রবিবার, ২৯ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

সিটি নির্বাচনে রাজপথে ফিরতে চায় বিএনপি

সিটি নির্বাচনে রাজপথে ফিরতে চায় বিএনপি

আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে স্থবির দলীয় আন্দোলন চাঙ্গা করতে চায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচনী তৎপরতার মধ্য দিয়েই চলমান    আন্দোলন জোরদার করতে চায় তারা। গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে অবরোধ-হরতালসহ সারা দেশে চলমান আন্দোলন সম্প্রতি ঢিলেঢালা হয়ে পড়ায় সিটি নির্বাচনের তৎপরতাকে রাজপথ দখলের কৌশল হিসেবে নিতে চায় বিরোধী এই জোট। দৃশ্যত, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কথা বলা হলেও ভিতরে ভিতরে এ নির্বাচনকে তারা আন্দোলন গতিশীল করার কৌশল হিসেবে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। আজ-কালের মধ্যেই নির্বাচন সম্পর্কে চূড়ান্ত করা হবে বলে নির্ভরশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, এই সিটি নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ রাজপথে নেমে আসবে। আর জনগণের সেই দুর্বার আন্দোলনের মুখে সরকার জাতীয় নির্বাচনের গণদাবি মেনে নিতে বাধ্য হবে।
জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ক্ষমতাসীনদের দখলে থাকা ঢাকা ও চট্টগ্রামের রাজপথ নিজেদের দখলে নিতেই মূলত বিএনপি জোটের এই নির্বাচনমুখী তৎপরতা। এ জন্যে পর্যায়ক্রমে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পরিহারের দিকেই হাঁটছে এ জোট। চলমান অনির্দিষ্টকালের অবরোধসহ হরতালের বিকল্প কর্মসূচির কথাও ভাবা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই হরতাল কর্মসূচির পরিমাণও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকালও হরতালের পরিবর্তে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। চলমান অবরোধ-হরতালের পরিবর্তে ঘেরাও, গণঅনশন, অবস্থান, গণমিছিল, সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন ধরনের বিকল্প কর্মসূচি ঘোষণার কথাও চিন্তা করছেন জোট নেতারা। আর এসব কর্মসূচিতে এপ্রিল মাস থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও অংশ নিতে পারেন বলে শরিক দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় একটি বৃহৎ জনসভা ডেকে সেটিতে অংশ নিয়ে তিনি গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের ‘অবরুদ্ধ অবস্থা’ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের ধারণা, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন কোনোক্রমেই অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। এমনকি তা গত বছরের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন থেকেও বেশি দলীয়করণ হতে পারে। আর সেটাই হতে পারে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ‘অতীতের মাগুরার উপনির্বাচনের’ মতো আরেকটি মোক্ষম ইস্যু। তখন নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন কিংবা সংলাপ-সমঝোতার দাবির পরিবর্তে সরাসরি সরকার পতনের ‘একদফা’ দাবিতে চলে যাবে ২০-দলীয় জোট। এসব ব্যাপারে তৃণমূল বিএনপির নেতা-কর্মীদের মতামত নিয়েই পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির বিভাগীয় দুজন সাংগঠনিক সম্পাদক। ঢাকার রাজপথ দখলে প্রয়োজনে এবার তৃণমূলকেই ঢাকামুখী করা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তারা। সিনিয়র ভাইস  চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনের একটি আলোচনা সভার বক্তৃতায় সম্প্রতি তৃণমূলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীদেরই দলের সিদ্ধান্ত এবং আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তকে তিনি চলমান আন্দোলনের একটি কৌশল হিসেবেই উল্লেখ করেন।
এ প্রসঙ্গে জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের ভাষ্য- ‘আন্দোলন হলো সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার মতো। সময় এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী কর্মসূচির ধরন পাল্টানোর আলোচনা হচ্ছে। সময়মতোই তা দেখতে পাবেন।’ তবে দলের যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র বরকতউল্লাহ বুলু আসন্ন সিটি নির্বাচনকে সরকারের ‘মহাচক্রান্তের’ অংশ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, সরকার আসলে একটি তামাশার মহড়া দিচ্ছে। চূড়ান্ত লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন আরও বলেন, সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। বিরোধী নেতা-কর্মীদের হত্যা, গুম, মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতার করে সরকার সিটি নির্বাচনে বিএনপির বিজয় অর্জনে বাধা দিতে পারবে না। এর মাধ্যমে বরং সরকার পতনের আন্দোলনই ত্বরান্বিত হবে। আর তখন ‘একদফা’র বাস্তবায়ন না করে নেতা-কর্মীরা ঘরে ফিরবেন না।
সিটি নির্বাচনকে আন্দোলনের একটি ‘মোড়ক’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.) বলেন, বিএনপি সংঘাত চায় না, সংলাপ চায়। কিন্তু সরকার সংলাপ না, সংঘাত চায়। তাই যেভাবে আন্দোলন করলে সরকার দাবি মানতে বাধ্য হবে, আগামী দিনে আমাদেরকে সে ধরনের কৌশলই গ্রহণ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, সরকারের অঘোষিত তিন দিন, আর বিরোধী জোটের ৮১ দিনের সব মিলিয়ে ৮৪ দিনের বিরতিহীন অবরোধ চলছে। হরতাল হয়েছে ৫২ দিন। এর মধ্যে বিএনপির মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদের গুমসহ খুন, গুলি-ক্রসফায়ার, অপহরণ, পেট্রলবোমায় পুড়ে নিহতসহ সারা দেশে সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এত কিছুর পরও বিএনপি জোট বর্তমান সরকারের অধীনেই তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে এবং এটিকে তারা আন্দোলনের কৌশল হিসেবে বর্ণনা করছে।

সর্বশেষ খবর