সোমবার, ২৫ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

পদ ২৬৩, মন্ত্রী-এমপিদের সুপারিশই দুই শতাধিক

রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সুপারিশ ৪২ জনের

পদ ২৬৩, মন্ত্রী-এমপিদের সুপারিশই দুই শতাধিক

বাংলাদেশ রেলওয়েতে গেটম্যান (ট্রাফিক) পদে নিয়োগ দেওয়া হবে ২৬৩ জনকে। কিন্তু এই পদে নিজেদের তালিকাভুক্ত ৪২ প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য মন্ত্রীর কাছে দলীয় প্যাডে সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগ। সংগঠনের সভাপতি মো. হুমায়ূন কবির ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান আকন্দ স্বাক্ষরিত এই সুপারিশ পত্রটি মন্ত্রী বরাবরে পাঠানো হয়েছে ১৩ ফেব্র“য়ারি। শুধু রেলওয়ে শ্রমিক লীগই নয়, সরকারের মন্ত্রী ও এমপি থেকে শুরু করে সরকারদলীয় নেতারাও সুপারিশ করে ডিও (আধা সরকারি) লেটার দিয়েছেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হককে। সব মিলিয়ে সুপারিশের সংখ্যা ২৫৯। যার ফলে বাংলাদেশ রেলওয়েতে জনবল নিয়োগ দিতে গিয়ে তদবিরের চাপে হিমশিম খাচ্ছেন রেলমন্ত্রীসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তদবিরের চাপ এতটাই যে পদের প্রায় সমান সংখ্যক তদবির জমা হয়েছে। ফলে নিয়োগ কমিটি কর্তৃক যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। সদ্য শেষ হওয়া নিয়োগে খালাসি পদেও সুপারিশের বিপরীতে অর্ধেকেরও বেশি লোককে নিয়োগ দিতে হয়েছে রেল মন্ত্রণালয়কে। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অবশ্য রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেছেন, রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। মাঝে মাঝে আমরা শূন্যপদে জনবল নিয়োগ দিয়েছি, দিচ্ছি এবং দিয়ে যাব। দেশে চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় চাকরির জন্য মন্ত্রী, এমপি, দলীয় নেতা, সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ অনেকেই চাকরির জন্য সুপারিশ করেন। সুপারিশ করা কোনো অপরাধ নয়। তবে আমাদের কাছে পদের সংখ্যা সীমিত। কিন্তু সেই তুলনায় সুপারিশ আসে অনেক বেশি। তারপরও নিয়োগ দেওয়া হয় নিয়োগ নীতিমালা অনুসরণ করে। তিনি বলেন, সুপারিশ আমরা নিয়োগ কমিটির কাছে পাঠিয়ে দিই। তারাই সব নীতিমালা অনুসরণ করে এবং কোটা সংরক্ষণ করে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে রেল মন্ত্রণালয়ের অধীনে গেটম্যান, গেটকিপার (ট্রাফিক) পদে ২৬৩ জন এবং গেইটম্যান, গেইটকিপার (ইঞ্জিন) পদে ১৩৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে এই দুই পদে নিয়োগ পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তবে মামলাজনিত কারণে নিয়োগটি বিলম্বিত হচ্ছে। খুব শিগগির এই দুই পদে নিয়োগ সম্পন্ন হবে। অবশ্য নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগলেও মন্ত্রী, এমপি, সরকারদলীয় নেতা এবং রেলওয়ের শ্রমিক লীগের তদবির বা সুপারিশ থেমে নেই। সূত্র জানায়, শুধু গেইটম্যান (ট্রাফিক) পদে নিজেদের লোকজনকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য তদবির করেছেন সরকারদলীয় বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা এবং রেলওয়ে শ্রমিক লীগ। এর মধ্যে শ্রমিক লীগই সুপারিশ করেছে ৪২ জনের জন্য। এর বাইরে এমপি ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ আটজনের জন্য সুপারিশ করে ডিও লেটার দিয়েছেন। একইভাবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি সুপারিশ করেছেন চারজনের জন্য। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন সুপারিশ করেছেন আটজনের জন্য। নৌপরিহন মন্ত্রী পাঁচজনের জন্য, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ১১ জনের জন্য, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি চারজন। শুধু এরাই নন, আরও অনেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি এবং সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা একটি থেকে শুরু করে তিন-চারটি পর্যন্ত সুপারিশ করেছেন। সূত্র জানায়, ইতিপূর্বে ২৮ মে খালাসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয় এক হাজার ৪০০ জনকে। ওই পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপারিশ পড়েছিল সাড়ে তিন হাজারের উপরে। যার ফলে খালাসি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি দীর্ঘদিন ঝুলেছিল। রেলওয়ের মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, খালাসি পদে নিজেদের লোক নিয়োগ দেওয়ার জন্য শুধু রেলওয়ের শ্রমিক লীগ সুপারিশ করেছিল ৬০০ জনের জন্য। এর মধ্যে শেষ পর্যন্ত তাদের তালিকা অনুযায়ী ২০০ জনকে নিয়োগ দিতে বাধ্য হয় মন্ত্রণালয়। এছাড়া এই খালাসি পদেই রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ডিও লেটার দিয়েছিলেন ৫৩ জনের জন্য। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যে হারে সুপারিশ আসে তাতে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। তখন প্রকৃত যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

সর্বশেষ খবর