শুক্রবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

পরীক্ষার মধ্যেও অবরোধ চালাবে বিএনপি

রবিবার থেকে ৭২ ঘণ্টা হরতালের চিন্তাভাবনা

আগামী সোমবার থেকে এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা চলাকালে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। কেন্দ্রীয়ভাবে অবরোধের পাশাপাশি রবিবার থেকে ৭২ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচিও যুক্ত হতে পারে। ২০ দল প্রাথমিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আজ-কালের মধ্যে নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। একটি গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে যথাশীঘ্র নতুন নির্বাচনের দাবিতে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি নিয়েও জোর আলোচনা চলছে। এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার কিংবা গুলশান কার্যালয় থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হলে কর্মসূচিতেও পরিবর্তন আসবে। অবশ্য এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার্থীদের অবরোধ-হরতালের আওতামুক্ত রাখা যায় কি না-তা নিয়ে অবশ্য দলের ভিতরে দুই মত রয়েছে। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির একাংশ মনে করে, প্রায় ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীকে হরতালের ‘আওতামুক্ত’ রাখা উচিত। এতে ওই পরীক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে বিএনপিকেই সমর্থন দেবে। নইলে এসব কিশোর-তরুণ বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। কারণ তাদের সামনের পড়াশোনায়ও ব্যাপক সেশনজটের সৃষ্টি হবে। আরেকাংশ মনে করে, সরকারকে চাপে রাখতে এ কর্মসূচি স্থগিত বা আওতামুক্ত রাখা ঠিক হবে না। এর মোক্ষম সুযোগ এসেছে পরীক্ষা চলাকালীন সময়। চলমান পরিস্থিতির জন্য ওইসব তরুণ বা কিশোররা সরকারকেই দায়ী করবে বলে মনে করেন তারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অবরোধ কর্মসূচি চলছে এবং তা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে। তবে আমার ব্যক্তিগত মত, ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অবরোধ বা হরতালের ‘আওতামুক্ত’ রাখলে ভালো হয়। অবশ্য এ ব্যাপারে দল ও জোট সিদ্ধান্ত নেবে। অবরোধের পাশাপাশি রবিবার থেকে হরতাল কর্মসূচিও আসতে পারে বলেও আভাস দেন দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এ সদস্য। জানা গেছে, সরকারকে চাপে রাখতেই এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি দেওয়ার নীতিগত অবস্থান নিয়েছে বিএনপি জোট। জনগণ বিক্ষুব্ধ হলে এর একটি নেতিবাচক প্রভাব সরকারের ওপরও বর্তাবে বলে মনে করেন বিএনপির নীতি নির্ধাকরা। তাদের মতে, ২০ দলের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পুত্রশোকের মধ্যেও অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আন্দোলনকে একটি ‘যৌক্তিক’ পর্যায়ে নিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত অবরোধের পাশাপাশি হরতাল কর্মসূচি চলবে। তাছাড়া কেন্দ্র চাইলেও তৃণমূল কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে রয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, আন্দোলন কর্মসূচি এখন আর সেই অর্থে কেন্দ্রের হাতে নেই। তৃণমূল পর্যায়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। এটা কোনোভাবেই এ মুহূর্তে বন্ধ করা ঠিক হবে না। এতে বিএনপিসহ ২০ দলের মাঠের নেতা-কর্মীরা নতুন করে হয়রানির শিকার হবে। হত্যা, গুম, অপহরণ কিংবা ক্রসফায়ারের শিকার হওয়ার আশঙ্কা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের। তাই বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বও তৃণমূলের মনোভাবে অনড় অবস্থানে। সরকার নতি স্বীকার না করা পর্যন্ত আন্দোলন-কর্মসূচি চলতেই থাকবে।  এ প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের রাজপথ, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। খুব শীঘ্রই ২০-দলীয় জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসে পরবর্তী কর্মসূচির ব্যাপারে আলোচনা করে নতুন সিদ্ধান্ত নেবেন। তারপরই ঘোষণা হতে পারে নতুন কোনো কর্মসূচি। এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থীদের অবরোধ বা আসন্ন হরতালের মতো কর্মসূচির আওতামুক্ত ঘোষণা করা হবে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটাও জোটেরই সিদ্ধান্তের ব্যাপার। ২০-দলীয় জোট নেতারাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন, কী করবেন- না করবেন।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বলেন, ‘২০-দলীয় জোটনেতা বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন চলছে। জনগণের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। অবরোধের পাশাপাশি হরতালসহ অন্যান্য কর্মসূচিও আসবে। তবে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থীবাহী যানবাহন চলাচলকে ‘হরতাল-অবরোধের’ আওতামুক্ত ঘোষণা করা হতে পারে।’ সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিএনপি জোটের চলমান আন্দোলনের সফলতা নির্ভর করছে ২ ফেব্র“য়ারি এসএসসি পরীক্ষার ওপরে। আমি মনে করি, বিএনপির অবস্থান থেকে ফিরে আসার সুযোগ নেই। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া না হওয়ার ওপরই চূড়ান্ত হবে আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর