শনিবার, ৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
চলমান রাজনীতি

ঢাকা সক্রিয়, খবর নেই তৃণমূল আওয়ামী লীগে

ঢাকা সক্রিয়, খবর নেই তৃণমূল আওয়ামী লীগে

ঢাকা সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন এবং চলমান রাজনৈতিক সংকটে বিভিন্ন কর্মসূচিতে রাজধানী ঢাকায় সক্রিয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে রাজধানীতে সক্রিয় হলেও খবর নেই মাঠপর্যায়ে। তৃণমূলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি কেবল দিবসভিত্তিক বললেই চলে। অবশ্য কোনো কোনো জেলা এবং উপজেলায় দলীয় সম্মেলনকে ঘিরে সংগঠন বেশ চাঙ্গা। অধিকাংশ জেলা এবং উপজেলায় দলীয় নেতারা ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে। সংগঠনের দিকে নজর নেই। দলীয় কর্মসূচি হয় কালেভদ্রে। অভিযোগ রয়েছে, নেতারা নিজেদের ভাগ্য বদলে যতটা ব্যস্ত, দল সাজানোর প্রশ্নে ঠিক তার উল্টো। দলীয় সংসদ সদস্যরা মাঝে-মধ্যে নিজ এলাকায় সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নিলেও এড়িয়ে চলেন দলীয় কর্মসূচি। বিএনপিবিহীন জাতীয় নির্বাচনে অতি সহজে বিজয়ী হওয়া দলীয় সংসদ সদস্যদের বেশির ভাগই পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত যাতায়াতে তাদের অনেকের মধ্যেই অনীহা দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশ মন্ত্রীর ক্ষেত্রেও প্রায় একই চিত্র। সিনিয়র মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদের দাফতরিক ব্যস্ততার মধ্যে নিজেদের এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ রাখলেও এলাকায় যাচ্ছেন না অনেকেই। তৃণমূল কর্মীদের এ নিয়ে ক্ষোভও রয়েছে। বিএনপি জোটের অব্যাহত অবরোধ-হরতালে কর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী-এমপিদের নিজ নিজ জেলায় গণসংযোগ বাড়াতে নির্দেশ দিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা উপেক্ষিত হচ্ছে। ১২ ফেব্রুয়ারি গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে মন্ত্রী-এমপিদের নিজ নিজ এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগের জন্য শেখ হাসিনা নির্দেশ দিলেও তার প্রতিফলন ঘটেনি।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ সংসদ সদস্যই এলাকায় আগের মতো যান না। অন্যরা নিজ জেলা কিংবা নির্বাচনী এলাকায় গেলেও সাংগঠনিক কর্মসূচিতে মনোযোগ নেই তাদের। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও মন্ত্রী-এমপিরা এখন পর্যন্ত জেলা-উপজেলায় করতে পারেননি সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি। সদ্য সম্পন্ন হওয়া জেলা সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেও অধিকাংশ জেলায় নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি।  বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরাও নিয়মিত যাচ্ছেন না সাংগঠনিক সফরে। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে  নিষ্ক্রিয়তায় তৃণমূলে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির। গত দুই মাসের অবরোধ, হরতাল ও বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচির বিপরীতে তৃণমূল আওয়ামী লীগ কেন্দ্রের প্রত্যাশা অনুযায়ী সক্রিয় হতে পারেনি। বিষয়টি রীতিমতো আহত করেছে হাইকমান্ডকে। তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ অবশ্য ভিন্ন। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা অভিযোগের সুরে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, দলীয় সংসদ সদস্যরা খোঁজ নেন না ত্যাগী কর্মীদের। এলাকায় তারা গড়ছেন নিজস্ব সিন্ডিকেট। ত্যাগী কর্মীদের চেয়ে এসব সংসদ সদস্যের কাছে সুবিধাবাদীদের কদর বেশি। সংসদ সদস্যদের এমন আচরণে দিন দিন দলীয় নেতৃত্বে বাড়ছে বিভাজন-কোন্দল।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি-জামায়াতের সহিংস কর্মসূচির জবাবে আওয়ামী লীগের তৃণমূল সাজাতে গুরুত্ব দিচ্ছে দলীয় হাইকমান্ড। আগামী মাসের মধ্যেই দেশের সবকটি সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন শেষ করতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে নগর আওয়ামী লীগকে চাঙ্গা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জেলায় জেলায় দলীয় নেতৃত্বে কোন্দল দূর করতে মনোযোগী হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা।
দলীয় সূত্রমতে, তৃণমূলের দ্বন্দ্ব নিরসনে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে দলের হাইকমান্ড। আগামী তিন মাসের মধ্যে মন্ত্রী-এমপি এবং তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যে দূরত্ব ঘুচাতে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন দলের সিনিয়র নেতাদের। ১৪ দলের মাঠপর্যায়ের কর্মসূচি বাড়াতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশ উপেক্ষা করে যেসব দলীয় সংসদ সদস্য এলাকায় দলীয় বিশেষ করে স্থানীয় ত্যাগী নেতা-কর্মীদের স্বার্র্থ বাদ দিয়ে নিজেদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট রাজনীতি করছেন তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যানদের সঙ্গেও সংসদ সদস্যদের রাজনৈতিক দূরত্ব কমাতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সূত্রমতে, দলের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া সংসদ সদস্যদের চিহ্নিত করার কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। সূত্রমতে, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের তিনটি জেলার দলীয় সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের খবর প্রধানমন্ত্রীর হাতে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শেখ হাসিনা মনে করছেন, তৃণমূল আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি। এ উপলব্ধি থেকেই দ্রুত জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় করতে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে কেন্দ্র।

সর্বশেষ খবর