সোমবার, ৪ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

আসছেন না কেরি, নিশ্চিত নয় মোদির সফরও

আসছেন না কেরি, নিশ্চিত নয় মোদির সফরও

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ঢাকা সফরে আসতে পারেন এবং সে সফরের কর্মসূচি চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি শুরু হয় চলতি বছরের শুরুতেই। এরপর ওয়াশিংটন সফরে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী যখন জন কেরির সঙ্গে বৈঠক করলেন তখন প্রস্তুতি আরও জোর পেল। এমনো খবর ছিল, দক্ষিণ এশিয়া সফরে এসে যাত্রাবিরতির মাধ্যমে হলেও ঢাকা আসবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। বর্তমানে দুই দিন শ্রীলঙ্কা সফর করেছেন জন কেরি কিন্তু ঢাকা তার সফরসূচির মধ্যে নেই। সেই সঙ্গে চলতি বছরে আর ঢাকা সফর করার সম্ভাবনা থাকল না জন কেরির। অন্যদিকে সীমান্ত চুক্তি নিয়ে নতুন করে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তাতে আগামী জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের যে প্রস্তুতি চলছে তাও নিশ্চিত নয় মনে করছে ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো।

কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা আসার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বলে নিজ মুখেই জানিয়েছেন। এ সফর নিয়ে জুনে ঢাকা ও নয়াদিল্লিতে বেশ কিছু প্রস্তুতিও নিয়েছে এবং নিচ্ছে। দেনা-পাওনার বিষয়গুলো নিয়েই এ প্রস্তুতি। নয়াদিল্লির প্রত্যাশা মতো কোস্টাল শিপিং চুক্তির সময় এগিয়ে এনেছে ঢাকা। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার কারণে তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রত্যাশা পূরণ তো হচ্ছেই না বরং বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে চলে আসা সীমান্ত চুক্তি নিয়েও নতুন করে শুরু হয়েছে অনিশ্চয়তা। আন্তর্জাতিক কোনো চুক্তির খসড়া একবার মন্ত্রিসভায় অনুসমর্থনের পর পরিবর্তন করার সুযোগ আছে কিনা, পরিবর্তন হলে তা সব অংশীদার মানবে কিনা এসব নিয়ে রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। অন্যদিকে নয়াদিল্লির সূত্রগুলোর তথ্যানুসারে, মোদি আঞ্চলিক দেশগুলো সফরে যেতে চান সেখানকার জনগণের জন্য চমক নিয়েই। সে হিসেবেই তিনি ইতিমধ্যে সফর করেছেন নেপাল, ভুটানসহ একাধিক রাষ্ট্র। সেগুলোতে বড় অংকের ঋণের ঘোষণা দিয়েই চমক দেখানো গেছে। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন। এখানকার মানুষের প্রত্যাশা ও ভারতের অতীত প্রতিশ্রুতি অমীমাংসিত বড় দুই ইস্যু সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন ও তিস্তা চুক্তিকে ঘিরে। এর মধ্যে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনের বিল আগামীকাল ভারতের লোকসভায় উঠতে যাচ্ছে। কিন্তু আসামকে বাদ দেওয়া হয়েছে চুক্তি থেকে। প্রত্যাশা করা হচ্ছিল, নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় এসে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেবেন। সেই সঙ্গে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের একটি সময়সীমা ঘোষণা করবেন। কিন্তু খণ্ডিত সীমান্ত চুক্তি নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। একই সঙ্গে কালো মেঘ দেখা দিয়েছে নরেন্দ্র মোদির নিকটতম সময়ে ঢাকা সফরেও।

অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে ঢাকা সফরের বিষয়ে নিজেই আগ্রহ দেখিয়েছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। এরপরই মূলত ঢাকা সফরের বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়। প্রস্তুতি নিতে গিয়ে কয়েক ধরনের বিবেচনা রাখা হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় একাধিক দেশ সফরের সূচি তৈরি বা অন্য কোনো সফরের যাত্রাবিরতিতে ঢাকা সফর আয়োজনের কথাও হয়। সে হিসেবে শিগগিরই এশিয়া বা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কোনো সফরসূচির সঙ্গে মিলিয়ে ঢাকা সফরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ঢাকায়ও এ তথ্য জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল অনানুষ্ঠানিকভাবে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের তথ্য মতে, জন কেরি শুক্র ও শনিবার শ্রীলঙ্কা সফরে এসেছিলেন। প্রথমবারের মতো জন কেরি শ্রীলঙ্কা সফর করলেন। ৪৩ বছরের মধ্যে কোনো মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে সফর করলেন। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। শ্রীলঙ্কায় মার্কিন বিনিয়োগের বিষয়েও আশার কথা শুনিয়ে গেছেন। অবশ্য এর আগের দুই দিন ঢাকা সফর করেছেন জন কেরির দফতরের দুজন কর্মকর্তা। ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি আর শ্যারমেন ও এসিস্ট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি নিশা দেশাই বিসওয়াল। তারা ঢাকায় চতুর্থ পার্টনারশিপ ডায়ালগে অংশ নেন। তারা এসেছিলেন নয়াদিল্লি সফর শেষে। পরে তারা শুক্রবার ঢাকা থেকে কলম্বো গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সফর সঙ্গী হন। জন কেরি অবশ্য কলম্বো থেকে সরাসরি আফ্রিকার দেশ কেনিয়া ও জিবুতি সফরে চলে গেছেন। শুধু এবার নয়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারত ও পাকিস্তান সফর করে গেছেন জন কেরি। তার আগে গত বছরের আগস্টে মিয়ানমার সফর করেছেন। সে বছরও নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ ছিল কেরির সফর তালিকায়। কিন্তু বাংলাদেশ ছিল না, এবারও নেই। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আগামী ছয় মাসের প্রাথমিক সফরসূচিতেও ঢাকার নাম নেই।

 

সর্বশেষ খবর