বুধবার, ১ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

ঢাকায় ফের নৃশংস খুন

জন্মদিনের কেক-উপহার নিয়ে এসেছিল খুনি

ঢাকায় ফের নৃশংস খুন

হাস্যোজ্জ্বল এ ছবি এখন ধূসর অতীত। নৃশংসতার শিকার হয়ে চলে গেছেন মা। হাসপাতালে দুই মেয়ে। স্বজনদের আহাজারি (ডানে) -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সোমবার রাত ৯টা। কোচিং থেকে বাসায় ফেরে শ্রুতি বিশ্বাস। কিছুক্ষণ পরই ফুল, কেক, জুস ও ফল নিয়ে বাসায় আসে এক ব্যক্তি। সে ড্রয়িং রুমে শ্রুতির বাবা শীতাংশু শেখর বিশ্বাসকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করে কথা বলছিল। ওই ব্যক্তির আনা জুস খাওয়ার পরই অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে যান শীতাংশু। এ সময় হাতুড়ি দিয়ে শীতাংশুর মাথায় আঘাত করে ওই ব্যক্তি। ঘটনা আঁচ করতে পেরে রান্নাঘর থেকে বঁটি নিয়ে ছুটে আসেন শীতাংশুর স্ত্রী কৃষ্ণা কাবেরী বিশ্বাস। ওই বঁটি কেড়ে নিয়ে কৃষ্ণাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ওই ব্যক্তি। এদিকে শব্দ পেয়ে পাশের কক্ষ থেকে ছুটে এসে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে মেয়ে অদ্রি বিশ্বাস। মাথায় আঘাত করলে অদ্রির চিৎকারে অন্য কক্ষ থেকে আরেক মেয়ে শ্রুতি ছুটে আসে। এ সময় তার ওপরও চালানো হয় হামলা। এর আগে বাবা শীতাংশু ও মা কৃষ্ণা বিশ্বাসকে হামলার সময় নিজের কক্ষের দরজা আটকে স্বজনদের ফোন করে বিষয়টি জানায় শ্রুতি। সর্বশেষে গান পাউডার দিয়ে বাসায় আগুন দেয় ওই দুর্বৃত্ত। চলে যাওয়ার সময় বৈদ্যুতিক বাতি নিভিয়ে অচেতন কৃষ্ণা বিশ্বাসকে আগুনের মধ্যে ফেলে দেয় সে। এরপর পাশের ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে চিৎকার করতে থাকে দুই বোন শ্রুতি ও অদ্রি। প্রতিবেশীরা ছুটে আসার আগেই পালিয়ে যায় ওই পাষণ্ড। প্রতিবেশীরা বাসার সবাইকে উদ্ধার করে প্রথমে শ্যামলী কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত আড়াইটার দিকে মারা যান কৃষ্ণা কাবেরী বিশ্বাস (৩৬)। দুই মেয়েসহ শীতাংশুকে মহাখালীর ঢাকা মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বড় মেয়ে শ্রুতির আঘাত গুরুতর না হলেও ছোট মেয়ে অদ্রির ও শীতাংশু বিশ্বাসের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে পেটানোয় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। শীতাংশু ও অদ্রিকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। হাতে আঘাতপ্রাপ্ত শ্রুতিকে কেবিনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শ্রুতির বরাত দিয়ে শীতাংশু বিশ্বাসের ছোট বোন সঞ্চিতা বিশ্বাস জানিয়েছেন এসব তথ্য। সঞ্চিতা বিশ্বাস জানান, শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) উপ-পরিচালক (অপারেশনস) হিসেবে প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত। শীতাংশুর স্ত্রী কৃষ্ণা কাবেরী বিশ্বাস আদাবরে মিশন ইন্টারন্যাশনাল কলেজে শিক্ষকতা করতেন। ওই দম্পতির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে শ্রুতি বিশ্বাস (১৫) ও ছোট মেয়ে অদ্রি বিশ্বাস (৬)। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী শ্রুতি এবং একই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে অদ্রি। মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের ৩/১২ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলার ১/ডি নম্বর ফ্ল্যাটে তারা থাকেন। শীতাংশুর বাড়ি রাজবাড়ীর বালিকান্দি থানার মহরপুর গ্রামে। সঞ্চিতা জানান, ঘটনার দিন রাতে কোচিং থেকে বাসায় ফেরে বড় মেয়ে শ্রুতি। কিছুক্ষণ পর ফুল, কেক, জুস ও ফল নিয়ে বাসার নিচে আসে এক ব্যক্তি। গেট থেকে দারোয়ান ওই ব্যক্তির বিষয়ে শীতাংশুকে জানালে তিনি তাকে ওপরে আসতে বলেন। ওপরে এসে ড্রয়িং রুমে বসে শীতাংশুর সঙ্গে কথা বলছিল সে। এ সময় ওই ব্যক্তি শীতাংশুকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করছিল। শীতাংশু বিশ্বাসের বরাত দিয়ে তার প্রতিবেশী ও স্বজনরা দাবি করেছেন, হামলাকারী ওই ব্যক্তির নাম জহিরুল ইসলাম। হাজী আহমেদ সিকিউরিটিজ নামে একটি ব্রোকার হাউসের ম্যানেজার জহির শীতাংশু বিশ্বাসের পূর্বপরিচিত। শীতাংশুর এক স্বজন জানান, এই ব্যক্তিকে আগে থেকে বাসার অন্য সদস্যরা চিনতেন না। শ্রুতিও জহিরকে আগে কখনো দেখেনি। কয়েক দিন আগে শীতাংশুর জন্মদিনে সে না আসতে পারায় উপহার নিয়ে সোমবার রাতে বাসায় আসে। শীতাংশুর ছোট ভাই বরিশাল বিএম কলেজের শিক্ষক হীমাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, ঘটনা যে বা যারাই ঘটাক, এর সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ওই বাড়ির নিরাপত্তকর্মী আবদুর রহিম জানান, ওই ফ্ল্যাট থেকে আগুন আগুন বলে তিনি চিৎকার শুনতে পান। ফ্ল্যাটে আগুন জ্বলতে দেখে দ্রুত ওই বাড়ির বিদ্যুৎ লাইন ও গ্যাস লাইন বন্ধ করে দেন তিনি। তবে তিনিসহ ওই বাড়ির লোকজন প্রথমে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি বুঝতেই পারেননি। হাসপাতালে নেওয়ার পর তারা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক জানান, পূর্বশত্রুতার জের ধরে ঘটনাটি ঘটতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত হত্যার মূল কারণ সম্পর্কে জানা যায়নি। চিকিৎসাধীন শীতাংশু ও তার মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে পারলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তারা কিছুটা সুস্থ হলেই তাদের সঙ্গে কথা বলবে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুর্বৃত্তকে ধরতে পুলিশসহ গোয়েন্দাদের একাধিক টিম কাজ করছে।
হাজারীবাগে নিরাপত্তাকর্মী খুন : হাজারীবাগে দুর্বৃত্তের হামলায় শামসুল করিম (৬০) নামে এক নিরাপত্তাকর্মী খুন হয়েছেন। সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি হাজারীবাগের মাদার ট্যানারিতে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি নোয়াখালীর সদর থানার খালিশাটোলা গ্রামে। তিনি হাজারীবাগ বউবাজারে হাসেম মোল্লার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
জানা গেছে, ১৯ মার্চ ভোরে হাজারীবাগের ১০৪ নম্বর মাদার ট্যানারিতে একদল দুর্বৃত্ত গোডাউনের তালা ভেঙে চামড়া চুরির চেষ্টা করে। এ সময় শামসুল বাধা দিলে রড দিয়ে তার মাথা ও শরীরে আঘাত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

সর্বশেষ খবর