলেন, ‘জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর নামাজে জানাজায় দলমত, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের লাখ লাখ মানুষ শরিক হয়ে যে অবিস্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তাতে আমি গভীরভাবে অভিভূত। ধন্যবাদ প্রিয় দেশবাসীকে। জিয়া পরিবারের প্রতি গণমানুষের এই অপরিমেয় ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ আমাকে আরও একবার নতুন করে কৃতজ্ঞতার ঋণে আবদ্ধ করল। বিপুলসংখ্যক মানুষের এই উপস্থিতিতে আমি গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হলাম। শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি সঞ্চয়ে সর্বস্তরের দেশবাসীর এই অংশগ্রহণ আমাকে অনেক সাহায্য করবে।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের নেতাদের প্রতি আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার এই দুঃখের সময়ে তারা শোকবার্তা পাঠিয়ে সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছেন। আমি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিদের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা শোকবার্তা পাঠিয়ে এবং সশরীরে আমার কার্যালয়ে এসে সহানুভূতি জানিয়েছেন।’

সর্বশেষ খবর