মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আন্তর্জাতিক কলরেট বাড়লেও বাড়তি টাকা পাচ্ছে না সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক কলরেট বাড়লেও বাড়তি টাকা পাচ্ছে না সরকার

আন্তর্জাতিক কলরেট বাড়লেও বাড়তি আয়ের টাকা পাচ্ছে না সরকার। আয় ভাগাভাগির বিষয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে সময়মতো না জানানোর কারণেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে সরকার প্রতিদিন প্রায় ৫৫ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এ নিয়ে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকেই (বিটিআরসি) দায়ী করছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, প্রায় এক মাস আগে বিদেশ থেকে আসা আন্তর্জাতিক কল রেট দেড় সেন্ট থেকে বেড়ে দুই সেন্ট হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দাবি, কলরেট বাড়ানোর কোনো তথ্য প্রাথমিকভাবে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়নি। ফলে আয় ভাগাভাগির বিষয়টিও মন্ত্রণালয় অবগত ছিল না। আর সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে একচেটিয়া লাভ করছে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটররা। কল রেট দুই সেন্ট নির্ধারিত হওয়ায় বাড়তি আয়ের পুরোটাই নিজেদের পকেটে তুলে নিচ্ছে তারা।

এদিকে সরকারের আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বিটিআরসি। চিঠিতে বলা হয়েছে, পরীক্ষামূলক নিয়ম অনুযায়ী আন্তর্জাতিক কল পরিচালনা কার্যক্রম ২৪ জুন শুরুর পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটি ৫০ লাখ মিনিট কল আসত। কিন্তু আইজিডব্লিউ অপারেটররা কল রেট বাড়ানোর পর দেশে আন্তর্জাতিক কলের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৩০ লাখ মিনিট। রাজস্ব ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করলেও আয়ের ভাগাভাগির জন্য টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে দায়ী করে বিটিআরসি বলছে, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক কল রেট বিষয়ে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, এতে সর্বনিম্ন হারে রাজস্ব ভাগাভাগির সুনির্দিষ্ট সরকারি নির্দেশনা ছিল। এখন সরকার যদি ভিন্ন নির্দেশনা দেয়, তাহলে কমিশন সেভাবেই কাজ করবে। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক কল আনার বর্তমান পরীক্ষামূলক নিয়মটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩০ সেপ্টেম্বর। এরপর নতুন কোনো নির্দেশনা না থাকায় আগের দেড় সেন্টেই রাজস্ব ভাগাভাগি হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক কলে প্রতি এক মিনিট কল থেকে যে আয় হয় তার ৪০ শতাংশ বিটিআরসি, ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স), ২২ দশমিক ৫ শতাংশ মোবাইল অপারেটর আর বাকি ২০ শতাংশ আইজিডব্লিউ কোম্পানিগুলো পেয়ে থাকে। এ ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সাংবাদিকদের বলেন, কল রেট বাড়ার ফলে সরকারের কতটুকু লাভ বা ক্ষতি হলো, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে মন্ত্রণালয়কে সেটা জানানোর দায়িত্ব ছিল বিটিআরসির। কিন্তু তারা সেটি করেনি। পরে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হলে তারা তথ্য দিয়েছে। এক টাকার ক্ষতিও মেনে নেওয়া হবে না উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর সঙ্গে সরকারের আয়-ব্যয়ের সম্পর্ক থাকায় আমাদের মন্ত্রণালয়ের অভিমতসহ অর্থ মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, দেশে কল রেট যখন তিন সেন্ট ছিল, তখন কল রেট বাড়ানোর সর্বোচ্চ সীমা (সিলিং রেট) ছিল ৩ দশমিক ৪৫ সেন্ট। কিন্তু কল রেট যখন কমিয়ে দেড় সেন্ট করা হয়, তখন আর সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। এর ফলে কার্যত দেড় সেন্ট থেকে ৩ দশমিক ৪৫ সেন্ট পর্যন্ত যে কোনো কল রেটে কল আনতে পারে আইজিডব্লিউ অপারেটররা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কলরেটের সর্বোচ্চ সীমা ১ দশমিক ৮ সেন্ট থেকে ২ সেন্ট নির্ধারণের একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে বিটিআরসি। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয় করছে আইজিডব্লিউ অপারেটররা। যদিও আইজিডব্লিউ অপারেটর সূত্র বলছে, সেপ্টেম্বরে দেশে প্রতিদিন গড়ে নয় কোটি মিনিট করে কল এলেও কলরেট বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে তা কমে আট কোটি মিনিটে নেমে এসেছে।  এ কারণে তাদের একচেটিয়া আয়ও কমে গেছে। এর বিপরীতে প্রতিদিনই বাড়ছে সরকার ও অন্য পক্ষগুলোর ক্ষতি। দেশে বর্তমানে ২৩টি আইজিডব্লিউ অপারেটর থাকলেও চালু হওয়া নতুন নিয়মে মাত্র সাতটি অপারেটর কল টার্মিনেট বা গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। আন্তর্জাতিক কল নিয়ন্ত্রণের জন্য সাত প্রতিষ্ঠান নিজেরা একটি কমন ইন্টারন্যাশনাল পয়েন্ট বা সিআইপি তৈরি করেছে। সাত অপারেটর আইজিডব্লিউ অপারেটর ফোরাম (আইওএফ) নামে একটি সংগঠনও তৈরি করেছে। একই লাইসেন্স নিয়ে দুই স্তরবিশিষ্ট এ নিয়ম চালু করা নিয়ে অনেক বিরোধিতা থাকলেও শেষ পর্যন্ত এ নিয়মটি চালু হয়।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর