শনিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

'মনে হচ্ছে হাসিনাকে হত্যা না করে খালেদা ফিরবেন না'

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একাত্তরের পাক হানাদারদের মতোই জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া দেশে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু উনি ৮১ দিন আন্দোলন করেও ব্যর্থ হয়েছেন, সেই ব্যর্থতা থেকে উনি আর উঠে আসতে পারবেন না। গত ৮১ দিনেও (হরতাল-অবরোধ) উনার আক্কেলে পানি পড়েনি, আর পড়বেও না। আর উনি (খালেদা জিয়া) কী আশায়, কার আশায় বসে আছেন? উনাকে সবাই ছেড়ে চলে গেছেন। উনার পাশে এখন তো আর কেউ নেই, উনি এখন একা। উনি কীসের আশায় বাড়ি ছেড়ে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে বসে আছেন? মনে হচ্ছে শেখ হাসিনাকে হত্যা না করে উনি ঘরে ফিরে যাবেন না! কিন্তু আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রাখলে উনি কী করে তা করবেন? আমার মৃত্যু নিয়ে কোনো ভয় নেই। আমার যতক্ষণ নিঃশ্বাস আছে, ততদিন দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাব। খালেদা জিয়ার সাধ্য নেই তা থেকে আমাকে বিরত রাখতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণ দিচ্ছিলেন। আলোচনায় অংশ নেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা ও এস এম কামাল হোসেন। কবি নির্মলেন্দু গুণের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে লেখা 'একটি কবিতা লেখা হবে' কবিতাটি আবৃত্তি করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ড. হাছান মাহমুদ ও অসীম কুমার উকিল। দেশের জ্ঞানী-গুণী, সমাজের বিশিষ্টজনদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের মধ্যে সামান্য বিবেক ও মনুষ্যত্ব আছে তারা কখনোই বীভৎস কায়দায় যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে তাদের সমর্থন দিতে পারেন না। ভোট দিতে পারেন না। যারা সমাজে জ্ঞানী-গুণী ও বিবেকবান বলে দাবি করেন তারা কী করে এই অপশক্তির পাশে দাঁড়াবেন, সমর্থন দেবেন? বরং বিবেক ও মনুষ্যত্ব থাকলে মানবতাবিরোধী ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের প্রত্যাখ্যান করে সঙ্গ ছেড়ে দেবেন- এটাই দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে। প্রধানমন্ত্রী সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, দেশে একটি শ্রেণি আছে সব সময়ই যারা দেশের উন্নয়ন করে তাদের পেছনে লাগে, ষড়যন্ত্র করে। কীভাবে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে কিছু পাওয়া যায় সেই ফাঁকফোকর খোঁজেন। যিনি এতিমের টাকা পর্যন্ত মেরে খেয়েছেন তার (খালেদা জিয়া) পক্ষ নিয়ে আবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন! তারা কী কখনো হাসপাতালে গিয়ে পোড়া মানুষের আর্তচিৎকার শুনেছেন? যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারগুলোর কী অবস্থা তার কী কখনো খোঁজ নিয়েছেন? তিনি বলেন, মানবাধিকারের পক্ষে তাদের বিবেক জাগ্রত হয় না, হত্যাকারীর মানবাধিকারের জন্য তাদের কণ্ঠ সোচ্চার! তারা আক্রান্তদের পক্ষে নন, আক্রমণকারী খুনি-হত্যাকারীর মানবাধিকার রক্ষা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন, এটা কোন ধরনের মানসিকতা, কোন ধরনের রাজনীতি। 'বিএনপি নেত্রী স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না'- এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন না বলেই বিএনপি নেত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যাননি। মহান একুশে ফেব্রুয়ারিতেও ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে তিনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাননি। তিনি বলেন, বাঙালি জাতি এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছে। দেশের স্বাধীনতা নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। তাই কারা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে যাননি, তাদের একটি তালিকা করার হয়তো সময় এসে গেছে। তিনি বলেন, বিএনপির নেতারা বলেন বিএনপি নেত্রীকে নাকি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে! বাস্তবে উনি মোটেই অবরুদ্ধ নন, বরং নিজেই গেটে তালা লাগিয়ে দলীয় কার্যালয়ে বসে আছেন। ওই কার্যালয়ে বসে তিনি দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন বানচালের নামে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি নেত্রী দেশে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। কিন্তু শত প্রতিকূলতার মধ্যেও নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের পর একটি বছর দেশের মানুষ শান্তিতে ছিল। কিন্তু গত ৫ জানুয়ারি থেকে আবারও বিএনপি নেত্রী আন্দোলনের নামে নাশকতা শুরু করেছেন। ৮১ দিন ধরে হরতাল-অবরোধের নামে কত মানুষকে উনি পুড়িয়ে অঙ্গার করে দিয়েছেন। ছাত্র-শিক্ষক, এমনকি অন্তঃসত্ত্বা মাকে পর্যন্ত পুড়িয়ে উনি হত্যা করেছেন। কেউ তার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।

'স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা'- জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর স্বাধীনতার ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলেছে। একটি প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস জানতেই দেওয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে শুরু হয় হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল জিয়া শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই ধ্বংস নয়, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করা, নিষিদ্ধ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি পুনরায় চালু, স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে মুক্তি দিয়ে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেন। আর তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত এবং ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর দুই খুনিকে জিতিয়ে এনে সংসদে পর্যন্ত বসিয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানকে বিএনপি নেতারা বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক বলার চেষ্টা করেন। উনি কীভাবে গণতন্ত্রের পক্ষের লোক হন? উনি তো প্রতি রাতে কারফিউ দিয়ে দেশ চালিয়েছেন। তাই বহুদলীয় গণতন্ত্র নয়, জিয়াউর রহমান কারফিউ গণতন্ত্র দিয়েছিলেন। দেশবাসীকে সব অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রা কেউ-ই বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। লাখো শহীদের আত্দত্যাগ কখনোই বৃথা যাবে না।

সর্বশেষ খবর