শনিবার, ৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
কলকাতার চিঠি

মমতা চিত্রশিল্পী লেখিকা নাট্যকার গীতিকার নাকি রাজনীতিবিদ?

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

মমতা চিত্রশিল্পী লেখিকা নাট্যকার গীতিকার নাকি রাজনীতিবিদ?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে কী? তিনি কি চিত্রশিল্পী, গল্প-উপন্যাস লেখিকা? কবি বা নাট্যকার? গীতিকার এবং সুরকার? নাকি তিনি রাজনীতিবিদ? আসলে কোনটার কী মানে তা তিনি বুঝতে চান না। নিজেই নিজেকে একেকবার একেক ভূষণে ভূষিত করেন। আসলে তিনি নিজের ওজনটা সঠিক ঠাহর করতে পারেন না। তার একেকবার একেক ভূমিকা জানার পর রাজ্যবাসী নতুন করে বিভ্রান্ত হন। মমতা নিজেই দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গের ১০ কোটি এবং ভারতের ১১০ কোটি মানুষের থেকে তিনি রাজনীতিটা বেশি বোঝেন। যারা একসময় বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসকে হটানোর জন্য তাকে তোল্লাই দিচ্ছিলেন, তারাই এখন আঙ্গুল কামড়াচ্ছেন। কোনো সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করলে আঙ্গুল তুলে তাকে শাসাতে থাকেন- জানেন আপনাকে আমি গ্রেফতার করতে পারি?
গত শতকের ’৯৭ সালে তিনি যখন কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে যান তখন যারা তাকে দুই হাত তুলে সাহায্য করেছিলেন তারা যে কতটা অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। তিনি মেঠো বক্তৃতা করে থাকেন। মা-মাটি-মানুষের সরকার চারদিক থেকে দুর্নীতিতে ভরে গেছে। তিনি কাউকে ধরেও রাখতে পারেন না, কোথাও বেশি দিন থাকতেও পারেন না। বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গে টেনে এনে তিনি অটলবিহারী বাজপেয়ির মন্ত্রিসভা থেকে দু-দুবার ইস্তফা দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে যে কী এবং কী চান, কী তার উদ্দেশ্য- জনগণের প্রত্যাশা কোনটা? এ নিয়ে এখন তার দলেই নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তার মা-মাটি-মানুষের সরকার প্রায় চার বছরে পশ্চিমবঙ্গকে ২৪ বছর পিছিয়ে দিয়েছে বলে রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষ মনে করছে। যাদের পিঠের ওপর ভর দিয়ে তিনি বঙ্গেশ্বরী হয়ে গেছেন তারা এখন কোথায় গেলেন? কালকেতু বলে তার বর্তমান ঘনিষ্ঠ যে ভদ্রলোক পশ্চিমবঙ্গে শিল্প ও শিক্ষা- দুটিই ধ্বংস করেছেন তা স্বাধীনতা-উত্তর পশ্চিমবঙ্গে কখনো হয়নি। নিজেই নিজের ঢাকঢোল পিটিয়ে আর মানুষকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে তিনি একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। সম্প্রতি তার বিদ্যা জাহির করতে গিয়ে তিনি প্রকাশ্যে বলেছিলেন- শেকসপিয়রকে আমাদের ছেলেমেয়েরা খুবই ভালোবাসে। এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন লন্ডনে গিয়েছিলেন, যখন গীতাঞ্জলির জন্য তিনি রচনা করছেন, কিটস এবং শেকসপিয়র এই যে জামানাটা, এটার সঙ্গে তার একটা ভালো রিলেশন ছিল। তিনি যে কত বড় অর্বাচীন এবং প্রগলভ তার প্রমাণ তিনি নিজেই বার বার দিয়ে থাকেন। বাস্তবে যা ঘটেছিল, তা হলো গীতাঞ্জলি প্রকাশিত হয় ১৯১০ সালে। এর কবিতাগুলো ভারতেই লেখা। ১৯১২-এর শুরুর দিকে তার লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন বিশ্রামের সময় গীতাঞ্জলির কবিতাগুলো ইংরেজি অনুবাদ করা শুরু করেন। পরে আরও কিছু কবিতার অনুবাদ মিলিয়ে ১৯১২-এর শেষ দিকে লন্ডনের ইন্ডিয়া সোসাইটি থেকে প্রকাশিত হয় গীতাঞ্জলি (সং অফারিংস), যার জন্য পরের বছর তিনি নোবেল পুরস্কার পান। কিটস ও শেকসপিয়রের জমানার ব্যাপারেও মমতা ভুল-ভাল বলেছেন। শেকসপিয়রের জন্ম ১৫৬৪ সালে, মৃত্যু ১৬১৬-এ। কিটসের জন্ম ১৭৯৫ আর মৃত্যু ১৮২১-এ। অর্থাৎ শেকসপিয়রের মৃত্যুর ১৭৯ বছর পরে জন্মছিলেন কিটস।

সর্বশেষ খবর