সোমবার, ৪ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

অভিজিৎ হত্যার দায় নিল আল-কায়েদা

অভিজিৎ হত্যার দায় নিল আল-কায়েদা

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক এবং মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ড. অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বার্তা পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা। গত শনিবার জিহাদিস্ট ফোরাম নামের একটি মনিটরিং ওয়েবসাইটে ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার প্রধান আসিম উমর এই হত্যার দায় স্বীকার করেন।

প্রসঙ্গত, এর আগে আনসার বাংলা সেভেন নামের একটি জঙ্গি সংগঠন অভিজিৎ হত্যার দায় স্বীকার করেছিল। এদিকে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ৬৬ দিন পেরিয়ে গেলেও তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আজও পর্যন্ত ঘাতকদের বিষয়ে কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই (ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)-এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো জব্দকৃত আলামতের নমুনার বিষয়েও কোনো প্রতিবেদন হাতে পাননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের দাবি, তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে তারা পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। নিশ্চিত হয়েছেন আদর্শগত কারণেই অভিজিৎকে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট সাইটইন্টিলিজেন্ট গ্রুপের বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, ওয়েবসাইটে দেওয়া ভিডিও-তে আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার প্রধান আসিম উমর বলেছেন, কেবল অভিজিৎ-ই নয়, ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু, রাজীব হায়দার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ কে এম শফিউল ইসলামকেও হত্যা করেছে আল-কায়েদার সদস্যরা। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে গতকাল বলেন, ওয়েবসাইটে দেওয়া ভিডিওটির বিষয় আমরা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। তবে আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম, এটা আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের কাজ। আর আনসারুল্লাহ বাংলাটিম মূলত 'আল-কায়েদা'-কেই অনুসরণ করে। খুনিদের চিহ্নিতকরণ কিংবা গ্রেফতারের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন এমন কয়েকজনকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তাদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এএফপি জানিয়েছে, শনিবার জিহাদিস্ট ফোরামে পোস্ট করা এক বার্তায় ওই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন আসিম উমর। ভিডিওতে উমর বলেছেন, তার সংগঠনই অভিজিতের ওপর হামলা চালিয়েছে। এভাবে অন্যান্য ইসলাম বিদ্বেষীদেরও হত্যা অব্যাহত থাকবে। উল্লেখ্য, এর আগে হত্যাকাণ্ডের ২ ঘণ্টার মধ্যেই আনসার বাংলা সেভেন নামের একটি জঙ্গি সংগঠন অভিজিৎ হত্যার দায় স্বীকার করেছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষেই আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার প্রধানের কি-না- সে সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, একুশে বইমেলায় অভিজিতের সঙ্গে বুয়েট শিক্ষক ফারসীমসহ যাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল, তাদের সম্পর্কেও গোয়েন্দা নজরদারি করা হয়েছে। এমনকি ফারসীমকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। ঘটনার তিন দিনের মাথায় অভিজিতের হুমকিদাতা ফারাবী শফিউর রহমান নামে এক তরুণকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত আলামত ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে হুমকিদাতাদের একটি তালিকা পরীক্ষার জন্য 'এফবিআই'-এর হাতে দিয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত এসব পরীক্ষার কোনো প্রতিবেদন তদন্ত সংশ্লিষ্টদের হাতে এসে পেঁৗছায়নি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ও ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে অবস্থানকারী চার এফবিআই কর্মকর্তা অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সহযোগিতা করছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা এফবিআই সদস্যরা ফিরে গেলেও ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের এফবিআই সদস্য তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলা থেকে রাত ৯টার দিকে ফেরার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পাশে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ড. অভিজিৎ রায়। দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকেও কুপিয়ে আহত করে।

 

সর্বশেষ খবর