বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

নেত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা, দলের চাঁদা দেন না বিএনপি নেতারা

নেত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা, দলের চাঁদা দেন না বিএনপি নেতারা

মাসিক চাঁদা পরিশোধ করতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে নির্বাহী কমিটির সদস্যদের চার দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিএনপি প্রধানের নির্দেশনা সংবলিত চিঠি উপেক্ষিত হয়েছে বারবার। অধিকাংশ নেতা এ চিঠির গুরুত্বই দিচ্ছেন না। অবশ্য গুটিকয়েক নেতা চিঠির সাড়া দিয়ে সব বকেয়া পরিশোধও করেছেন। আবার এমন অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত এক মাসের চাঁদাও পরিশোধ করেননি। এভাবে নেতাদের বকেয়া চাঁদার পরিমাণ প্রায় অর্ধকোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ কারণে দল পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি। দৈনন্দিন খরচ চালাতে হয় কোনো ব্যক্তির নির্ভরতায়। এবার ঈদের বেতন-বোনাস নিয়েও শঙ্কায় নয়াপল্টন  কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের স্টাফরা। নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ৩৮৬ জন। এর বাইরে খালেদা জিয়ার ৩৮ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদও রয়েছে।
সর্বশেষ গত ৯ জুন বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন স্বাক্ষরিত চিঠি দেওয়া হয় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের। চিঠিতে বলা হয়, চেয়ারপারসনের নির্দেশে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। বলা হয়, ‘দলীয় ব্যয় নির্বাহের প্রধান উৎস নেতাদের প্রদেয় টাকা। ইতিমধ্যে আপনাদের অনেকেই যথাসময়ে চাঁদা পরিশোধ করেছেন, আবার কেউ আংশিক পরিশোধ করেছেন। কেউ কোনো টাকাই দেননি। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় কার্যালয়ের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড ও কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে।’
সূত্র জানায়, যে নেতারা বকেয়া টাকা পরিশোধ করবে না-তাদের লাল তালিকাভুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। পবিত্র ওমরাহ পালনে সৌদি যাওয়ার আগে তিনি এ তালিকা দেখতে চান। সংশ্লিষ্ট নেতাকে এ সম্পর্কে অবহিত করতে বলা হয়েছে। আগামীতে পদ-পদবি ও সংসদ নির্বাচনে এই লাল তালিকাভুক্তি নেতাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে। প্রয়োজনে তাদের পদ-পদবি থেকে বঞ্চিতও করা হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন সংশ্লিষ্ট নেতাদের বলেছেন, যারা সামান্য কিছু টাকা পার্টির ফান্ডে দিতে পারবেন না তাদের দলে থাকার কোনো দরকার নেই। এ প্রসঙ্গে বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘গেল কয়েক মাস ধরে নেতাদের ওপর নানা ধরনের খড়গ ঝুলছে। অনেকেই জেলে আছেন। মামলার হুলিয়া মাথায় নিয়ে কেউ কেউ এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন। চিঠি দেওয়ার পর চাঁদাও পরিশোধ করছেন অনেকে। আশা করছি, ঈদের আগেই সব বকেয়া টাকা উঠে যাবে। এতে দলের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে সহজ হবে।’ দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সব নেতারাই তাদের বকেয়া পরিশোধ করে থাকেন। পার্টি অফিসেও নিয়মিত যাওয়া হয় না। ছয় মাস কিংবা এক বছরের টাকাও একসঙ্গে পরিশোধ করা হয়। তবে দল পরিচালনার জন্য অবশ্যই টাকা দরকার। এ জন্য মাসিক চাঁদাও নিয়মিত হওয়া উচিত।’ জানা যায়, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১ হাজার, সংসদ সদস্যদের ১ হাজার, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টাদের ৫০০, সম্পাদকদের ৩০০ এবং নির্বাহী কমিটির সদস্যদের ১০০ টাকা। এ পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকারসহ গুটি কয়েকজন নেতার মাসিক চাঁদা পরিশোধিত। এর মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের প্রায় ৯ লাখ টাকা বকেয়া। ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের ১০ লাখ টাকা, সম্পাদকদের ৯ লাখ টাকা, সদস্যদের ৯ লাখ টাকা এবং সাবেক এমপিদের কাছে ১২ লাখ টাকার মতো বকেয়া। জানা যায়, নয়াপল্টন কার্যালয়ে ১৪ জন স্টাফ রয়েছে। তাদের মাসিক বেতন প্রায় পৌনে ২ লাখ টাকা। এ ছাড়া মাসিক অফিস খরচ প্রায় অর্ধলাখ টাকা। একইভাবে গুলশান কার্যালয়েও স্টাফসহ অফিস খরচও প্রায় ৩ লাখ টাকা। নেতাদের মাসিক চাঁদা থেকেই বেতন ও অফিস খরচ পরিশোধ করা হয়। জানা যায়, নবম সংসদে পাঁচ বছর এমপি থাকাকালে অধিকাংশ নেতাই তাদের মাসিক চাঁদা পরিশোধ করেননি। এ কারণে সাবেক এমপিদেরই বকেয়া সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে রয়েছেন- সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, এ কে এম হাফিজুর রহমান, আবদুল মমিন তালুকদার, জেড আই এম মোস্তফা আলী, রুমানা মাহমুদ, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, মেসবাহ উদ্দিন ফরহাদ, মজিবুর রহমান সরোয়ার, এম কে আনোয়ার, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মাহবুব উদ্দিন খোকন, জয়নুল আবেদিন ফারুক, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, আবুল খায়ের ভূইয়া, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আশরাফ উদ্দিন নিজান, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নিলোফার চৌধুরী মনি, রাশেদা বেগম হীরা, রেহেনা আক্তার রানু, সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া, সুজাত উল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ। দলের প্রায় সব স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদকসহ নির্বাহী কমিটির সদস্যদেরও বকেয়া রয়েছে কম বেশি। নির্বাহী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘মামলার কারণে দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে। পার্টি অফিসে যাওয়ার কোনো সুযোগই নেই। তাই যথাসময়ে টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। তবে সময়সুযোগে সব টাকা একসঙ্গে পরিশোধ করা হবে।’

 

সর্বশেষ খবর