সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

অন্যায়ের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে প্রতিশোধ নিন : খালেদা জিয়া

অন্যায়ের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে প্রতিশোধ নিন : খালেদা জিয়া

তিন সিটির নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রামবাসীকে ‘নীরব প্রতিশোধ’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের ভোট অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে বিরাট শক্তি। এটি এক বিরাট ক্ষমতা। সঠিকভাবে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করুন। নীরব ভোট বিপ্লব ঘটান। সিটি নির্বাচনকে বিএনপি সরকার, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য একটি টেস্ট কেস হিসেবে নিয়েছে। কারণ স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পরিবর্তন হবে না। গতকাল রাজধানীর গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্রিগেডিয়ার (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করিম শাহীন, এলডিপির ড. রেদোয়ান আহমেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফতে মজলিসের মাওলানা মো. ইসহাক, লেবার পার্টির ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ ২০-দলীয় জোট ও আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ, ড. মাহবুবউল্লাহ, ড. মাহফুজউল্লাহসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। নগরবাসীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা কেউ ভয় পাবেন না। এটি হলো প্রতিবাদের ভোট। সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সবাইকে ভোট দিতে হবে। ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্র পাহারা দিয়ে আপনাদের ভোটের ফল আপনারা বুঝে নিন। এক ঘণ্টার বক্তব্যে তিনি দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তবে সংবাদ সম্মেলনের বৃহৎ অংশজুড়ে সিটি নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়া। নির্বাচনে পূর্ণ বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী নামানোর দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি এখন আর সক্রিয় নেই। তবে ধরপাকড়ের কারণে ২০-দলীয় জোটের বৈঠক করতে পারেননি বলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া যায়নি। সিটি নির্বাচনের প্রচারে নেমে জনগণের আবেগ, উচ্ছ্বাস দেখে অভিভূত হয়েছেন বলেও জানান বিএনপির এই নেত্রী। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে গণজোয়ার দেখে আওয়ামী লীগ দিশাহারা হয়ে গেছে। তাদের সব হিসাব পাল্টে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতায় বসতে এবং বসার পর আপনি অনেক অপরাধ-অপকর্ম-অপকৌশল করেছেন। এখন রাষ্ট্রক্ষমতা আপনার কাছে বাঘের পিঠে সওয়ার হওয়ার মতো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। আপনি নামতে ভয় পাচ্ছেন। আপনি ভয় পাবেন না। কারণ আমরা আপনার মতো প্রতিশোধপ্রবণ নই। আপনি নম্র, ভদ্র, সংযমী হোন। উগ্র স্বভাব ও জিঘাংসার মনোবৃত্তি বদলান। গণতন্ত্র ও সংলাপের পথে আসুন। আমরা আপনাকে সহিসালামতে নিরাপদে নামতে সাহায্য করব এবং একই সমতলে দাঁড়িয়ে নির্বাচন করব। মানুষ যাকে খুশি বেছে নেবে। আসুন, সেই পথটা অন্তত খুলে দেই। বিএনপি চেয়ারপারসন আরও বলেন, তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন চান। তিন সিটিতে সরকার অবৈধ টাকা ছড়াচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে তার পরও সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। বিএনপি সমর্থিত তিন মেয়র প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, নেতা-কর্মীদের বলব দয়া করে পরিবর্তনের পক্ষে, শান্তির পক্ষে আপনার ভোটটি দিন। ভোটারদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা কেউ ভয় পাবেন না। মা-বোন, মুরব্বি, তরুণসহ সব বয়স ও শ্রেণি-পেশার ভোটাররাই সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে যাবেন। লাইন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবেন। অনিয়ম ও কারচুপি দেখলে সবাই মিলে প্রতিবাদ করবেন। তিনি ভোটারদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, মনে রাখবেন- দেশের সম্পদ লুটপাট করে এবং আপনাদের রক্ত শুষে এরা টাকার পাহাড় গড়েছে। কাজেই এরা যে টাকা বিলাচ্ছে, সেটা আপনাদেরই টাকা। ওদের কাছ থেকে এ টাকা নিলেও ভোট বিক্রি করবেন না। টাকা নেবেন, কিন্তু বিবেক অনুযায়ী ভোট দেবেন। কারণ ভোট বিক্রি আর ঈমান বিক্রি একই কথা। নির্বাচনী প্রচারের সময় গাড়িবহরে হামলার ঘটনার কথা উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তিনি বেঁচে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, বিনা ভোটে রাজকীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। এই দম্ভ ত্যাগ করার জন্য তিনি আহ্বান জানান। খালেদা জিয়া বলেন, মনে রাখবেন সব দিন সমান যায় না। এ পর্যন্ত যা-ই করেছেন, তিন সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হতে দিন। মনে রাখবেন, এতে আপনার ক্ষমতা যাচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তাকে চোখ মুছতেও দেখা যায়। সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় নেমে পর পর কয়েক দিন তার গাড়িবহরে হামলার কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি আমার প্রিয় দেশবাসী, বিশেষ করে ঢাকাবাসীকে বলব, আপনারা দেখছেন, ক্ষমতার দম্ভে আমার সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করা হচ্ছে? আমার স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশকে ভালোবেসে এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। অল্প কিছু দিন আগে আমি আমার আদরের ছোট ছেলেটিকে চিরকালের জন্য হারিয়েছি। আমার একমাত্র জীবিত সন্তানটি অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন ধরে দূরদেশে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ কথা বলতে বলতে খালেদা জিয়া কাঁদতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর তিনি বলেন, জীবনের এই প্রান্তে এসে প্রিয় মাতৃভূমিতে স্বজনহীন পরিবেশে চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে এখনো আমি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সাধ্যমতো সংগ্রাম করে যাচ্ছি। এখন আপনারাই আমার স্বজন, আপনারাই আমার আত্মীয়। আমার সব তৎপরতা আপনাদেরকেই ঘিরে। তাই সব অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিকার ও উপযুক্ত জবাব দেওয়ার ভার আজ আমি আপনাদের ওপরই অর্পণ করলাম। এক প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, অবরোধ ২০ দলের কর্মসূচি। তারা দলের সদস্যদের সঙ্গে এ ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে অবরোধ সক্রিয় নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, পর্দার আড়ালে কোনো সমঝোতা হয়নি। আন্দোলন চলাকালে বোমা হামলাকে ‘রহস্যজনক’ আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের প্রতিবাদে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি শুরু করেন। কিন্তু সেই কর্মসূচি চলাকালে যানবাহনে রহস্যজনক বোমা হামলা হয়েছে। এসব হামলায় অনেক নিরপরাধ মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সশস্ত্র পাহারা চলাকালে কীভাবে এসব হামলা হয়? পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকেরা যানবাহনে বোমা মেরে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এরা জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কলঙ্ক স্থাপনের জন্যই এটি করেছে। কিন্তু মানুষ তাদের এসব অপকৌশলে বিভ্রান্ত হয়নি। হত্যা, নাশকতা সন্ত্রাস ও লাশের রাজনীতি আমরা করি না। সন্ত্রাসনির্ভর নষ্ট রাজনীতির চ্যাম্পিয়ন হলো আওয়ামী লীগ। মানুষ হত্যা করে তার দায় বার বার বিএনপির ওপর চাপানো হয়েছে। কিন্তু তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর