শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
৫০ পদ দখলে মরিয়া প্রশাসন ক্যাডার

সুপারিশের তথ্য গোপন করে বাদ দেওয়া হয় টাইমস্কেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার গ্রেড-১ ও গ্রেড-২-এর ৫০টি পদ দখলে নিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নতুন পে-স্কেল থেকে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাদ দিয়ে দিয়েছেন- এমনই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। যদিও পে-স্কেলের জন্য গঠিত ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিটির মূল সুপারিশে বলা হয়েছিল সেক্টরওয়াইজ সীমিত এবং পদোন্নতিহীন পদগুলোর ক্ষেত্রে পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করে তবেই যেন টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বিলুপ্ত করা হয়। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যদের দ্বারা গঠিত সচিব কমিটি কমিশনের মূল সুপারিশে উল্লিখিত বিষয়কে পাশ কাটিয়ে সরকারকে ভুল বুঝিয়ে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রথা বাতিলের জন্য প্রলুব্ধ করে। মূল সুপারিশকে অবজ্ঞা করে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের ফলে সারা দেশে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ১১ লাখেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরকারের প্রতিপক্ষ বানিয়ে দিয়েছে সচিব কমিটি। এ ব্যাপারে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাও পুরো বিষয় অবহিত এবং প্রশাসন ক্যাডারের ছলচাতুরীর বিষয়টি উল্লেখ করে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গোপন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রগুলো বলছে, দেশ স্বাধীনের পর এ রকম একটি চমৎকার পে-স্কেল করার পরও প্রশাসনের কিছু আমলার কারণে সরকার এর সুফল ঘরে তুলতে পারছে না। বরং আমলাদের দাপুটে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল হয়ে যাওয়ায় সরকার বিতর্কিত হয়ে পড়ছে। ভালো কাজ করেও সুনাম কুড়াতে পারছে না। ২৬ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, সচিব কমিটির হয়ে অর্থমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছেন মন্ত্রণালয়েরই এক আমলা। যিনি বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সুবিধাভোগী। সরকারের ফাংশনাল প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারের মুখোমখি দাঁড় করিয়ে একটি অস্থির অবস্থা তৈরির জন্যই এমনটা করা হয়েছে বলে একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সরকারের স্বতন্ত্র সার্ভিসগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ও আন্তরিকতায় বিভিন্ন সার্ভিসের ৩০টি পদকে গ্রেড-১ (সচিব পদমর্যাদা) এবং ২০টি পদকে গ্রেড-২ (অতিরিক্ত সচিক পদমর্যাদা)-এ উন্নীত করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সার্ভিসে কর্মরত বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজ করার ক্ষেত্রে একটা সুযোগ তৈরি করা হয়েছিল। অভিযোগ আছে, ওই সময়ে প্রশাসন ক্যাডারের উচ্চ পর্যায়ের আমলারা সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের দৃঢ়তার কারণে ওই সময়ে আমলাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে এতদিন বাধা দিতে না পারলেও এবার পে-কমিশনের রিপোর্টের পর তৎপর হয়ে ওঠেন প্রশাসন ক্যাডারের আমলারা। সূত্র জানায়, ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি তাদের মূল সুপারিশ জমা দেওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে প্রশাসন ক্যাডারের আমলাদের নিয়ে সুপারিশ পর্যালোচনার জন্য গঠন করা হয় সচিব কমিটি। সূত্র জানায়, এ কমিটি পে-কমিশনের রিপোর্টকে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়। এরই অংশ হিসেবে তারা ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত পে-কমিশনের দেওয়া মূল সুপারিশ থেকে বাদ দিয়ে দেয় টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড। জানা গেছে, সচিব কমিটি মূল সুপারিশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করে এবং মন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে দেয়। অথচ মূল প্রতিবেদনে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, প্রত্যেক সেক্টরওয়াইজ সীমিত এবং পদোন্নতিহীন পদগুলোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করে তারপর যেন পর্যায়ক্রমে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাদ দেওয়া হয়। অথচ এ বিষয়টিই অর্থমন্ত্রীর কাছে গোপন রাখে সচিব কমিটি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সচিবালয়ে কর্মরত একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়ার নেপথ্যে মূলত প্রশাসন ক্যাডারের আমলারা ভূমিকা রেখেছেন। মূল সুপারিশে থাকা সত্ত্বেও তারাই সরকারকে ভুল বুঝিয়ে ও অনেকটা গোপনে প্রয়োজনীয় পদোন্নতির পদ সৃষ্টি না করে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাদ দিয়ে দিয়েছেন। এতে সরকার এবং সরকারের বিভিন্ন ফাংশনাল বডিকে মুখোমুখি করে দিয়েছেন তারা। ইতিমধ্যে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বহালের দাবিতে তারা আন্দোলনও শুরু করেছেন। অথচ প্রশাসন ক্যাডারের ৫-৬ হাজার কর্মকর্তার বিপরীতে সারা দেশে সরকারি ফাংশনাল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১০ থেকে ১২ লাখ। সূত্র জানায়, সরকারি বিভিন্ন সেক্টরের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ২০১২ সালে গ্রেড-১ ও গ্রেড-২-এর জন্য যে ৫০টি পদ সৃষ্টি করেছিল সেগুলোয় যাতে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরের কোনো লোক বসতে না পারে সে জন্য প্রশাসন ক্যাডারের আমলারা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারা চান এসব পদে প্রশাসন ক্যাডারের লোকজনই যেন বসতে পারেন। প্রসঙ্গত, পদোন্নতির সময় হলেও ঠিক সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি না হলে পদোন্নতির নির্ধারিত সেই সময় থেকে আর্থিক সুবিধা হিসেবে সিলেকশন গ্রেড দেওয়া হয়। আর চাকরির নির্ধারিত সময় থেকে সময় অনুযায়ী দেওয়া হয় টাইমস্কেল।

সর্বশেষ খবর