মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

খালেদার গাড়িবহরে হামলা

সিএসএফের গুলি, কাল হরতাল

খালেদার গাড়িবহরে হামলা

কারওয়ান বাজারে গতকাল সিটি নির্বাচনের প্রচার চালাতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সময় হামলার মুখে পড়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। গতকাল বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে গাড়িবহরে থাকা বেগম জিয়ার নিরাপত্তা কর্মীদের তিনটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহত হন চারজন নিরাপত্তা কর্মী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকালে বিএনপির চেয়ারপারসনের গাড়িবহর কারওয়ান বাজার পৌঁছলে প্রথমে বিক্ষোভের মুখে পড়ে। কালো পতাকা হাতে নিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কিছু কর্মী গাড়িবহরের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় গাড়িবহর লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একজন কর্মকর্তা জানান, ঘটনার সময় বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় নিয়োজিত চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)-এর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া ও লক্ষ্য করে পর পর দুই রাউন্ড গুলি ছোড়েন। সিএসএফের গুলির ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভকারীরা গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। একপর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের সামনে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় খালেদা জিয়া গাড়ির ভিতর ঢুকে যান। পরে কারওয়ান বাজার থেকে বেগম জিয়া পুলিশি নিরাপত্তায় ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের পক্ষে প্রচারণার জন্যে মালিবাগ যান। এদিকে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে বিএনপি আগামীকাল ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরী ছাড়া সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গতরাতে ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’-কে জানান, তিন মাসের জ্বালাও-পোড়াওয়ের প্রতিবাদে কিছু লোক কারওয়ান বাজার এলাকায় কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করছিল। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর সেখানে পৌঁছামাত্র সিএসএফ ও বিএনপি কর্মীরা বিক্ষোভকারীদের পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরের দুটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সিএসএফ দুই রাউন্ড গুলি চালায় বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর জানান, সিএসএফ সদস্যরা গুলি চালায়নি। হামলাকারীরা গাড়িবহরের সামনে থেকে দুই রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। জানা গেছে, আগের দুই দিনের মতো গতকাল বিকালে নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন খালেদা জিয়া। বিকাল পোনে ৫টায় গুলশানের বাসা থেকে বের হয় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। গুলশান-২, বনানী, মহাখালী ফ্লাইওভার হয়ে বিজয় সরণি দিয়ে প্রায় সাড়ে ৫টার দিকে গাড়িবহরটি কারওয়ান বাজারে পৌঁছে। গাড়ি থেকে নেমে খালেদা জিয়া উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে গণসংযোগ শুরু করেন। এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস তার সঙ্গে ছিলেন। সিএসএফ সদস্যরা ছিলেন সামনে ও পিছনের অন্যান্য গাড়িতে। কিছু সময় পর জিপগাড়ির দরজা খুলে হ্যান্ড মাইকে বক্তব্য শুরু করেন বেগম জিয়া। বক্তব্য চলাকালে কাঁচাবাজারের দিক থেকে ‘জয় বাংলা’, ‘ছি ছি খালেদা’ স্লোগান আসতে থাকে। হাতে কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভকারীরা ছোট ছোট ট্রাকে দাঁড়িয়ে খালেদাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। বেগম জিয়ার বক্তব্যের শেষের দিকে গাড়িবহর লক্ষ্য করে একটি ঢিল ছোড়া হলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা ‘ধর ধর’ বলে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সিএসএফ সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পর পর দুই রাউন্ড গুলি চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। গুলিবর্ষণের ঘটনার পর পর পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। কালো পতাকা হাতে বিক্ষোভকারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। লাঠিসোঁটা নিয়ে তারা পাল্টা ধাওয়া করে। এ সময় গাড়িবহরের কয়েকটি গাড়িতে আঘাত করা হলে জানালার কাচ ভেঙে যায়। এ ছাড়া এলোপাতাড়িভাবে ইট ও ডাবের খোল ছুড়তে থাকে বিক্ষোভকারীরা। জটের কারণে খালেদার গাড়ি সামনের দিকে এগোতে পারছিল না। তার গাড়ির ছাদ ও কাচে কয়েকটি ইটের টুকরা পড়তে দেখা যায়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় সংঘর্ষের মাত্রা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশের নিরাপত্তায় বাম পাশ দিয়ে এফডিসি হয়ে মগবাজারের দিকে চলে যায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। এরপর তিনি বেইলি রোড এলাকায় গণসংযোগ করেন।
কাল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল : গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল বুধবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরী ছাড়া সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। একই ইস্যুতে আজ ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি ছাড়া দেশব্যাপী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচিরও ঘোষণা দেওয়া হয়। রাজধানীর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল রাত পৌনে ৮টায় সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এসব কর্মসূচি ঘোষণা করতে গিয়ে বলেন, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে।
মির্জা আব্বাসের পক্ষে প্রচারণা : রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গাড়িবহরে হামলার পর মালিবাগ এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন খালেদা জিয়া। মগবাজার বেইলি রোড হয়ে মালিবাগে গণসংযোগ করেন তিনি। এ সময় স্থানীয় নেতা-কর্মী ও প্রচুর সমর্থক এসে যোগ দেন তার গণসংযোগে। তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। মালিবাগের প্রচারণায় মির্জা আব্বাসের পক্ষে ‘মগ’ মার্কায় ভোট চান তিনি। এরপর যান শাজাহানপুরে মির্জা আব্বাসের বাসা সংলগ্ন এলাকায়। সেখানেও বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত হন। সেখান থেকে তিনি যান খিলগাঁও।
আহতদের দেখতে ইউনাইটেড হাসপাতালে খালেদা : কারওয়ান বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হামলায় আহতদের দেখতে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতরাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান। জরুরি বিভাগে আহতদের খোঁজখবর নিয়ে বেরিয়ে যান তিনি। ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার, সিএসএফ সদস্য ফজলুল করিম, ফারুক হোসেন ও গাড়ির ড্রাইভার শাহাজাদা।
এখন পুলিশ প্রটেকশন পাচ্ছে খালেদার গাড়িবহর : সোমবার পুলিশি প্রটেকশন ছাড়াই নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। প্রচারণায় নেমে কারওয়ান বাজার এলাকায় শিকার হন আওয়ামী লীগের সশস্ত্র হামলার। তবে সন্ধ্যার পর রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে পুলিশ তার গাড়িবহরকে প্রটেকশন দিতে শুরু করে। এর আগে দুপুরে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়ার সরকারি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এদিকে সন্ধ্যার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনের সামনে মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত আটজন পথচারী আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর