শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ডিজেলের দাম না কমায় কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত

জিন্নাতুন নূর

ডিজেলের দাম না কমায় কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত

আবু আহমেদ

বাংলাদেশে আমদানি করা পেট্রলজাত পণ্যের দাম না কমানোয় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। বিশ্ববাজারে যেখানে ডিজেল বা তেলের দাম কমানো হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ডিজেল বা তেলের মূল্য নির্ধারণে ভুল নীতির কারণে কৃষকরা এখন ধান উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। কৃষকরা ৬৮ টাকার বদলে যদি ৫০ টাকায় তেল কিনতে  পারতেন তাহলে বর্তমানের চেয়ে আরও বেশি ধান উৎপাদন করতে উৎসাহিত হতেন। কারণ তারা যে দামে ধান উৎপাদন করছেন, বাজারে এর চেয়ে কম মূল্য পাচ্ছেন। অথচ শুধু তেলের দাম কমালেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে হাজার হাজার কোটি টাকার লাভ হতো। কিন্তু বিপিসি নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য ভুল নীতি গ্রহণ করায় তা হচ্ছে না। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, কৃষকরা তাদের পণ্য উৎপাদনের জন্য মূলত ডিজেল-কেরোসিনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে দেশে আমদানি করা তেলের দাম না কমানোর কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তেলের দাম না কমানোয় একদিকে কৃষকরা যেমন উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে পণ্য পরিবহন ব্যয়ও তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অথচ দাম কমালে কৃষক লাভবান হতেন। আবু আহমেদ বলেন, বিপিসি তার লোকসান কাটানোর জন্য তেলের দাম না কমানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বা এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা যে তর্ক করছেন, তা কোনোভাবেই আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিপিসিকে এটি বুঝতে হবে যে তেলের দাম কমিয়ে, ভোক্তার চাহিদা বৃদ্ধি করেও তারা লাভ করতে পারবেন। আমি মনে করি, লোকসান কাটানোর জন্য বিপিসির তেলের দাম না কমানোর যে সিদ্ধান্ত, তা একেবারেই অযৌক্তিক। কিন্তু যেহেতু প্রধানমন্ত্রী তেলের দাম না কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সে কারণে তার কথার ওপর আর কেউ কথা বলবেন না। অথচ তেলের দাম কমিয়ে দিলে চাহিদা বৃদ্ধি পেলে প্রতি ইউনিটে বিপিসি যে লাভ করতে পারবে, এই সহজ বিষয়টি তারা বুঝতে চাইছে না। অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেন, বিপিসি এখন যে দামে তেল বিক্রি করছে তা মোটেও যৌক্তিক নয়। এখন গ্যাস স্টেশনগুলোতে আমরা গাড়িগুলোকে গ্যাস নেওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। অথচ আমাদের গ্যাসের মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এর ফলে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। কারণ গ্যাস সম্পদ আগেই ফুরিয়ে গেলে ভবিষ্যতে আমরা তা কাজে লাগাতে পারব না। গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের ব্যবহারের বিকল্পে এ গ্যাস আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সার কারখানায় ব্যবহার করতে পারি। এ জন্য আমার যুক্তি হলো, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করে পেট্রলজাত পণ্য, যেমন অকটেন-ডিজেলের মূল্য কমানো। এ জন্য বিপিসি কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে আলোচনা করে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে হবে। আবু আহমেদ বলেন, সঠিক নীতি গ্রহণ করলে বিপিসি যেখানে চার বছরে তাদের ভর্তুকি কমাতে সক্ষম, সেখানে ভুল নীতি গ্রহণের ফলে আগামী ১০ বছরেও প্রতিষ্ঠানটি তার ভর্তুকি কমাতে পারবে না বলে আশঙ্কা করছি। তেলের দাম না কমানোর কারণে আমরা এখন দেখি যে পেট্রলপাম্পগুলো খালি থাকে। অথচ দাম কমালে তেলের চাহিদা বাড়ত। এতে বিপিসিও লাভবান হতো। অর্থাৎ বেশি ভলিউমে আমদানি করা পেট্রলজাত পণ্য বিক্রি করলেই বিপিসি লাভ করতে পারবে। এই অর্থনীতিবিদের মতে, বিপিসির লোকসান কাটাতে হলে এখন তেলের দাম কমিয়ে এর চাহিদা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে তেলের বিক্রিও বাড়াতে হবে। এ জন্য বিপিসির তিনটি কোম্পানিকে (পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা) মার্কেটিং করতে হবে। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতি রক্ষা, গ্যাসের অপব্যবহার রোধ করা এবং কৃষকদের ক্ষতি কমাতে তেলের দাম কমানোর বিকল্প নেই।

 

সর্বশেষ খবর