শিরোনাম
সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
টরেন্টোর চিঠি

সুনামির দরজায় বাংলাদেশ!

শওগাত আলী সাগর

সুনামির দরজায় বাংলাদেশ!

গত মে মাসে আবদুল্লাহ আল গালিবকে যখন গ্রেফতার করা হয়, পুলিশ তখন জানিয়েছিল গালিব চরমপন্থি ইসলামিক স্টেটের জন্য বাংলাদেশ থেকে জিহাদি নিয়োগ করছিল। এ ঘটনাটির মাধ্যমে পুলিশ আমাদের জানিয়েছিল, সারা দুনিয়ায় আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ইসলামিক স্টেটের সোর্স কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশও ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের পুলিশের বরাতে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়  খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যে দেশ সোর্স কান্ট্রি হিসেবে বিবেচিত হয়, সেই দেশে আইএসের নেটওয়ার্ক না থাকার কথা নয়। ওয়াল স্ট্রিট খবরটিতে আরও জানায়, গালিব একটি চরমপন্থি ওয়েবসাইট পরিচালনা করত, যাতে কালো মুখোশে মুখ ঢাকা হ্যান্ডগান হাতে তরুণদের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। বাংলা ভাষায় দেওয়া এসব পোস্টে ইসলামিক স্টেটের বার্তা প্রচার করা হয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ তথ্যটুকুও দিয়েছে ঢাকার পুলিশের বরাতেই। গালিব এখনো পুলিশ হেফাজতেই আছে। ‘ইসলামিক স্টেট’-এর নামে ওয়েবসাইট পরিচালনাকারী এবং লোক নিয়োগকারী ব্যক্তিটিকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে পুলিশ আর কী তথ্য উদ্ধার করেছে এবং কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা অবশ্য আমাদের জানার সুযোগ হয়নি। তবে সরকার, পুলিশ সবাই মিলেই এখন বলছে, বাংলাদেশে অন্তত আইএস নেই। গালিবকে গ্রেফতারের আগেই পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এসেছিল মুফতি জসিম উদ্দিন রহমানীকে। মুফতি রহমানীকে চরমপন্থি ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের’ আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ব্লগারদের নিয়ে চরম উত্তেজনার মুহূর্তে এই ‘আধ্যাত্মিক’ নেতা মুসলমানদের অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘নাস্তিক ব্লগারদের খুঁজে বের করে হত্যা করা প্রতিটি মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব।’ মুফতি রহমানীকে কোন ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল তা এই মুহূর্তে ঠিক মনে নেই। তবে তার গ্রেফতারের পরপরই তার মুক্তি দাবি করে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভ‚ত ব্রিটিশ জিহাদি আবদুর রহিম আজিজ। সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের হয়ে তথাকথিত জিহাদে অংশ নিতে গিয়ে মার্কিন ড্রোন হামলায় তার মৃত্যু ঘটে। এ ব্রিটিশ জিহাদি আবদুর রহিম আজিজ মুফতি রহমানীর মুক্তি দাবি করে ভিডিওবার্তা প্রচার করেন। ওই বার্তায় তাকে (মুফতি রহমানী) বেশ কয়েকবার ‘আমাদের শেখ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। ওই বার্তায় ব্রিটিশ জিহাদি আবদুর রহিম আজিজ ঘোষণা দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের দরজায় সুনামি অপেক্ষা করছে। বলা প্রয়োজন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এই ভিডিও বার্তাটি প্রচার করেছিল। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক নেতার জন্য আইএসের জিহাদির এই হুমকির যোগসূত্রটা কি? দুজনই বাংলাদেশি বংশোদ্ভ‚ত- কেবল এটুকু? সাংগঠনিক বা আদর্শিক কোনো যোগসূত্র নেই? কিংবা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে আইএসের সম্পর্কটা কি? বাংলাদেশে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের উপস্থিতি এবং কার্যক্রম দুটোই বাংলাদেশ সরকার স্বীকার করে। কিন্তু আইএসের উপস্থিতি তারা স্বীকার করেন না। যদিও বিভিন্ন সময় পুলিশই জানিয়েছে, তারা আইএসের জন্য লোক নিয়োগের সময় ‘ওমুক’ ‘তমুক’কে গ্রেফতার করেছে। এখন অবশ্য পুলিশ এবং সরকার আইএসের অস্তিত্ব অস্বীকারে মরিয়া। সেটিও আবার সমন্বিত করা সম্ভব হচ্ছে না। শিয়াদের সমাবেশে হামলার ঘটনার পর পুলিশ বলেছে, এ ঘটনায় কোনো জঙ্গি সম্পৃক্ততা নেই। অপরদিকে র‌্যাব জানিয়েছে, শিয়াদের সমাবেশে যে গ্রেনেড ব্যবহৃত হয়েছে, একই গ্রেনেড তারা জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। এসব কথা বাদ দেই, বিদেশি গোয়েন্দা, মিডিয়ার কাছে তথ্য আছে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম আইএসের ‘নিয়োগ ভিডিও’ বাংলায় অনুবাদ করে প্রচার করেছে। যেই ভিডিওতে আইএসের কার্যক্রমের বিশদ বিবরণ রয়েছে। শুধু তাই নয়, আইএসের ম্যাগাজিন- ‘দাবিক’ এবং আল-কায়েদার ম্যাগাজিন ‘ইন্সপায়ার’ নিয়মিত বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে প্রচার করেছে। এসব তথ্য ঢাকার গোয়েন্দাদের কাছে নিশ্চয়ই থাকার কথা। না থাকলেও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে খবরগুলো প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশের দূতাবাস সেগুলোর কাটিং পাঠানোর কথা। মুফতি রহমানী এখনো পুলিশ হেফাজতে। তাকে নিয়ে ঢাকার কোনো মিডিয়ায় কোনো প্রতিবেদন পড়েছি বলে মনে করতে পারছি না। আন্তর্জাতিক গোয়েন্দাদের কাছে আইএসের ‘বাংলাদেশে রিক্রুটিং এজেন্ট’ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক নেতা পুলিশের কাছে এতদিন ধরে আটক আছে, পুলিশের তো অনেক তথ্যই পেয়ে যাওয়ার কথা। পুলিশ আদৌ কোনো তথ্য তার কাছ থেকে আদায় করেছে কি না তা আমরা জানতে পারিনি। তবে মুফতি রহমানীর গ্রেফতারের প্রতিবাদে আইএস জিহাদির হুমকির কথাটা মনে পড়ছে- ‘বাংলাদেশ সুনামির দরোজায়।’ এখন কি তাহলে সুনামিপূর্ব ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে?

লেখক : টরন্টোর বাংলা পত্রিকা ‘নতুন দেশ’-এর প্রধান সম্পাদক

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর