শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

এসআই নিয়োগে তদবির বাণিজ্য

অতিষ্ঠ পুলিশের নীতিনির্ধারক মহল

এসআই নিয়োগে তদবির বাণিজ্য

এসআই (উপপরিদর্শক) পদে নিয়োগের তদবিরে অতিষ্ঠ পুলিশ প্রশাসন। সরকারি দলের এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে পাতি নেতারাও তদবির নিয়ে ছুটছেন রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয় থেকে শুরু করে পুলিশ সদর দফতর পর্যন্ত। তদবিরে অতিষ্ঠ হয়ে কোনো কোনো রেঞ্জ ডিআইজি এমপিদের ফোন ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনি এক পরিস্থিতিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক গতকাল বিবৃতি দিয়েছেন। বলেছেন, এসআই নিয়োগে তদবির করা হলে তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। কোনোভাবেই কোনো তদবির বরদাস্ত করা হবে না। জানা গেছে, সম্প্রতি পুলিশ বাহিনীতে এসআই পদে প্রায় এক হাজার লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ সদর দফতর। আর এ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও নেতারা তদবির বাণিজ্যে নেমে পড়েছেন।
সূত্র জানায়, এমপি ও নেতারা একটি পদের জন্য একেক জন প্রার্থীর কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তাদের নিয়োগের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এমন তথ্য পেয়ে তা পুলিশপ্রধান এ কে এম শহীদুল হককে অবহিত করেছেন।
পুলিশপ্রধান এ ব্যাপারে গতকাল একটি বিবৃতি পাঠিয়েছেন সংবাদপত্র অফিসে।   

বিবৃতিতে তিনি বলেন, পুলিশের চলমান সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) পদে নিয়োগ সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, মেধা ও যোগ্যতা ভিত্তিক হচ্ছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি বা মহলের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই। প্রতারক বা দালালের খপ্পরে না পড়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান তিনি। পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, জননিরাপত্তা বিধানে সৎ, মেধাবী, কর্তব্যপরায়ণ এবং দিনরাত মানুষের সেবা প্রদানের মতো পরিশ্রমী অফিসার একান্ত প্রয়োজন। তাই নিয়োগ প্রক্রিয়া হবে সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক। কারও দ্বারা প্রলুব্ধ না হতে তিনি সব চাকরিপ্রত্যাশীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যদি কোনো প্রার্থী কারও সঙ্গে কোনো অনৈতিক লেনদেন করেন বা তদবির করেন তাহলে সেটা তার অযোগ্যতা হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অনৈতিক লেনদেন ফৌজদারি অপরাধ। দালাল বা প্রতারকদের সম্পর্কে অভিযোগ বা তথ্য প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট থানা বা এসপি অফিসকে অবহিত করার জন্যও আইজি অনুরোধ করেন। ২৭ জুলাই এসআই পদে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক বাছাই ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট ২৬ হাজার ৪৫৭ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করেন। ৭, ৮ ও ৯ আগস্ট লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ভেরিফিকেশন-সাপেক্ষে এসআই পদে প্রাথমিক নিয়োগ দেওয়া হবে। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ৬৪ জেলায় সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে ১০ হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই সময়ও নজিরবিহীন তদবির ও ঘুষ বাণিজ্য হয় বলে অভিযোগ ওঠে।  

এক এলাকার প্রার্থীকে অন্য এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা দেখিয়ে ওই এলাকার কোটায় তাদের নিয়োগ চূড়ান্ত করার মতো জালিয়াতির ঘটনাও ঘটে। কয়েকজন প্রার্থীর অভিভাবক জানান, স্থানীয় এমপির ডিও লেটার আনতে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। সে অনুযায়ী তাদের চাকরির শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, জেলার মন্ত্রী, মন্ত্রী মর্যাদার কর্মকর্তা, এমপি, সরকারি দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এসআই পদে নিয়োগের জন্য এলাকাভিত্তিক তালিকা দিচ্ছেন। কোনো কোনো জেলায় জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের আধাসরকারি পত্রে নিয়োগের জন্য তালিকা দিয়ে এমপিরা রেঞ্জ ডিআইজদের নির্দেশ দিচ্ছেন। এসপিদের ফ্যাক্সেও পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ডিও লেটারের তালিকা। এ ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগের মন্ত্রী এবং কর্মকর্তারাও পাঠাচ্ছেন তালিকা। সূত্র জানায়, চাকরির প্রত্যাশায় প্রার্থীরা ধরনা দিচ্ছেন এমপি-মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ লোকদের বাসায়। নিয়োগের নিশ্চয়তা দিয়ে তারাই ঘুষের দরদাম হাঁকাচ্ছেন। একটি রেঞ্জের ডিআইজি বলেন, এ ধরনের নিয়োগে রাজনৈতিক তদবির থাকেই। কিন্তু এবার সেই সীমা অতিক্রম করেছে। এতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তদবির অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হলে যোগ্য লোকেরা নিয়োগে বঞ্চিত হবেন।

সর্বশেষ খবর