রবিবার, ৩১ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
প্রেসক্লাবে সমঝোতা কমিটি

দায়িত্ব ও তালা ভাঙা নিয়ে উত্তেজনা

দায়িত্ব ও তালা ভাঙা নিয়ে উত্তেজনা

জাতীয় প্রেসক্লাবে গতকাল এভাবেই তালা ভেঙে এবং অসদস্যদের নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণের চেষ্টা করে সমঝোতা কমিটি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছে ‘সমঝোতা’র মাধ্যমে গঠিত নতুন কমিটি। তবে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ দখল করা নিয়ে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে তীব্র উত্তেজনা, হৈচৈ, ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। এ সময় পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অসদস্যদের বাড়াবাড়ি ও স্লোগান নিয়ে ক্লাব সদস্যরা তীব্র অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন, প্রেসক্লাব নিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা দুঃখজনক। বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, ভোট ছাড়াই সভা করে কমিটি গঠনের দুই দিন পর শনিবার এর সদস্যরা প্রেসক্লাবের কমিটি কক্ষে বৈঠক করেন। তিন ঘণ্টা বৈঠকের পর কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আমরা ক্লাবের দায়িত্ব নিয়েছি। এ জন্য সবার সহযোগিতা চাই।’ অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ নতুন কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান কমিটি (তাদের কমিটি) নির্বাচিত আরেকটি কমিটির কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারে, এর বাইরে পারে না। ক্লাবের কোনো দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন হয়নি, সেহেতু দায়িত্ব দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তথাকথিত কমিটি কোনো বৈধ কমিটি নয়।’ আগামী ২৭ জুন ক্লাবের অতিরিক্ত সাধারণ সভা ডাকার কথা জানিয়ে আবদাল বলেন, ওই সভায় ক্লাবের সদস্যরাই সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর পরপর জাতীয় প্রেসক্লাবে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও গত ৩১ ডিসেম্বর কামাল উদ্দিন সবুজ ও সৈয়দ আবদাল নেতৃত্বাধীন কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। তফসিল হলেও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ‘পরিবেশ নেই’ বলে দায়িত্ব পালনে অপারগতা জানালে ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক সাংবাদিকদের উভয় পক্ষ একটি বৈঠক করে সমঝোতা কমিটি গঠন করে।
উত্তেজনা : নির্বাচন আটকে যাওয়ার পর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবে উত্তেজনা চলছিল। সমঝোতা কমিটি গঠনের পর উত্তেজনা আরও বাড়ে। এর মধ্যেই ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের কক্ষের কাচঘেরা দরজার তালা ভাঙার চেষ্টা নিয়ে শনিবার দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। ক্লাবের অফিস কর্মীরা সাধারণ সম্পাদকের কক্ষের (যেটিতে সৈয়দ আবদাল বসেন) তালা ভাঙার উদ্যোগ নেন। তালা-চাবিওয়ালারা জানালার গ্লাস খুলে ভিতরের লক খোলার সময় আলোকচিত্র সাংবাদিকরা সেখানে যান। কিছুটা হৈচৈ শুনে নতুন কমিটির সভাপতি শফিকুর রহমান দ্বিতীয় তলায় কমিটি কক্ষের বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘কে তোমাদের তালা খুলতে বলেছে? আমরা তো এই কক্ষ কাউকে খুলতে বলিনি।’ তিনি তালা-চাবিওয়ালাদের চলে যেতে বলেন। ঠিক ওই সময় সৈয়দ আবদাল তাদের বৈঠক থেকে বেরিয়ে সেখানে আসেন। তিনি উচ্চ কণ্ঠে বলতে থাকেন, ‘আমি সাধারণ সম্পাদক। আমার রুম কে খুলতে বলেছে? কে তালা ভাঙতে বলেছে?’
এ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য নুরুল হুদা, হাসান হাফিজ, নুরুল হাসান খানসহ ক্লাবের কয়েকজন স্থায়ী সদস্যও এর প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। এরপর তারা অফিস কক্ষে গিয়ে ক্লাবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিকের কাছে জানতে চান, এভাবে তালা ভাঙা হচ্ছে কেন? হৈচৈয়ের মধ্যে কমিটি কক্ষের পাশে সাংবাদিক লাউঞ্জে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগ সমর্থক ফোরামের সদস্যরা স্লোগান দিতে থাকেন। তারা ‘রাজাকার-জামায়াতের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে থাকেন, যা নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। তখন ক্লাবের বিএনপি সমর্থক স্থায়ী সদস্যরা শফিকুর রহমানের কাছে গিয়ে দাবি জানান, বহিরাগতদের বের করে দিতে হবে। এ সময় শফিকুর রহমান নিজের ফোরামের সদস্যদের নিচে চলে যাওয়ার অনুরোধ জানাতে থাকেন। নতুন কমিটির সদস্য বিএনপি সমর্থক সাংবাদিক নেতা আমানুল্লাহ কবীরও কমিটি কক্ষের বাইরে এসে পরিস্থিতি শান্ত করতে ভূমিকা রাখেন। এর পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
বিএনপি ফোরাম থেকে আটজনকে বহিষ্কার : ‘সমঝোতা’র কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় যারা আওয়ামী লীগ সমর্থক সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন, সেই আট জ্যেষ্ঠ সদস্যকে বহিষ্কার করেছে প্রেসক্লাবের বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ফোরাম। ফোরামের ঐক্য বিনষ্টের তৎপরতা চালানোয় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ফোরামের নেতা ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী। বহিষ্কৃতরা হলেন- আমানুল্লাহ কবীর, খন্দকার মনিরুল আলম, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, গোলাম মহিউদ্দিন খান, কামরুল ইসলাম চৌধুরী, আমিরুল ইসলাম কাগজী, সরদার ফরিদ ও ইলিয়াস খান। তাদের মধ্যে আমানুল্লাহ কবীর অবিভক্ত বিএফইউজের মহাসচিব হিসেবে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সাংবাদিক সমাজের নেতৃত্ব দেন। পরে একাংশের সভাপতিও হন তিনি। মনিরুল আলম প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

সর্বশেষ খবর