শনিবার, ৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
চলমান রাজনীতি

তৃণমূল বিএনপি সরব, নীরব ঢাকা

তৃণমূল বিএনপি সরব, নীরব ঢাকা

হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি কেন্দ্র ঘোষিত সব কর্মসূচি পালনে সরব বিএনপির তৃণমূল নেতৃত্ব। এক্ষেত্রে অনেকটাই নীরব-নিস্তব্ধ ঢাকা মহানগর বিএনপি। হরতাল-অবরোধের সঙ্গে সম্প্রতি পরপর দুটি গণমিছিল কর্মসূচিতে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় ছিল রাজধানী। মহানগর বিএনপির ব্যানারে কোথাও কোনো মিছিল বের হয়নি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। রাজধানীতে গণমিছিলের আড়ালে দুই-চারটি স্থানে স্বল্পমেয়াদি ঝটিকা মিছিলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। তার সবগুলোই ছাত্রদলসহ অঙ্গ-সংগঠনের। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে গণমিছিল-সভা-সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পাশাপাশি গুলির ঘটনাও ঘটেছে তৃণমূলের একাধিক স্থানে। নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা-বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘আমরা কেন্দ্র ঘোষিত সব কর্মসূচিই পালন করে যাচ্ছি। বৃহস্পতিবারের গণমিছিল কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে পাঠানো বার্তা অনুযায়ী একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা রাজপথে শান্তিপূর্ণভাবে সব কর্মসূচিই পালন করে যাব।’ মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, তৃণমূলের মতো সদিচ্ছা থাকলে রাজধানী ঢাকায়ও সব ধরনের কর্মসূচি পালন করা সম্ভব। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশনাকে অমান্য করে নেতাদের অনেকেই সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে চলছেন। আবার অনেকেরই বিত্তবৈভব এত বেশি যে, তারা মাঠেই নামতে চান না। এক্ষেত্রে ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মীরা মিছিল-সমাবেশ করতে চাইলে ওইসব নেতারাই বাধা হয়ে দাঁড়ান। অবশ্য গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলের নেতৃত্বে হরতাল ও অবরোধের সমর্থনে একটি ঝটিকা মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বেইলি রোডের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মনোয়ারা হাসপাতালের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ছাত্রদল পৃথকভাবে গণমিছিলের অংশ হিসেবে কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ঢাকা মহানগর বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, ‘জেলা শহরগুলোর সঙ্গে রাজধানীকে তুলনা করা ঠিক হবে না। কারণ, তৃণমূলে পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করা যায়। কিন্তু ঢাকা সম্পূর্ণ উল্টো। রাজধানীতে মিছিল-সমাবেশ দূরের কথা- কয়েকজনকে একসঙ্গে দেখলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি ছোড়ে। এটাই বাস্তবতা।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, বগুড়া, নাটোর, ঠাকুরগাঁও, নরসিংদী, ফেনী, নোয়াখালী, শেরপুর, মুন্সীগঞ্জ, লালমনিরহাট, ফরিদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধাসহ বিভাগীয় ও বেশ কয়েকটি জেলা শহরে বিশাল শোডাউন করেছে স্থানীয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। নোয়াখালীর সেনবাগ বাজারে ২০-দলীয় জোট ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুজন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন ১০ জন। শেরপুর জেলা বিএনপি অফিস এবং জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদুল হক রুবেলের বাসার সামনে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় পৌর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান, যুগ্ম আহ্বায়ক রমজান আলী, যুবদল নেতা রহুলসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। গাইবান্ধা শহীদ মিনার চত্বর থেকে গণমিছিল বের করে প্রেসক্লাব মোড়ে এলে লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। অবশ্য বরিশালে অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবেই গণমিছিল করে জেলা ও মহানগর বিএনপি। সকাল ১০টায় নগরীর নাজির মহল্লা থেকে জেলা ও মহানগর বিএনপির ব্যানারে একটি গণমিছিল বের হয়। অবশ্য সদর রোডের দিকে যেতে চাইলে জেলখানা মোড়ে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। পরে পুলিশ বেষ্টনীতে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁনের সভাপতিত্বে সেখানেই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অবশ্য পুলিশ কোনো অ্যাকশনে যায়নি। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিশাল গণমিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে বের হয়ে চাকলা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম মশিউর রহমানসহ অনেকেই। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানা বিএনপির সভাপতি ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিরুল ইসলাম খান আলিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘কেন্দ্র ঘোষিত সব কর্মসূচিই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিনি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। পরপর দুটি গণমিছিল ছাড়াও বেলকুচিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর আত্মার মাগফিরাত কামনায় বেশ কয়েকদিন দোয়া মাহফিলও করেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান থেকে আসা সব নির্দেশনা বাস্তবায়নের সব চেষ্টাই চালানো হবে।’

সর্বশেষ খবর