শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
চলমান রাজনীতি

আওয়ামী লীগে জোর কাউন্সিল প্রস্তুতি

শাবান মাহমুদ ও রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগে জোর কাউন্সিল প্রস্তুতি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে এখন কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের জোর প্রস্তুতি চলছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে হতে পারে এ জাতীয় কাউন্সিল। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ঘিরে সাংগঠনিক তৎপরতার পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরে শুরু হয়েছে নানা লবিং-গ্রুপিং। দলের শীর্ষস্থানীয় একটি সূত্রমতে, আসন্ন কাউন্সিলের ভিতর দিয়ে নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আসছে আমূল পরিবর্তন। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদেও আসতে পারে নতুন মুখ। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম পদেও রয়েছে পরিবর্তনের আভাস।

সূত্রমতে, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে এবার মাঠের ত্যাগী ও পরীক্ষিত এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের একটি অংশের মূল্যায়ন হবে। আগামী কাউন্সিলের সাংগঠনিক কাঠামো বাড়ানোর গুঞ্জন থাকলেও দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির কাঠামো থাকবে অপরিবর্তিত। তবে নতুন কমিটিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের একটি বড় অংশের ঠাঁই হতে পারে। অপেক্ষাকৃত তরুণ ও মেধাবীরাও জায়গা করে নিতে পারেন নতুন কমিটিতে। ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।

সূত্রমতে, দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভা ডাকা হচ্ছে। নভেম্বরের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় এ সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের তারিখ চূড়ান্ত হতে পারে। ডিসেম্বরে জাতীয় কাউন্সিলের চিন্তাভাবনা থেকে নভেম্বরের মধ্যেই সব সাংগঠনিক জেলার কাউন্সিল সম্পন্ন করতে কাজ করছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা। প্রায় ১৩ বছরের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নিজ জেলা গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে আগামী ৯ নভেম্বর আর ১২ নভেম্বর হতে যাচ্ছে রাজবাড়ী জেলার। দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নিজ জেলা কিশোরগঞ্জে সম্মেলন হতে পারে কাউন্সিলের আগেই। সূত্রমতে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন একঝাঁক সাবেক ছাত্রনেতা। প্রায় লাপাত্তা হয়ে যাওয়া সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেকেই এখন দলীয় কার্যালয়মুখী। গণভবনে যাতায়াত বেড়েছে অনেকের। দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণেও সাবেক ছাত্রনেতাদের উপস্থিতি বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার কাজেও ব্যস্ত তারা। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যে অনুষ্ঠানগুলো হয় সেখানেও পিছিয়ে নেই নেতৃত্বে পদপ্রত্যাশীদের।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বিভিন্ন সময় নেতৃত্বে থাকলেও বর্তমান কমিটিতে আছেন মাত্র পাঁচজন। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতিদের মধ্যে একমাত্র ওবায়দুল কাদেরের ঠাঁই হলেও বাকিদের খবর নেই। গত কয়েকটি কমিটি থেকে উপেক্ষিত থাকছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে দলের উপকমিটির সহ-সম্পাদক করা হলেও এতে সন্তুষ্ট নন অনেকে। দলের ২০তম কাউন্সিল ঘিরে আশায় বুক বাঁধছেন তারা। দলের রদবদলে এবারের কাউন্সিলে সাবেক ছাত্রনেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে জানিয়েছেন নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা।

নব্বইয়ের দশকে ছাত্রলীগের সভাপতির (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব পালন করেন শাহে আলম। তিনি এখন পর্যন্ত মূল দলে অন্তর্ভুক্ত হননি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র। অবশ্য তার কমিটির সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিলের দলে অবস্থান উপ-প্রচার সম্পাদক। ১৯৯২-৯৪ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী রাজনীতি থেকে যোজন যোজন দূরে। সাধারণ সম্পাদক ইকবালুর রহীম সংসদ সদস্য ও হুইপ হলেও দলীয় কোনো দায়িত্বে নেই। ১৯৯৪-৯৮ সালে দায়িত্ব পালনকারী সভাপতি এনামুল হক শামীম দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাত্র। তার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্নার ঠাঁই হয়নি কেন্দ্রে।

১৯৯৮-২০০২ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী বাহাদুর বেপারী কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নেই। তাকেও দলের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক করা হয়েছে। আর সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকনের অবস্থানও একই। ২০০২-০৬ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী লিয়াকত শিকদারদের দলীয় অবস্থান নেই। সারা দেশে ছাত্র ও যুবকদের মধ্যে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও তাকে দলের উপকমিটির সহ-সম্পাদক পদ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। ফরিদপুর থেকে কয়েক দফা দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি। অবশ্য সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নেই। ২০০৬-১১ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী মাহমুদ হাসান রিপন ও মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনকেও করা হয়েছে সহ-সম্পাদক। আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে সাবেক এ ছাত্রনেতারা জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। তারা অনেকেই নানাভাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। এমনকি গণভবনেও বাড়িয়ে দিয়েছেন যাতায়াত। দল ঘোষিত যে কোনো কর্মসূচি সফল করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।

আসন্ন কাউন্সিলের ভিতর দিয়ে নতুন কমিটিতে ফিরে আসতে চান কেন্দ্র থেকে বাদ যাওয়া নেতাদের একটি অংশ। কেন্দ্রীয় কমিটিতে আবার কয়েক নেতা ঠাঁই পেতে পারেন এমন আলোচনা রয়েছে কর্মীদের মধ্যেও। একাধিক সূত্রমতে, কেন্দ্রে আবার মূল্যায়ন হতে পারে সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুকুল বোস, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, সাবের হোসেন চৌধুরী, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের।

সর্বশেষ খবর