শনিবার, ৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
চলমান রাজনীতি

সংগঠনের দিকে নজর জাতীয় পার্টির

সংগঠনের দিকে নজর জাতীয় পার্টির

আর ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হতে নারাজ জাতীয় পার্টি। এবার লক্ষ্য সারা দেশে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে নিজেদের সরকার গঠন করা। এ জন্য দশম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নজর দিচ্ছে সংগঠনে। দলকে সংগঠিত করতে মাঠে নামছেন পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। যেসব জেলা-উপজেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটি রয়েছে, সেগুলো সম্মেলনের মাধ্যমে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। দলকে সুসংগঠিত করতে সারা দেশ ঘুরবেন পার্টির চেয়ারম্যান। কেন্দ্রীয় নেতাদের বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে আগে থেকেই জেলাগুলোকে সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত করতে সব ধরনের নির্দেশনা দেবেন। দলীয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একাধিকবার জাতীয় পার্টিকে পাশে নিয়ে অন্য দল ক্ষমতায় গেছে। আর নয়। আমরা বর্তমানে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় আছি। আগামীতে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে একক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাব। সেভাবেই দল গোছানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ২০টি জেলা সম্মেলন সম্পন্ন করা হয়েছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে বাকি জেলার সম্মেলন করার জন্য সারা দেশে পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, পার্টির প্রেসিডিয়ামসহ আমরা বের হব। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। ঢাকার উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রামে শক্তিশালী প্রার্থী দেওয়া হবে। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে প্রার্থী দেব। আগামীতে যত নির্বাচন হবে সবগুলোতে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে। শক্তি যাচাই করব। পর্যায়ক্রমে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাব। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পার্টিকে শক্তিশালী করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। রাজধানীর উত্তর-দক্ষিণ এবং চট্টগ্রামে শক্তিশালী প্রার্থী দেব। প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রার্থী দেব। তিনি বলেন, রাজধানী যার দখলে দেশ তার দখলে। সিটির মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাব। জানা যায়, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গোছাতে মাঠে নেমেছেন এরশাদ। ইতিহাসের চাকাকে ঘুরিয়ে দিয়ে সামনে ক্ষমতায় আসতে চায় জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের অনামিকায় তিন ‘জে’ শোভা পাচ্ছে। এরশাদের অনামিকায় যে তিন ‘জে’ শোভা পাচ্ছে তার ব্যাখ্যায় সভা-সমাবেশে এরশাদ বলছেন, তিন ‘জে’ মানে এক. জাতীয় পার্টি, দুই. জাস্টিস, তিন. জব। জাতীয় পার্টি ছাড়া ন্যায়বিচার বা সুশাসন নিশ্চিত সম্ভব নয়। আর লক্ষ্য নির্ধারণে ১৫১ আসন টার্গেট করেছেন। হতাশ-ক্ষুব্ধ জনগণ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাত থেকে মুক্তি পেতে চায়। চায় তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি। জাতীয় পার্টিকে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দেখতে চাইছে দলটির নেতারা। জেলায় জেলায় সম্মেলনের পর পর্যায়ক্রমে সাত বিভাগীয় শহরে সাতটি মহাসমাবেশে বক্তৃতা করবেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। ইতিমধ্যে ২০টি জেলায় সম্মেলন হয়েছে। একেকটি জেলায় জাতীয় পার্টির ২০ বছর পর্যন্ত সম্মেলন হয়নি। সম্মেলনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তৃণমূল কর্মী অনেকে যোগ দিয়েছেন। এর পরপরই রাজধানী ঢাকায় স্মরণকালের বৃহত্তম মহাসমাবেশের আয়োজনের মধ্য দিয়ে তিনি জাতীয় পার্টির শক্তি ও সামর্থ্য সম্পর্কে দেশবাসীকে জানান দেবেন। একই সঙ্গে এরশাদ মনোযোগ দিয়েছেন নির্বাচনী রোডম্যাপ চূড়ান্ত করার কাজে। আসনভিত্তিক প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা ছাড়াও আগামী নির্বাচনে ‘ফসল’ ঘরে তোলা নিয়ে ‘ছক’ কষছেন। এরশাদের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, দেশ পরিচালনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে রাজনীতির মাঠ নিজের দখলে নেবেন এরশাদ। নিজের হাতে গড়া জাতীয় পার্টিকে নিয়ে সামনে এগোবেন। তাই এই নির্বাচনে বাজিমাত করতে চান তিনি। দলকে নিয়ে যেতে চান রাষ্ট্রক্ষমতায়। এরশাদ মনে করছেন, এক সময় যারা ঘোর শত্রু ছিলেন, কট্টর বিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিলেন, এখন তারাও তার শাসনামলের কথা স্মরণ করে বলছেন, ‘দুই নেত্রীর চেয়ে এরশাদ ভালো ছিলেন’। এরশাদের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, এরশাদ মনে করেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে মানুষের দেখা শেষ। আগামী দিনের ক্ষমতার পালাবদলে গণরায় নিয়ে জাতীয় পার্টিই বেরিয়ে আসবে। জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হলে ছোট ছোট দল ও জনসম্পৃক্ত রাজনৈতিক কর্মীরা তাদের সঙ্গেই যোগ দেবেন।

সর্বশেষ খবর