শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সাইলেন্সারের বিকট শব্দে আতঙ্ক

সাঈদুর রহমান রিমন

বড়লোকের বখে যাওয়া সন্তানদের গাড়ি ও মোটরসাইকেলের নানারকম কসরতে নগরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। নিজেদের গাড়ির সাইলেন্সার পাইপ খুলে রেখে বিকট শব্দ তুলে নগরময় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। আবার কেউ কেউ গাড়িতে ডিজিটাল হর্ন লাগিয়ে কুরুচিপূর্ণ নানা শব্দ বাজিয়ে চলছে। মোটরসাইকেল বা প্রাইভেটকারে কুকুরের তীব্র ‘ঘেউ ঘেউ’আওয়াজ, কেউবা ধমকের শব্দ রেকর্ডিং করে তা অনবরত বাজিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত করে তুলছে। রাস্তায় চলন্ত গাড়ির ঠিক পেছনে পৌঁছেই এমন সব বিকট শব্দ-ছড়ানো হর্ন বাজিয়ে সামনের গাড়ির চালককে হঠাৎ তটস্থ করে দিচ্ছেন তারা।

গাড়ির ব্রেকের সঙ্গে সংযোজন হয়েছে এ ধরনের নানা ব্রেক সাউন্ডও। আছে সাইড ইন্ডিকেটর সাউন্ড। আবার কিছু সংখ্যক মোটরসাইকেল ও গাড়িতে ক্ষিপ্ত কুকুরের বিকট খ্যাক খ্যাক শব্দ সংযোজন করা রয়েছে। যে কারোর আশপাশে এসব হর্ন হঠাৎ বেজে উঠলে আঁতকে উঠেন মানুষজন, অন্য গাড়ির চালকরাও হকচকিত হয়ে উঠেন মুহূর্তেই।

সংঘবদ্ধ এ চক্রের সদস্যরা বিকাল গড়াতেই বিভিন্ন ব্যস্ততম রাস্তায় কার রেসিংয়ে মত্ত থাকছে, এতে প্রায়ই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। সন্ধ্যা পেরোলে গাড়িচক্রের সদস্যরা ছিনতাইসহ নানারকম অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে হাতিরঝিল, গুলশান-বনানী, উত্তরা ও বিমানবন্দর সড়কে তাদের দৌরাÍ্য লক্ষ্য করা যায়। তারা দিনের বেলায় ব্যস্ত থাকছে তরুণী উত্ত্যক্তকরণের মতো অপরাধে। মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও প্রাইভেটকারে সংযোজিত নানা কুরুচিপূর্ণ ‘হর্নের মাধ্যমে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের বিরক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নব্য রোমিও’রা ইভ টিজিং সংক্রান্ত কঠোর আইন থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি তরুণীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই বিকল্প হর্ন ব্যবস্থা চালু করেছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। প্রত্যক্ষদর্শী ও উত্ত্যক্ততার শিকার স্কুল-কলেজ পড়–য়া একাধিক ছাত্রী জানান, স্কুলে প্রবেশ ও ছুটির সময়ই বখাটে শ্রেণির একদল যুবক গাড়ি, মোটরসাইকেল নিয়ে নিয়ে স্কুল গেটের আশপাশে জড়ো হয়। তারা আগের মতো বিশ্রী অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শনসহ নিজেদের মুখে বাজে টাইপের কোনো টোন না করলেও তাদের ব্যবহƒত গাড়িতে ইভ টিজিং উপকরণ সংযুক্ত করা আছে। ডিভাইসের মাধ্যমে যে কোনো অরুচিকর আহ্বান সংবলিত মন্তব্য রেকর্ড করে তা উচ্চৈঃস্বরে বাজানো হচ্ছে অহরহ। বিভিন্ন নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের প্রধান গেটে বা এর আশপাশে ‘ইভ টিজিং টোনযুক্ত গাড়ি ও সংশ্লিষ্ট আরোহীদের’ আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

২০১৩ সালে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ও হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে সরকারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ও হাইড্রোলিক হর্ন কেন বন্ধ করা হবে না সেই মর্মে রুল জারি করা হয়। এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। ডিএমপি অ্যাক্টের ১৩৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যদি মোটরযানে এমন ধরনের হর্ন বা শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্র সংযোজন বা ব্যবহার করে তা হলে নির্দিষ্ট সর্বোচ্চ একশ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। কিন্তু এ আইনের বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে। তাছাড়া সীমিত অঙ্কের জরিমানার বিধান থাকায় ধনীর দুলালরা এসবকে পাত্তাও দেয় না।

এদিকে ডিএমপি অ্যাক্টের ১৪২ ধারায় রয়েছে, নির্ধারিত গতির চেয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাইলে সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড কিংবা সর্বাধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং তাহার ড্রাইভিং লাইসেন্স অনধিক এক মাস মেয়াদের জন্য সাসপেন্ড করা হইবে। কিন্তু ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ থেকে এই ধারায় কাউকে অভিযুক্ত করার নজির নেই বললেই চলে। ফলে গাড়ির বিপজ্জনক রেসিং বন্ধ হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক (উত্তর) জোনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, রাস্তাঘাটে বিরক্ত সৃষ্টিকারী শব্দ-ধোঁয়ার গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রেও সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মোটরযান অধ্যাদেশে মামলা, জরিমানা আদায় ও আদালতে সোপর্দ করারও বিধান আছে। ইদানীং রাস্তাঘাটে বিদঘুটে শব্দযুক্ত হর্ন ব্যবহার-আধিক্যের কথা স্বীকার করে ওই ট্রাফিক কর্মকর্তা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলেই উত্ত্যক্তকারী হর্ন ব্যবহারের বিরুদ্ধে ডিএমপি এলাকায় পুলিশের বিশেষ অভিযান চালানো হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর