মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

পশ্চিমাদের হাততালি আমরা খুব পছন্দ করি : ড. খলীকুজ্জমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজেদের অর্থ ব্যয় করে সবুজ অর্থনীতির বাংলাদেশ করতে গেলে উৎপাদনশীলতা ও প্রবৃদ্ধি কমবে এবং দারিদ্র্য নিরসন আটকে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রবীণ অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তাই সবুজ অর্থনীতি নিয়ে যারা আলোচনা করছেন, তাদের কড়া সমালোচনা করে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, বাংলাদেশে কেউ কেউ হৈচৈ করছেন, সবুজ অর্থনীতি করে ফেলেছি। আমরা বেশি কথা বলে পশ্চিমা বিশ্বের হাততালিটাকে খুব বেশি পছন্দ করি। ফলে প্রাইজ-ট্রাইজ (পুরস্কার) পাওয়ার জন্য আমরা খুব বেশি আগ্রহ দেখাই। তাই এ বিষয়ে কথা বলার আগে দেশের বাস্তবতা কি, মানুষের চাহিদা কি, তা বুঝতে হবে। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে প্রায় ১ হাজার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) জোট খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা : খাদ্য অধিকার প্রেক্ষিত’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি আরও বলেন, অনেকে সবুজ অর্থনীতি, সবুজ অর্থনীতি বলে বাংলাদেশে বাহাবা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ২০১২ সালে নিউইয়র্কে সবুজ অর্থনীতির সম্মেলনে একটি রোডম্যাপ তৈরির কথা বলা হয়েছিল। এতে বাংলাদেশই প্রথম বাধা দেয়। পরে অন্যান্য দেশও সবুজ অর্থনীতির রোডম্যাপ তৈরিতে আপত্তি তোলে। সবুজ অর্থনীতি নিয়ে নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে মূলত দেখতে হয়, দেশের অর্থনীতি কী অবস্থায় আছে, তার ওপর। কেননা, সবুজ অর্থনীতি করতে গেলে প্রযুক্তি ও প্রচুর অর্থায়ন লাগবে। খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, বাজার অর্থনীতি ও নব্য উদারতাবাদের মধ্যেই আমাদের পরিকল্পনা নীতি করতে হবে। বাজার বাজারের মতো চলবে, সরকার সেখানে রেফারির ভূমিকা পালন করবে। সামাজিক উন্নয়নে প্রত্যাশিত সহায়তা বাংলাদেশ পায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তেমন বৈদেশিক সহায়তা আসেনি। তারপরও বাংলাদেশ এমডিজি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। বিশ্ব বলছে, বাংলাদেশ অনেক ভালো করছে। যদিও আমাদের দেশের মানুষের দারিদ্র্য উঠানামা করছে। মতবিনিময় সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অর্থনীতিবিদ ড. এম এম আকাশ খাদ্য নিরাপত্তা অধিকার প্রসঙ্গে বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণেতাদের মাথায় হলো- বাংলাদেশ বাজার অর্থনীতির দেশ। ফলে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা শাসক শ্রেণি জনগণের চাপে ভালো আইন করলেও তার প্রয়োগ হবে না। তবে তাদের নৈতিক পরাজয় হবে। সেদিক বিবেচনায় খাদ্য অধিকার আইন নয়, আমি বলব- খাদ্য নিরাপত্তা অধিকার আইন করা হোক। বিশ্বে ১৬০টি দেশ এই আইনের পক্ষে মত দিলেও করেছে মাত্র ১০টি দেশ। প্রতিবেশী পুঁজিবাদী দেশ ভারতও এ আইন করেছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, আমাদের দেশে শস্য উৎপাদনের ১০ শতাংশ অপচয় হয়। তাই খাবার অপচয় রোধ করতে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি অকৃষি খাতে যারা কাজ করেন, তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। ওই মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন বেসরকারি সংস্থা ডেমোক্রেসি ওয়াচের চেয়ারম্যান তালেয়া রহমান, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ এ কে এম মামুনুর রশীদ ও জার্মানভিত্তিক উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান জিআইজেডের উপদেষ্টা সুজিত চৌধুরী। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের জাতীয় কমিটির সদস্য মনীষা বিশ্বাসের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী। 

সর্বশেষ খবর