শনিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন

বিনা চ্যালেঞ্জে ছাড়বে না বিএনপি

বিনা চ্যালেঞ্জে ছাড়বে না বিএনপি

হঠাৎ করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনের চিন্তাভাবনায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা বিএনপিকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে দল থেকে কোনো প্রার্থী দেওয়া হবে কিনা- তা এখনো স্পষ্ট নয়। একইভাবে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে কাউকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়েও দল থেকে খোলাসা করা হচ্ছে না। তবে বিএনপি সূত্র নিশ্চিত করেছে, মেয়র পদে কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে দল সমর্থিত আগের কমিশনার বা নেতাদের অনেকেই নির্বাচনে অংশ নেবে। রাজধানীকে নিয়ন্ত্রণে রাখার স্বার্থেই এ ধরনের চিন্তাভাবনা চলছে। সরকার ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে ডিসিসি নির্বাচনের আয়োজন করলেও বিনা চ্যালেঞ্জে ছাড় দেবে না বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। আন্দোলনের পাশাপাশি ডিসিসি নির্বাচনকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন নিয়ে এখনো বিএনপির সর্বোচ্চ ফোরামে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। পৃথকভাবে দলের নেতারা একাধিক প্লাটফর্মে আলোচনা করছেন। তবে তফসিল ঘোষণার পরই বিএনপি তার অবস্থান পরিষ্কার করবে। এর আগে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি নজর রাখবে বিএনপি। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থন দেওয়া দুই মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়ে আসার মতো প্রার্থী নিয়েও সর্বোচ্চ ফোরামে চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। এদিকে, মেয়র পদে বিএনপির সম্ভাব্য দুজন প্রার্থী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে কোনো পরিস্থিতিতে আমাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। নির্বাচন বয়কট কোনো সমাধান নয়। অতীতে এ জন্য চরম মাশুল দিতে হয়েছে। এরপরও দলের নীতিনির্ধারকরা যে সিদ্ধান্ত নেবেন- আমরা মেনে নেব।’ দলের নীতিনির্ধারকদের মতে, আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার মুহূর্তে দীর্ঘদিনের মেয়াদোত্তীর্ণ থাকা ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে ফের টোপ ফেলা হচ্ছে। উদ্দেশ্য- ২০-দলীয় জোটের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু সরকারের অপকৌশল বুঝেই সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি। জনগণের ভোটাধিকার ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তবে ডিসিসি নির্বাচনের বিষয়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী কৌশল গ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে দল বা নাগরিক সমাজের ব্যানারে নির্বাচনে অংশও নিতে পারে বিএনপি। দলের একাংশের নেতারা জানান, এর আগেও বিএনপি স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই অংশ নিয়েছে। শুধু জাতীয় সংসদের বেশ কয়েকটি উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তাই এ নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থী না দেওয়ার যুক্তি নেই। আরেক অংশ মনে করেন, বিএনপি চেয়ারপারসন প্রায় দুই মাস ধরে গুলশান কার্যালয়ে কার্যত ‘অবরুদ্ধ’। নেতা-কর্মীদের থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গুম, খুন, গুলিসহ নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। দেশে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় আন্দোলন ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সময় নেই। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশ আজ গভীর সংকটে। গণতন্ত্র অনুপস্থিত। প্রতিদিন গুম, খুন, পেট্রলবোমার আঘাতে মানুষ মারা যাচ্ছে। দেশের প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ চাচ্ছে, এ মুহূর্তে একটি সংলাপ-সমঝোতার ভিত্তিতে নতুন করে সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা। কিন্তু সরকার জনগণের সে দাবির প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে হঠাৎ করে ডিসিসি নির্বাচন দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। এটা ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ হিসেবে আমি মনে করি।’ স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য জানান, যেখানে বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না, আন্দোলনে কোথাও দাঁড়াতেই দেওয়া হচ্ছে না- সে মুহূর্তে ডিসিসি নির্বাচন অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকাই স্বাভাবিক। সরকার হয় তো ভাবছে, বিএনপিকে বাইরে রেখে ফাঁকা মাঠে গোল দেবে। কিন্তু বিএনপিও যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো কৌশল গ্রহণ করতে পারে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর