শনিবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা
কাল থেকে সারা দেশে ৭২ ঘণ্টা হরতাল

শক্ত অবস্থানেই খালেদা

শক্ত অবস্থানেই খালেদা

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখনো শক্ত অবস্থানে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী নতুন নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবেন না বলেও ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছেন। এরই মধ্যে অবরোধের সঙ্গে আগামীকাল রবিবার ভোর ৬টা থেকে টানা ৭২ ঘণ্টা দেশব্যাপী হরতাল ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। যথাশীঘ্র নতুন নির্বাচন নিয়ে ‘সুনির্দিষ্ট’ আলোচনা না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের ডাকা ‘অবরোধ’ কর্মসূচিও অব্যাহত রাখতে চান বেগম জিয়া। যে কোনো দিন নিজের ওপর গ্রেফতারের খড়গ নেমে এলেও চিন্তিত নন ২০ দলীয় জোটপ্রধান। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সান্ত্বনা দিতে গুলশান কার্যালয়ে গেলে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন বেগম জিয়া। নতুন নির্বাচনের দাবি আদায়ে প্রয়োজনে ফেব্রুয়ারিতে অসহযোগ আন্দোলনে যাওয়ার ইঙ্গিতও দেন তিনি। আন্দোলন কর্মসূচি ছাড়া দাবি আদায়ের কোনো পথ খোলা নেই বলেও নেতাদের সাফ জানিয়ে দেন বেগম জিয়া। হরতাল-অবরোধ শিথিলে যেসব নেতা এর আগে মতামত দিয়েছিলেন, তারা গতকাল বিএনপিপ্রধানের মনোভাব দেখে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসেন। অবরোধের পাশাপাশি হরতাল চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে তারাও মত দেন। ৭২ ঘণ্টার হরতালের বিষয়টি স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই চূড়ান্ত হয় বলে সূত্র জানায়। অবশ্য এর আগে জোটের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা কথা বলেন। তবে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণার পর গতকাল বিকালে ২০ দলীয় জোটের এক শীর্ষ নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, অবরোধের সঙ্গে হরতাল কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে- এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। গণমাধ্যমের সুবাদেই তিনি কর্মসূচি জেনেছেন।  বিএনপি নেতারা জানান, সরকারকে চাপে রাখতেই এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি  দিতে বাধ্য হয়েছে ২০ দল। জনগণ বিক্ষুব্ধ হলে এর একটি নেতিবাচক প্রভাব সরকারের ওপরও বর্তাবে বলে মনে করেন তারা। ২০ দলের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে মন্তব্য করে নেতারা বলেন, এখন আর পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পুত্রশোকের মধ্যেও অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আন্দোলনকে একটি ‘যৌক্তিক’ পর্যায়ে নিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত অবরোধের পাশাপাশি হরতাল কর্মসূচি চলবে। তাছাড়া কেন্দ্র না চাইলেও তৃণমূল কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে রয়েছে।  জানা গেছে, আন্দোলন কর্মসূচি এখন আর সেই অর্থে কেন্দ্রের হাতে নেই। তৃণমূল পর্যায়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। এটা কোনোভাবেই এ মুহূর্তে বন্ধ করা ঠিক হবে না। এতে বিএনপিসহ ২০ দলের মাঠের নেতা-কর্মীরা নতুন করে হয়রানির শিকার হবে। হত্যা, গুম, অপহরণ কিংবা ক্রসফায়ারের শিকার হওয়ার আশঙ্কা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের। তাই বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বও তৃণমূলের মনোভাবে অনড় অবস্থানে। সরকার নতিস্বীকার না করা পর্যন্ত আন্দোলন-কর্মসূচি চলতেই থাকবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার হার্ডলাইনে। বিএনপিরও হার্ডলাইনে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। আমি মনে করি, এখনো সরকারের সংলাপ-সমঝোতার পথে ফিরে আসা উচিত। কারণ রাষ্ট্র পরিচালনার ভার নেওয়ায় এটা তাদেরই দায়িত্ব। বেগম জিয়া সব সময় সংলাপ-সমঝোতার দ্বার খুলে রেখেছেন। সরকারকেই এর উদ্যোগ নিতে হবে।
কাল থেকে সারা দেশে ৭২ ঘণ্টার হরতাল : চলমান অবরোধের পাশাপাশি আগামীকাল (রবিবার) ভোর ছয়টা থেকে টানা ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় উড়িয়ে দেওয়া ও তাকে গ্রেফতারের হুমকির প্রতিবাদসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে এ কর্মসূচি আহ্বান করা হয়েছে। গতকাল বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে রিজভী আহমেদ বলেন, চলমান আন্দোলন দমনে পুলিশকে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে দায়িত্ব নিবেন বলে যে আদেশ দিয়েছেন তা, আতঙ্ক ও উদ্বেগজনক। সরকারের মদদে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানের বাসায় গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে প্রায় ২১ জন নেতা-কর্মীকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হচ্ছে। সারা দেশে পনের হাজারের বেশি বিএনপি ও জোটের নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার এবং দেশব্যাপী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।  
তিনি বলেন, বিএনপি জোটের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে যৌথবাহিনীর আক্রমণ এবং কাক্সিক্ষত ব্যক্তিকে না পেয়ে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ নিরীহ লোকজনকে আটক ও জিনিসপত্র লুটপাট করা হচ্ছে। সরকারি এজেন্ট দিয়ে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে নাশকতা সৃষ্টির দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা চলছে। বিএনপির এই নেতা বলেন, উপরোক্ত ঘটনার প্রতিবাদে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামীকাল রবি, সোম ও মঙ্গলবার টানা তিন দিন সারা দেশে হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। অর্থাৎ কাল ভোর ৬টা থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২০-দলীয় জোটের উদ্যোগে ঢাকাসহ সারা দেশে ৭২ ঘণ্টার সর্বাত্মক হরতাল পালিত হবে। বিএনপি জোটের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি পালনের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। হরতালের আওতামুক্ত : হরতাল চলাকালে সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের বহনকারী গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়া জরুরি অ্যাম্বুলেন্সসহ রোগী বহনকারী গাড়ি, ওষুধ ও খাবার দোকান, ওয়াসাসহ জরুরি সেবামূলক সংস্থার যানবাহন হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।

সর্বশেষ খবর