রবিবার, ১ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
জাতিসংঘ মহাসচিবের চিঠি

জবাব দিয়েছে বিএনপি সরকারের খসড়া প্রস্তুত

জবাব দিয়েছে বিএনপি সরকারের খসড়া প্রস্তুত

দুই নেত্রীর কাছে লেখা জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের চিঠির জবাব দিয়েছে বিএনপি। সংলাপে বসতে বিএনপি প্রস্তুত বলে বৃহস্পতিবার ফিরতি চিঠিতে জানিয়ে দিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লেখা চিঠির জবাব এখনো দেওয়া হয়নি। চিঠির খসড়া প্রস্তুত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চলতি সপ্তাহে এই জবাব দেওয়া হতে পারে। এতে বর্তমান পরিস্থিতিতে সংলাপের কোনো সুযোগই নেই বলে সরকারের তৈরি করা চিঠিতে উল্লেখ করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠির জবাব এখনো পাঠানো হয়নি। তবে শিগগিরই পাঠানো হবে।’ একই ধরনের তথ্য জানিয়ে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেছেন, বান কি মুনের চিঠির জবাবের ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। সরকার বিশ্বাস করে, যে কোনো সংকটে রাজনৈতিক আলোচনা হতে পারে। তবে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের কনভেনশন অনুসারে এবং বাংলাদেশের আইন ও সংবিধান অনুসারে সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোনো সংলাপ হতে পারে না। সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লেখা জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের লেখা চিঠির জবাবের একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও বিয়োজন শেষে চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝিতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে। মিশন থেকেই বান কি মুনের দফতরে পৌঁছানো হবে চিঠির উত্তর। চিঠির উত্তরে কি থাকছে জানতে চাইলে সূত্র জানায়, পেট্রলবোমা ছুড়ে সাধারণ জনগণকে হত্যা করে যারা অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে তারা কখনোই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে না। সরকার কোনো অবস্থাতেই এ ধরনের ‘হত্যাকারী’দের সঙ্গে আপস বা সমঝোতায় যাবে না। কারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং জনগণও এর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই প্রতিবাদ শুরু করেছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বিএনপি-জামায়াতের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ‘সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদী’ সম্পৃক্ততার বেশ কিছু প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে চিঠির উত্তরে বলা সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধেও সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্সের। চিঠির উত্তরে বলা হচ্ছে, সরকার সব সময়ই সংলাপে বিশ্বাসী ছিল এবং আছে, কিন্তু কোনো ধরনের হত্যাকারীদের সঙ্গে সংলাপ করবে না সরকার। সেই সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনকে আরও আশ্বস্ত করে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনা হওয়ার মতো কোনো কাজ বা পদক্ষেপও নেবে না সরকার। অন্যদিকে বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে চিঠির জবাব বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয়ে পৌঁছে দিয়েছেন। চিঠিতে সংকট নিরসনে সংলাপে বসার কথা ব্যক্ত করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এ ব্যাপারে সরকারি দলের নেতিবাচক মন্তব্যের কথাও তুলে ধরা হয়। সূত্র মতে, সম্প্রতি নিউইয়র্কে অবস্থান নেওয়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুকের সঙ্গে জাতিসংঘের এক কর্মকর্তার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বাংলাদেশে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অবস্থান, বিএনপির চিঠির জবাব এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশসমূহ এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের শুনানির বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই সময় বিএনপি নেতা তার দলের সংলাপে বসার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, সংলাপে বসতে তাদের আপত্তি নেই। তারা মনে করেন, সংলাপের মাধ্যমে নতুন নির্বাচনই সংকটের সমাধান করতে পারে। জানা যায়, গত ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে ভিন্ন ভিন্ন চিঠি পাঠান জাতিসংঘের মহাসচিব। তিনি চিঠিতে অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে বাংলাদেশের সংকট সমাধানে মধ্যস্থতার দায়িত্ব দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন। তবে এই চিঠি সরকারের কাছে পৌঁছায় প্রায় দুই সপ্তাহ পরে। জাতিসংঘের ঢাকার মিশন থেকেই বিলম্বে চিঠিটি দুই পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সূত্র মতে, চিঠি ইস্যুর পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জাতিসংঘের পলিসি অনুসারেই সময় নেয় ঢাকার জাতিসংঘ কার্যালয়। আগেও বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের বিলম্বে চিঠি হস্তান্তরের উদাহরণ আছে। এটি কূটনৈতিক প্রক্রিয়ারই একটি অংশ।

সর্বশেষ খবর