সোমবার, ১৬ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

থেমে গেছেন কূটনীতিকরা

দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের অনড় অবস্থান ও পরস্পরের প্রতি আস্থাহীনতার কারণে থমকে গেছে সংকট নিরসনের কূটনৈতিক উদ্যোগ।সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা না দেখে পশ্চিমা কূটনীতিকরা আরও সময় নিতে চাইছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির উত্তরণ না ঘটলে বা অবনতি হলে আবার সমঝোতার উদ্যোগ নিয়ে প্রকাশ্যে আসবেন। দুই পক্ষের সঙ্গে এক দফা করে আলোচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঢাকায় অবস্থানরত ১৬ দেশের কূটনীতিকরা। আবাসিক মিশনগুলোর একাধিক কূটনীতিকের সঙ্গে আলোচনায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। জানা যায়, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নিজেদের মধ্যে বৈঠকে সমঝোতার জন্য একটি যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ১৬ দেশের ঢাকার কূটনীতিকরা। এতে অংশ নেন অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার গ্রেগ উইলকক, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি অবার্ট, কানাডার হাইকমিশনার পিয়েরে বেনোয়া লাঘামে, জাপানের রাষ্ট্রদূত শিরো সাদোসিমা, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত হ্যানে ফুগ্ল এসকেয়ার, ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়েদুন, জার্মানির ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ফার্দিনান্দ ভন ভেইয়ে, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত জারবেন ডি জং, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত মেরেট লুনডেমো, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি ইয়ুন-ইয়াং, স্পেনের রাষ্ট্রদূত লুই তেজাদা চাকোন, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত ইয়োহান ফ্রিসেল, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ফশ এবং তুরস্কের রাষ্ট্রদূত হুসেইন মুফতুগলু। পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি এক রাষ্ট্রদূতের বাসায় বৈঠকে তৈরি হয় যৌথ কূটনৈতিক বার্তা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে যৌথ বার্তায় কূটনীতিকরা লেখেন, বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আমরা আশা করি, ক্ষতিকর সময় থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে। আমরা স্বাভাবিকভাবেই সাম্প্রতিক সপ্তাহে সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের নিন্দা জানাই। এসবের কারণে জীবন, অঙ্গহানি ও আস্থার ওপর মূল্য দিতে হয়েছে। আমরা সহিংস পরিস্থিতির সমাপ্তি ঘটনোর আহ্বান জানাই। সহিংসতার অবসান ও সংকট উত্তরণে আস্থা বৃদ্ধির পদক্ষেপের প্রয়োজন। এটা কীভাবে করা হবে সেটা বাংলাদেশকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা সব পক্ষকে জ্বালাময়ী রাজনৈতিক ভাষা প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করি। কারণ এ ধরনের ভাষা অপর পক্ষকে আবারও বিচ্ছিন্ন করবে এবং সহিংসতার দিকে নিয়ে যাবে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতপার্থক্য শান্তিপূর্ণ, আইনগত এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে নিরসন সম্ভব হবে। আমরা বিশ্বাস করি আস্থা সৃষ্টি, জনগণের নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির জন্য এ পরিবেশ জরুরি। এতে বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা এবং উগ্রবাদ দমনে শক্তি দীর্ঘস্থায়ী হবে। আমরা সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাকে স্বাগত জানাব। বিএনপি চেয়াপারসন খালেদা জিয়ার কাছেও চিঠি আকারে একটি বার্তা পৌঁছানো হয়। ১ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিফিং করেন কূটনীতিকদের এবং গুলশানে রাজনৈতিক কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক হয় ৩ মার্চ। কূটনীতিকরা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চাইলেও পাননি। বরং তাদেরকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই যোগাযোগ রক্ষা করার বার্তা দেওয়া হয়। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে সমঝোতার এ উদ্যোগ মধ্যবর্তী নির্বাচন বা একক কোনো জাতীয় নির্বাচনকে লক্ষ্য করে নেওয়া হয়নি। বরং চেষ্টা স্থায়ী সমাধানের। উভয়পক্ষের বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে একে অপরকে বুঝিয়ে আনুষ্ঠানিক সংলাপের চেষ্টা করা হচ্ছিল। দুই পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে সংলাপের আগে পাঁচটি দাবি খুঁজে পেয়েছিলেন কূটনীতিকরা। এর মধ্যে সরকারের দুই দাবি, সহিংসতা বন্ধ ও জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ। অন্যদিকে, বিএনপির দাবি কেন্দ্রীয়সহ সব কার্যালয় খুলে দেওয়া, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের মুক্তি ও চেয়াপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিল।
এসব দাবি উত্থাপিত হলেও সরকারের থেকে আশানুরূপ সহযোগিতার ইঙ্গিত দেখতে না পেয়ে ধীরে চলো নীতিতে চলে গেছেন কূটনীতিকরা। কারণ জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের আহ্বান ও চিঠিকে কার্যকর করার উদ্দেশে এ উদ্যোগ হলেও সরকারের পক্ষ থেকে এ চিঠির কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি। আবার বিএনপিও জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ বা আন্দোলন স্থগিত করার কোনো অবস্থানে আসতে রাজি নয়। তাই আপাতত কোনো পক্ষের সঙ্গে আর আলোচনার কোনো পরিকল্পনা নেই কূটনীতিকদের। বৃহস্পতিবার বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরে সম্ভব হলে দুই পক্ষের সঙ্গে আবার আলোচনা হবে।

সর্বশেষ খবর