শনিবার, ২৭ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা

নেতৃত্বে চমক আনতে চান খালেদা

নেতৃত্বে চমক আনতে চান খালেদা

আগামী দিনে নেতৃত্বে চমক আনতে চান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে দলে ব্যাপক সংস্কার করবেন তিনি। বিগত দুই বছরে সরকারবিরোধী রাজপথের আন্দোলনে পরীক্ষিতদের এবার যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। এ নিয়ে তালিকার কাজও শুরু হয়েছে। রাজপথবিমুখ বিতর্কিত, দুর্নীতিগ্রস্ত ও বয়োবৃদ্ধ নেতাদের দল থেকে বাদ দেওয়া হবে। সব কমিটিই হবে অপেক্ষাকৃত তারুণ্যনির্ভর ও ক্লিন ইমেজের। রোজার ঈদের পরপরই দলে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে। আপাতত ক্ষমতায় যাওয়া নয়, দল গোছানোর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন খালেদা জিয়া। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।  

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগামী দিনে দলে যে কী ধরনের সংস্কার আসবে তা এ মহূর্তে জানি না। যে ধরনের পরিবর্তন আসবে তা হয়তো আমরা চিন্তাই করতে পারছি না। তবে দলে আমূল পুনর্গঠন করার ইঙ্গিত পাচ্ছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা মুক্তি পাওয়ার পরপরই দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।’ 

সূত্রের ভাষ্যমতে, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দলকে একটি শক্ত অবস্থানে দাঁড় করানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবেন খালেদা জিয়া। ঘনিষ্ঠদের তিনি বলেছেন, তার জীবনে আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। জনগণের সমর্থন নিয়ে তিনবার দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানের স্ত্রী হিসেবেও গর্ববোধ করেন তিনি। চলমান কঠিন রাজনৈতিক মুহূর্তেও সারা দেশে নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছেন। তাই শেষ বেলায় এসে নির্মোহভাবে দলকে গুছিয়ে মরহুম স্বামী জিয়াউর রহমানের আদর্শকে উজ্জীবিত করে রাখার ইচ্ছা তার। সূত্রে জানা গেছে, ঈদের পরপরই বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি দেওয়া হবে। এ নিয়ে দুই সংগঠনের নেতাদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপও শুরু হয়েছে। এরপর ঢাকা মহানগরী বিএনপির কমিটি গঠন করা হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে আলাদা কমিটি দেওয়া হবে। পাশাপাশি বিএনপির জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নতুন করে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। মাঠ পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিত্তে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের। এরপর আগামী নভেম্বরের মধ্যে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির কাউন্সিল করা হবে। সব কমিটিই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে করার চিন্তা-ভাবনা বিএনপি-প্রধানের। 

দল পুনর্গঠনের কথা জানিয়ে দিয়ে সম্প্রতি এক মতবিনিময় সভায় খালেদা জিয়া নিজেই বলেছেন, ‘আমাদের দলের পুনর্গঠনে যেতে হবে। ইতিমধ্যে আমরা সে প্রক্রিয়াও শুরু করেছি। যারা ত্যাগী-পরীক্ষিত, দলের বিপদের সময়ে যারা কাজ করেছেন তাদের কমিটিতে আনা হবে। তাদের মূল্যায়ন করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই যারা অসুস্থ ও বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন তাদের জায়গাও পূরণ করা হবে।’ জানা যায়, বিগত তিন মাসের আন্দোলন কেন্দ্র থেকে পর্যবেক্ষণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন তিনি। একইভাবে লন্ডন থেকেও মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তারেক রহমান। আন্দোলনে কার কী ভূমিকা ছিল, তাও নখদর্পণে ছিল বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের। তাই আগামী দিনে মাঠ পর্যায়ের নেতৃত্ব বাছাই করা কঠিন হবে না বলে জানা গেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দল পুনর্গঠন করা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ঈদের পর দল পুনর্গঠন হবে। যারা রাজপথের আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেছেন, দলের জন্য খেটেছেন তাদের অবশ্যই যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে।’ সূত্রমতে, বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্দেশে মাঠ পর্যায়ে আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাদের বিরুদ্ধে কার কত মামলা হয়েছে, কে গ্রেফতার আছেন তারও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আবার বড় পদে থেকে কারা মাঠে নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তাদেরও পৃথক তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। দল পুনর্গঠনে এ দুই তালিকা ধরেই এগোবেন খালেদা জিয়া। মাঠ পর্যায় থেকে রিপোর্ট আসা শুরুও হয়েছে। সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে ঢাকা মহানগরীর সব তথ্য বেগম জিয়ার কাছে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে কার কী ভূমিকা ছিল, তা যাচাই করেই নতুন কমিটিতে জায়গা করে দেওয়া হবে বলে দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বলছেন, ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জেলা-উপজেলার নেতা-কর্মীরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। শাস্তির খগড় এসেছে তৃণমূলেই। কেন্দ্রেই শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতি অনুরোধ জানান তারা। এ ক্ষেত্রে কোনো দিকে না তাকিয়ে বেগম জিয়াকে নির্মোহভাবে দল গোছানোর পরামর্শ তাদের। ’৯০-পূর্ববর্তী ‘আপসহীন’ ভূমিকায় বেগম জিয়াকে দেখতে চান মাঠের নেতা-কর্মীরা। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, ‘বিএনপির নির্বাহী কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। তাই নতুন নেতৃত্ব বাছাই করা জরুরি। আমার মতামত হচ্ছে, ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যন্ত নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে এবং কাউন্সিল করে ভোটাভুটির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। তৃণমূলের কমিটি করতে যাদের জেলার আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব করা হবে তারা কোনোভাবেই নতুন কমিটির সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক হতে পারবেন না। এভাবেই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতৃত্ব বাছাই করা গেলে দলকে একটি শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।’

সর্বশেষ খবর