শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৬ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

শিলং চষে বেড়াচ্ছেন তাবিথ

দেখা করবেন মুখ্যমন্ত্রীসহ শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে

শিলং চষে বেড়াচ্ছেন তাবিথ

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের আইনি ও চিকিৎসা বিষয় নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে খালেদা জিয়ার নির্দেশে শিলং গেছেন বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল। গত রবিবার রাতে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে তিনি মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে পৌঁছেন। শিলংয়ে গিয়েই গতকাল সকালে তিনি সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদকে নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আলোচনা করতে ছুটে যান মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মুকুল সাংমার কার্যালয়ে। তবে পূর্বানুমতি না থাকায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি। ভারতে এক সপ্তাহ থাকবেন জানিয়ে তাবিথ আউয়াল বলেছেন, এ সময়ের মধ্যে তিনি মুখ্যমন্ত্রী, বিধান সভার সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির সঙ্গে দেখা করবেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশেই সালাহউদ্দিনের জন্য ভারতে এসেছেন বলে জানান তাবিথ।
সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় হাসিনা আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে আইনজীবী এস পি মোহন্তের চেম্বারে যান তাবিথ আউয়াল। অ্যাডভোকেট মোহন্তকে আইনি লড়াই শুরুর প্রস্তুতি নেওয়ার অনুরোধ জানান তারা। এ ছাড়া অনুপ্রবেশ ঘটনায় যে আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তা নিয়েও আলোচনা করেন আইনজীবীদের সঙ্গে। অ্যাডভোকেট মোহন্তের চেম্বার থেকে বের হয়ে হাসিনা আহমেদ ও তাবিথ আউয়াল স্থানীয় দুই বিধায়কের সঙ্গে দেখা করতে তাদের বাসায় যান। সালাহউদ্দিনের উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে সহযোগিতা করতে ওই দুই বিধায়ককে অনুরোধ জানানো হয়। বিধান সভার ওই দুই সদস্যের নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তাবিথ আউয়াল। বেলা ১১টায় হাসিনা ও তাবিথ যান মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মুকুল সাংমার কার্যালয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাদের জানানো হয় মঙ্গলবার বা বুধবার তাদের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিলংয়ের পুলিশ বাজারের হোটেল সেন্ট্রাল পয়েন্টে ফিরে তাবিথ আউয়াল বাংলাদেশ থেকে যাওয়া নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কিছু সময় কথা বলেন। এর পর হাত-মুখ ধুয়ে চলে যান নেগ্রিমস হাসপাতালে। সেখানে হাসপাতালের ডেপুটি সুপার ডা. ভাস্কর বর্গাইনের সঙ্গে সালাহউদ্দিনের চিকিৎসা নিয়ে বেশ কিছু সময় কথা বলেন। এরপর তিনি সিসিইউতে সালাহউদ্দিনকে দেখতে যান। বেলা ২টার দিকে তাবিথ আউয়ালের ফোনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন সালাহউদ্দিন। এ সময় খালেদা জিয়া সালাহউদ্দিনের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং তাকে কোনো টেনশন না করার পরামর্শ দেন বলে জানিয়েছেন সালাহউদ্দিনের ভাতিজা সাফওয়ানুল করিম।
শিলংয়ে আসা প্রসঙ্গে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘সালাহউদ্দিন চাচার বিষয়টি রাজনৈতিক নয়, মানবিক। চাচার সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় তার আইনি ও চিকিৎসার ব্যাপারে সহযোগিতা করতে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আমাকে ভারত পাঠিয়েছেন।’
তাবিথ আউয়াল আরও বলেন, ‘সালাহউদ্দিন চাচা স্বেচ্ছায় ভারতে অনুপ্রবেশ করেননি। তাকে অপহরণ করে ৬১ দিন আটকে রেখে শিলংয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ভারতের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমরা আদালতের কাছে মানবিক বিষয় তুলে ধরে সহানুভূতি চাইব। তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে আমরা আদালত ও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অনুরোধ জানাব। চাচা পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত যাতে তাকে কোনো ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ না করা হয় সংশ্লিষ্টদের কাছে আমরা এ অনুরোধও করব। বর্তমানে তার যে অবস্থা তাতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
এদিকে হাসিনা আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, গত রবিবার রাত থেকে সালাহউদ্দিনের ব্যাকপেইন বেড়েছে। একই সঙ্গে তার বুক ও ডান পায়ের ব্যথা বেড়েছে। সর্বশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী সালাহউদ্দিনের ওজন এখনো ২০ কেজি কম রয়েছে বলে চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন বলে জানান হাসিনা।
নেগ্রিমস হাসপাতালের ডেপুটি সুপার ডা. ভাস্কর বর্গাইন জানান, গতকাল মেডিকেল বোর্ড সালাহউদ্দিনকে হাসপাতালে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশকে অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাকে ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়টিও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। গতকাল তার তিনটি পরীক্ষা হয়েছে। মঙ্গলবার পরীক্ষাগুলোর রিপোর্ট এলে মেডিকেল বোর্ড পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। শিলংয়ের পুলিশ সুপার বিবেক সিয়েম বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনুমতি না দেওয়ায় সালাহউদ্দিনকে হাসপাতালে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি। হাসপাতালের ছাড়পত্র পেলেই তাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
সালাহউদ্দিনের জন্য : ‘বাংলাদেশ আমার স্বামীর জন্য নিরাপদ নয়, তাই সেদেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। যদি আইন সম্মতি জানায় তবে যত তাড়াতাড়ি পারি সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে চাই।’ ভারতের ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে সাক্ষাৎকারে এ কথা জানালেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।
গত ১০ মার্চ নিখোঁজ হওয়ার প্রায় দুই মাস পর ১১ মে মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে সন্ধান পাওয়া যায় সালাহউদ্দিনের। অসুস্থ স্বামীকে দেখতে ১৮ মে মেঘালয়ে আসা সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদও তার স্বামীর নিখোঁজ রহস্য নিয়ে গভীর অন্ধকারে। সোমবার পত্রিকাটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাসিনা জানান, ‘বাংলাদেশে আমার স্বামী মোটেও নিরাপদ নন। আমি তাকে সেখানে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই না। আইন সম্মতি দিলে আমি তাকে খুব শিগগিরই সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে চাই। কারণ কয়েক বছর ধরে সেখানেই সালাহউদ্দিনের কিডনি ও হার্টের চিকিৎসা হয়েছিল।’ হাসিনা জানিয়েছেন ‘তার স্বামী এখনো দুর্বল। হৃৎপিণ্ডে তিনটি টিউব বসানো রয়েছে। বাম কিডনিও ঠিকমতো কাজ করছে না। আমি বলছি না যে এখানে তার চিকিৎসা ঠিকমতো হচ্ছে না কিন্তু সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ২০ বছর ধরে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তারা সালাহউদ্দিনের পুরো হিস্ট্রিটাই জানে। কিন্তু এখন যদি তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাই... আমি জানি না কী হবে।’ বিএনপির সাবেক এমপি হাসিনা জানিয়েছেন, গত ১০ মার্চ তার স্বামী নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর বাকি দিনগুলো তিনি কোথায় ছিলেন, কীভাবে শিলং এলেন জানি না। তবে এটা ভেবে ভালো লাগছে যে তিনি নিরাপদে আছেন এবং খুব যত্নসহকারে তার দেখভাল করা হচ্ছে। সালাহউদ্দিনের নিখোঁজ নিয়ে বলতে গিয়ে হাসিনা জানান, ‘গত ১১ মার্চ আমি জানতে পারি, আগের দিন (১০ মার্চ) সন্ধ্যাবেলায় উত্তরায় এক বন্ধুর বাসায় যাওয়ার সময় কয়েকজন মানুষ তাকে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, তাকে অপহরণ করার সময় সেখানে কয়েকটি সরকারি গাড়িও ছিল। আমি জানি না কে বা কারা তাকে অপহরণ করল, কেনই বা করল।’ স্বামী অপহরণের পরই আমি প্রথমেই স্থানীয় গুলশান থানায় যাই কিন্তু পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। পরিবর্তে তারা আমাকে উত্তরা থানায় যেতে বলে। যখন উত্তরা থানায় যাই তারা বলে সাক্ষী ছাড়া কোনো এফআইআর করতে পারবে না। এরপর ১২ মার্চ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হই। হাইকোর্ট বাংলাদেশ সরকারকে আমার স্বামীকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। এ ছাড়াও প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। হাসিনা জানিয়েছেন, স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চেয়ে আবেদন করি কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি। আমি দু-দুটো পিটিশন জমা দিয়েছি, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমার জন্য সময় বের করতে পারেননি। এমনকি আমি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি)-এর কাছেও গিয়েছি কিন্তু কোনো সদুত্তর মেলেনি।

সর্বশেষ খবর