শুক্রবার, ২৯ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

মোদিকে নিয়ে যত প্রস্তুতি

আসছেন মমতাসহ চার মুখ্যমন্ত্রী, কঠোর নিরাপত্তা

মোদিকে নিয়ে যত প্রস্তুতি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে দুই সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি চলছে ঢাকা ও দিল্লিতে। তবে সফরসূচি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে সাজসাজ রব। মোদির নিরাপত্তায় আসছে ভারতীয় ব্ল্যাক ক্যাট ও স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপ বা এসপিজি। প্রস্তুত হচ্ছে মোদির জন্য ১০০ পদের নিরামেষী রান্না। ডজনের বেশি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য একের পর এক বৈঠক করছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। আবার জল্পনা-কল্পনা কাটিয়ে মোদির সফরসঙ্গী হিসেবে ঢাকায় আসা নিশ্চিত করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। শুধু তিনিই নন, মোদির সফরসঙ্গী হচ্ছেন বাংলাদেশের সীমান্ত-সংলগ্ন ভারতের চার রাজ্যের চার মুখ্যমন্ত্রী।
ঘোষিত সূচি অনুসারে, নরেন্দ্র মোদি আগামী ৬ ও ৭ জুন ঢাকা সফর করবেন। তার সফরসূচির একটি খসড়াও তৈরি করেছে ভারতীয় হাইকমিশন। মূলত এ খসড়াই অনুসরণ করা হবে। তবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই সূচিতে পরিবর্তন হতেই পারে। বাংলাদেশে দুই দিনের এ সফরে মোট ৩৬ ঘণ্টা অবস্থান করবেন মোদি। পুরোটা সময়ই তিনি ঢাকায় থাকবেন। ঢাকার বাইরে কোনো কর্মসূচি রাখা হয়নি। ৬ জুন সকাল ১০টার পর বিশেষ বিমানে ঢাকায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। সেখান থেকেই সরাসরি নরেন্দ্র মোদি চলে যাবেন সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। সেখানে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সাভার থেকে ফিরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রব্ধা জানাবেন। ফিরবেন হোটেল সোনারগাঁওয়ে। যদিও মোদির জন্য তিনটি থাকার স্থান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সোনারগাঁও হোটেল ছাড়াও তার জন্য প্রস্তুত থাকবে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা ও ভারতীয় হাইকমিশনারের বাসভবন। তবে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে মোদি সোনারগাঁও হোটেলেই অবস্থান করবেন। দুপুরে হোটেলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। দুপুরের পর হোটেল থেকে বেরিয়ে মোদি যাবেন তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানেই চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকার বাইরে একাধিক প্রকল্পও উদ্বোধন করবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আয়োজনে নৈশভোজে অংশ নেবেন নরেন্দ্র মোদি। পরদিন সকালে নরেন্দ্র মোদি যাবেন পুরান ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সেখানে প্রার্থনায় অংশ নেবেন তিনি। এরপর যাবেন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। বঙ্গভবনে তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা গ্রহণ করবেন। বারিধারায় কূটনৈতিক অঞ্চলে ভারতের নতুন চ্যান্সারি ভবন উদ্বোধন করবেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশের সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক ও বিশিষ্টজনের উদ্দেশে একটি বক্তৃতা দেবেন। এর আগে হোটেলে ফিরে বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আরও অন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন মোদি।
আসছেন মমতাসহ চার মুখ্যমন্ত্রী : নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির সফরসঙ্গী হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে। সে হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গাগৈ, মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরসঙ্গী হচ্ছেন। সূত্রমতে, একটি ছোট প্রতিনিধি দল নিয়েই ঢাকা আসছেন মোদি। এর মধ্যে থাকছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্কর। অবশ্য নরেন্দ্র মোদির এই আকর্ষণীয় সফরকে কাভার করতে বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০০ জন সাংবাদিক নিজ খরচে ঢাকা আসবেন মোদির সঙ্গেই।
কঠোর নিরাপত্তা : মোদির সফরের তিন দিন আগেই রাজধানীকে ঢেকে দেওয়া হবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়ের মাধ্যমে। আকাশপথেও থাকবে বিশেষ টহল। মোদির অংশ নেওয়া ভেন্যুগুলোর আশপাশে চলবে গোয়েন্দা নজরদারি। রাজধানীর প্রতিটি প্রবেশদ্বারে বসানো হবে বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর প্রবেশপথে ভেহিক্যাল স্ক্যানার বসানো হবে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।  র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, এ সফরকে ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটসহ বিশেষায়িত ইউনিটকে বিশেষভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর যেসব রাস্তা দিয়ে চলাচল করবে এর প্রতিটিকে বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসবে র‌্যাব। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ভিভিআইপির নিরাপত্তার বিষয়টি মূলত দেখভাল করে এসএসএফ। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি থাকবে। মোদির গমনাগমনের রাস্তায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ইতিমধ্যেই বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
ব্ল্যাক ক্যাট কমান্ডোরা আসছেন ১ জুন : ঢাকায় মোদির নিরাপত্তার জন্য সে দেশের ব্ল্যাক ক্যাট কমান্ডো ও স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপের (এসপিজি) অগ্রগামী সদস্যরা ১ জুন ঢাকায় আসছেন। নিরাপত্তার বিষয়টি সমন্বয়ের জন্য ব্ল্যাক ক্যাট ও এসপিজির সঙ্গে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর সদস্যদের নিয়ে বিশেষ টিম গঠন করা হচ্ছে। ব্ল্যাক ক্যাট কমান্ডো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ এলিট বাহিনী। ভারতীয় সেনাবাহিনী, সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ব্ল্যাক ক্যাট কমান্ডো গঠিত।
খাবারের তালিকায় নানান পদের নিরামিষ : মোদির সফরে ১০০ রকমের নিরামিষ রান্নার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। খাদ্য তালিকায় থাকছে মসুর ডাল ও নানা ধরনের সবজি দিয়ে তৈরি ‘মশলা খিচুরি’। সঙ্গে থাকবে নানা ধরনের এবং স্বাদের ডালনা, সর্ষে দিয়ে সজনে ডাঁটা, আমের চাটনি। মোদির নিজস্ব পছন্দ ‘ভিন্ডি কড়ি’, ভিন্ডি অর্থাৎ ঢেঁড়স আর দুধ দিয়ে তৈরি। মোদির পছন্দের গুজরাটি খাবার ‘সাদা খাট্টা ধোকলা’ও থাকবে? এসবের সঙ্গে থাকবে তাজা ফল, আর অবশ্যই বাংলাদেশের বিখ্যাত পিঠেপুলি, পায়েস, ক্ষীর, সন্দেশ। এগুলোর পাশাপাশি ঢাকা থেকে মোদির খাবারের পছন্দের তালিকা জানতে চাওয়া হয়েছে। সেই হিসেবেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর