শিরোনাম
বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

হিটলিস্টে এখন ৭৭ জন

পাঁচ দিনেও ধরা পড়েনি নিলয়ের খুনিরা, এরপর টার্গেট কে

হিটলিস্টে এখন ৭৭ জন

পাঁচ দিনেও ক্লু চিহ্নিত হয়নি ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় নীল হত্যাকাণ্ডের। এখনো শুধু ব্লগিংকে কেন্দ্র করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে এমন ধারণা সামনে রেখেই চলছে তদন্ত কার্যক্রম। তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের ধারণা, নিষিদ্ধ-ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্যরাই চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত। অন্যদিকে হিটলিস্টে থাকা ৭৭ জন ব্লগার প্রতিমুহূর্তে আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তারা বলছেন, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্লগারদের পেছন থেকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিটিতেই টার্গেট ছিল মস্তিষ্ক ও মাথা। পেছন থেকে কোপানো হয়, যাতে চেহারা না দেখা যায়।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোনো ব্লগার যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন তাহলে তিনি যেন সংশ্লিষ্ট থানায় বিষয়টি অবহিত করেন। তখন আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনলাইন ব্লগারদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ২০১৩ সালে ৮৪ জনের একটি তালিকা দিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। তবে এর বাইরেও বিভিন্ন সময় ফেসবুক ও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ব্লগারদের তালিকা প্রকাশ করেছে উগ্রপন্থিরা। তালিকায় অনেক ব্লগারের ছদ্মনাম থাকায় তাদের শনাক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছেন গোয়েন্দারা। তবে তালিকায় থাকা সব অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের দিন কাটছে চরম আতঙ্কের মধ্য দিয়ে। সর্বশেষ ৭ আগস্ট নিলয় হত্যার পর এ আতঙ্কের মাত্রা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশ না করা কয়েকজন ব্লগার। তাদের একটাই প্রশ্ন, এরপর টার্গেট কে?
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, প্রতিনিয়তই পরিবর্তন-পরিবর্ধন হচ্ছে এ তালিকা। হিটলিস্টে ঢুকছে নতুন নতুন নাম। কার আগে কাকে আক্রমণ করা হবে সে লক্ষ্যও পরিবর্তিত হচ্ছে দিন দিন। সবার সঙ্গে লেগে থেকে তো আর নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এ বিষয়টি নিয়ে তারা অনেক সিরিয়াস।
১২ মে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সিলেটের সুবিদবাজার এলাকায় নিজ বাসার কিছু দূরে নৃশংসভাবে খুন হন ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী অনন্ত বিজয় দাশ। ২৬ ফেব্রুয়ারি খুন হন ব্লগার অভিজিৎ রায়। ৩০ মার্চ খুন হন ওয়াশিকুর রহমান বাবু। এভাবে গত এক বছরে খুন হয়েছেন ১০ জন ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, অ্যাক্টিভিস্টদের সমর্থক ও সহযোগী। এর মধ্যে সাতজন সরাসরি ব্লগিংয়ে জড়িত ছিলেন এবং তাদের সবাই হিটলিস্টেড। তবে হত্যার শিকার সব ব্লগারই যুক্ত ছিলেন শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে।
জানা যায়, বাংলাদেশে ব্লগে লেখার সূত্র ধরে উগ্রবাদীদের হিটলিস্টে থাকাদের মধ্যে প্রথমবারের মতো খুনের ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালে। ওই বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি খুন হন ব্লগার রাজীব হায়দার শোভন। তিনি ‘থাবা বাবা’ নামের ব্লগে লেখালেখি করতেন। একই দিন ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন অগ্রণী ব্যাংকের কর্মী জাফর মুন্সি। তিনি এর আগের দিন মতিঝিলে জামায়াত-শিবির কর্মীদের আক্রমণ প্রতিহত করেছিলেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় খুন হন ব্লগার মামুন হোসেন। ১ মার্চ খুন হন সিলেটের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী জগজ্জ্যোতি তালুকদার। ৯ এপ্রিল বুয়েটের শহীদ নজরুল ইসলাম হলে ওই প্রতিষ্ঠানেরই শিক্ষার্থী হেফাজতে ইসলামের সমর্থক মেজবাহ উদ্দিনের চাপাতির কোপে গুরুতর আহত হন আরিফ রায়হান দীপ। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে আমবাগান গ্রামের ফ্ল্যাটে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয় ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও মুক্তচিন্তার সমর্থক আশরাফুল ইসলামকে। ৯ ডিসেম্বর বগুড়া জেলা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের যুগ্ম-সম্পাদক ও গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক প্রভাষক জিয়াউদ্দিন জাকারিয়া বাবুকে পেছন থেকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সর্বশেষ চলতি বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে মাথায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় বিজ্ঞান-লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ রায়কে। একই সময় আহত হন আরেক ব্লগার ও অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। খুনের ঘটনার বাইরে চাপাতি দিয়ে কোপানোও হয়েছে কয়েকজনকে। এর মধ্যে দুই দফায় কোপানো হয় ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনকে। তাকে ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর উত্তরায় নিজ কার্যালয়ের সামনে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়। ওই বছরের ৭ মার্চ রাতে মিরপুরের পূরবী সিনেমা হলের কাছে কুপিয়ে জখম করা হয় ব্লগার সানিউর রহমানকে।
আলামত সিআইডিতে : এদিকে গতকাল নিলয় খুনের আলামত আদালতের অনুমতি নিয়ে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদন তদন্তে সহযোগিতা করবে। ডিবি সূত্র জানায়, নিলয় হত্যাকাণ্ডের পর একটি রক্তমাখা টিশার্ট, একটি গামছা, একটি বালতিসহ বেশ কয়েকটি আলামত ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। রক্তমাখা টিশার্ট ও গামছা খুনিদের কোনো একজনের বলে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের সময় টিশার্টে রক্ত লাগায় তা সিঁড়িতে নামার সময় পরিবর্তন করে ফেলে যায় খুনিরা।
বরিশালে ছয়জনকে হুমকি : নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল জানান, বরিশালের ছয়জন কবি ও ব্লগারকে ইসলামবিরোধী আখ্যায়িত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘আনসার বিডি বরিশাল বিভাগীয় টিম’ নামের একটি ব্লগ থেকে তাদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। সোমবার রাতে তাদের ফেসবুকের ইনবক্সে এবং আনসার বিডি বরিশাল বিভাগীয় টিম নামের একটি ব্লগে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। হুমকিপ্রাপ্তরা হলেন- কবি ও লেখক হেনরী স্বপন, কবি তুহিন দাস, কবি সৈয়দ মেহেদী হাসান, গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী নজরুল বিশ্বাস, ব্লগার ও জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক প্রীতম চৌধুরী এবং ব্লগার চারু তুহিন।

সর্বশেষ খবর