বুধবার, ৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা
জরুরি বৈঠকে নেতাদের ক্ষুব্ধ খালেদার প্রশ্ন

বিএনপি কি হাসিনার আদর্শে চলে?

বিএনপি কি হাসিনার আদর্শে চলে?

শীর্ষ নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিন মাস গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকার পর সোমবার প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকে সিনিয়র নেতাদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন বিএনপিপ্রধান। জিয়ার আদর্শ নিয়ে বিভিন্ন সময় করা কয়েকজন নেতার মন্তব্যে বেগম জিয়া বলেন, বিএনপি শহীদ জিয়ার আদর্শে নেই, তাহলে কার আদর্শে চলে? তাহলে কি হাসিনার আদর্শে চলে? অবশ্যই বিএনপি জিয়ার আদর্শেই চলছে। এটা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোনো সুযোগ নেই। দলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন না।
সোমবার রাতে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাত সোয়া ৯টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক হয়। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবরা বৈঠকে অংশ নেন। মামলা ও গ্রেফতারের হুলিয়া থাকায় অনেক নেতাই বৈঠকে অংশ নিতে পারেননি। বৈঠকে অংশ নেওয়া স্থায়ী কমিটি ও ভাইস চেয়ারম্যান পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, নেতাদের উদ্দেশে বিএনপিপ্রধান বলেন, যারা জিয়ার আদর্শ নিয়ে আজ বড় বড় কথা বলছেন, তারা কোন আর্দশে আছেন? দলে থেকে বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তাদের দলে থাকতে বলেছে কে? ভালো না লাগলে আপনারা চলে যান? বিএনপি ছেড়ে হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) মন্ত্রী-এমপি হয়ে যান। তাদের তো কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না। বিএনপিতে থেকে দলের বিরুদ্ধে কথা বলবেন, তা সহ্য করা হবে না। আমি নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি, যারা এমন করবে-তাদের যেখানে পাবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যারা বলেছেন, এই বিএনপিকে দিয়ে কিছু হবে না। তাহলে বলেন, কোন বিএনপিকে দিয়ে হবে? কেন আন্দোলন সফল হয়নি? তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? কে কোথায় ছিলেন, আমি সব জানি। আন্দোলন জোরদারে আপনাদের ভূমিকা কী ছিল এবং দলের প্রতি আপনাদের অবদানই বা কী? ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়ার একের পর এক প্রশ্নের মুখে বৈঠকে উপস্থিত সব নেতাই ছিলেন নিশ্চুপ। এ সময় কেউ মুখ খোলার সাহস পাননি। বেগম জিয়া বলেন, ঈদের পর আমি দল পুনর্গঠন করব। সেখানে যারা বিগত আন্দোলন সংগ্রামে থেকেছেন তাদেরই মূল্যায়ন করা হবে। এখানে কোনো আপস নয়। নেতাদের উদ্দেশে বলেন, বিএনপির সময় দুর্নীতি নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। কোনো দুর্নীতিই প্রমাণ হয়নি। আজ যারা হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করছেন তাদের নিয়ে কথা বলছেন না কেন? এই যে এক মন্ত্রী গম কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত-তা নিয়েও তো আপনারা কোনো কথা বলছেন না। আমি একাই শুধু বলে যাচ্ছি। সরকারের দুর্নীতি, বিচারবিভাগে দলীয়করণ নিয়ে শক্তভাবে কথা বলতে হবে। বিচারবিভাগ নিয়ে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বেগম জিয়া। এ সময় কয়েকজন আইনজীবী নেতা কথা বলতে চাইলে বিএনপি প্রধান তাদের থামিয়ে দেন। সিনিয়র অনেক নেতার প্রতি অনাস্থার কথাও বলেন বেগম জিয়া। তিনি বলেন, আমি আপনাদের ওপর কোনো ভরসা করতে পারি না। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ওপর আমার যথেষ্ট আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। তাই এবার নেতৃত্বেও আমি সেভাবেই গড়ে তুলব। নেতাদের কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। দলের যে কোনো বিষয় নিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে কথা বলারও নির্দেশ দেন তিনি। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের বড় অংশ জুড়েই বেগম জিয়া কথা বলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, দলীয় ফোরামের বাইরে বেফাঁস বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন খালেদা জিয়া। দলীয় ফোরামে সব কথা বলার অনুরোধ করে তিনি বলেন, দলের কোনো ভুল থাকলে তা নিরসন করা হবে। ভুল বোঝাবুঝি ও বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। বৈঠকের শুরুতে বক্তব্য দেন নজরুল ইসলাম খান। এরপর পর্যায়ক্রমে কম বেশি সবাই কথা বলেন। ফাঁকে ফাঁকে বেগম জিয়াও কথা বলেন। বৈঠক শেষে দীর্ঘ সময় কথা বলেন তিনি। জানা যায়, ক্ষুব্ধ হলেও খালেদা জিয়া শেষ পর্যায়ে এসে নেতাদের সঙ্গে হাসিখুশিতে কথা বলেন। পবিত্র ওমরা পালনে সৌদি আরব যাওয়ার বিষয়টিও নেতাদের জানান। নেতাদের দোয়া চাওয়ার পাশাপাশি মক্কা-মদিনায় গিয়ে দেশের জনগণ, দল ও দলের নেতা-কর্মীদের জন্য দোয়া করবেন বলে জানান তিনি।  দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জেনারেল. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, বেগম সারোয়ারী রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল হালিম, শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব আহমেদ আজম খান, মো. শাহজাহান, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর