রবিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

যে কথা হলো খালেদা-কামাল ১০ মিনিটের বৈঠকে

সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, ডাকসুর দুই সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের সঙ্গে রাজনৈতিক তেমন কোনো কথা হয়নি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া নেতারাও চলমান অবরোধে সহিংসতা বা সরকারের আচরণ নিয়ে কোনো কথা তোলেননি। পরিবেশ এতটাই বেদনাবিধুর ছিল যে দশ-বারো মিনিটের সাক্ষাতে তারা কেউ কথা বলেননি প্রায় মিনিট তিনেক। পুত্রহারা মা খালেদা জিয়া শুধুই আরাফাত রহমান কোকোর স্মৃতিচারণ করেছেন। এ সময় জানিয়েছেন, কোকো চলে যাওয়ার আগের দিন রাতেও বেশ কিছুক্ষণ টেলিফোনে কথা হয়। অসুস্থ হওয়ার পর তিনবার অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হলেও হাসপাতালে যাননি কোকো। সাক্ষাতের সময় শেষ বাক্য হিসেবে দেশে সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীতার কথা তোলেন ড. কামাল হোসেন। একই বাক্য পুনরাবৃত্তি করেন বেগম খালেদা জিয়া। ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে মা খালেদা জিয়াকে জাতীয় ঐক্যের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানাতে শুক্রবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ড. কামাল হোসেন। এ ব্যাপারে তিনি জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে একত্র হওয়া আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগাঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হন তারা। ড. কামাল সঙ্গে নেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওম শফিকুল্লাহকে। মাহমুদুর রহমান মান্না আগেই এক দফা শোক জানাতে গিয়েছিলেন সেখানে। কিন্তু তখন বেগম খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ পাননি। তিন নেতা গুলশান কার্যালয়ের নিচ তলায় শোকবইয়ে মন্তব্য লিখে সরাসরি দোতলায় যান। সেখানে তারা মিনিটদশেক অবস্থান করার পর উপস্থিত হন বেগম জিয়া। প্রায় ২৪ বছর পর খালেদা জিয়া ও ড. কামাল হোসেনের দেখা হলো। মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘এদিন বেদনাবিধুর খালেদা জিয়াকে যেমন দেখেছি তেমন আগে কখনো আমি দেখিনি।’
সূত্রমতে, ড. কামালের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎকাল ছিল ১০ মিনিটের সামান্য কিছু বেশি। এর মধ্যে মিনিটপাঁচেক বেগম জিয়া একাই কথা বলেন। উপস্থিত নেতাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক শোক ও সমবেদনা জানান ড. কামাল। তিনি বলেন, কোকোর এই বয়সে মৃত্যু দুঃখজনক। এরপর খালেদা জিয়া পুরো সময় ধরেই কোকোর কথা বলেন। কোকোর হৃদরোগে আক্রান্ত থাকা, চিকিৎসার বিষয়গুলো থেমে থেমে একেকটি বাক্যে বলতে থাকেন। খালেদা জিয়া অভ্যাগত নেতাদের জানান, মৃত্যুর আগের রাতে তার সঙ্গে কথার সময় তিনিও কোকোকে ডাক্তারের কাছে যেতে বলেছিলেন। কোকোর স্ত্রী তিন দফায় অ্যাম্বুলেন্সও ডেকেছিলেন। এসব কথা বলার সময় ড. কামাল হোসেন বেগম জিয়াকে মন শক্ত করার কথা বলেন। খালেদা জিয়া বেদনার্ত হয়ে পড়লে প্রায় মিনিটতিনেক সবাই চুপচাপ থাকেন। বিদায়ের আগে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাই একসঙ্গে কাজ করা ছাড়া গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে নিজের বক্তব্য জানান ড. কামাল হোসেন। প্রতিউত্তরে বেগম খালেদা জিয়াও বলেন, একত্রিত না হলে সম্ভব হবে না। মাহমুদুর রহমান মান্না ও সুলতান মনসুর আহমেদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে শুক্রবার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘নিছকই পুত্র হারানো একজন মাকে সমবেদনা জানাতে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। এমন বেদনাবিধুর পরিবেশে রাজনৈতিক কোনো আলোচনাই সমীচীন নয়। তাই রাজনৈতিক কোনো প্রসঙ্গই উত্থাপিত হয়নি।’

সর্বশেষ খবর