মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বন্দরসহ সব স্পর্শকাতর স্থাপনায় ইয়েলো অ্যালার্ট

মির্জা মেহেদী তমাল

সর্বোচ্চ সতর্কতায় এখন গোটা বাংলাদেশ। নাশকতা ও হামলার আশঙ্কায় ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.), চট্টগ্রাম শাহ আমানত ও সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরসহ দেশের সবকটি বিমানবন্দরে হলুদ সতর্কতা বা ইয়েলো অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। বিমানবন্দরে দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া রেলস্টেশন, সব বাস টার্মিনাল, চট্টগ্রাম বন্দর, আদালত ভবন, গুরুত্বপূর্ণ তেল ও গ্যাস স্থাপনা, বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, বেতার ভবনসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর পয়েন্টে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, সব থানা ও পুলিশ ফাঁড়িকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের সবগুলো শহরে। বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কায় গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, দেশে বড় আকারের নাশকতার আশঙ্কা করছে সরকার। সরকারের অবস্থান দুর্বল করতে এরা নানা ধ্বংসাত্মক পন্থা নিতে পারে। ফলে সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশে বসবাসরত এবং বিভিন্ন কারণে ভ্রমণরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের সতর্কভাবে চলাফেরা করার পরামর্শ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ঢাকা দূতাবাস। তাজিয়া মিছিলে হামলার পর দূতাবাসের দেওয়া ওই সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিদেশি এবং পশ্চিমা দেশের নাগরিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা ঘটার বাস্তব এবং বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে। দূতাবাস তিনটির এমন সতর্কবার্তার মধ্যেই সারা দেশে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। তবে কোনো অ্যালার্ট জারি করা হয়নি বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল বিকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় তা ঢেলে সাজানো হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। যে কোনো সময়ে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ ও র‌্যাব ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। দেশের সবগুলো মেট্রোপলিটন এলাকাসহ সব থানার পুলিশ থাকবে স্ট্যান্ডবাই। রাস্তায় রাস্তায় টহল ও চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। দেশের প্রত্যেক জেলার এসপিদের এ বিষয়ে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আমরা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ পেয়েছি। কোনোভাবেই যাতে নিজেদের এলাকায় কোনো বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড না ঘটে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদেরও পর্যবেক্ষণে রাখার নির্দেশ পেয়েছি।

ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের আশঙ্কা : হামলা হতে পারে বা যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই হতে পারে- গোয়েন্দাদের এমন তথ্যের পর দেশের সবকটি বিমানবন্দরে ইয়েলো অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এই অ্যালার্ট জারি থাকবে বলে জানা গেছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিতর ও বাইরে যাত্রীদের কঠোর তল্লাশিসহ দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বহির্গমন যাত্রীদেরও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিমানবন্দরকেন্দ্রিক নাশকতার পরিকল্পনা করছে একটি গোষ্ঠী- গোয়েন্দাদের কাছে এমন তথ্য রয়েছে। গত রবিবার বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক অভ্যন্তরীণ বৈঠকে ইয়েলো অ্যালার্ট জারি ও নিরাপত্তা জোরদারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে এবং দুর্বৃত্তরা বিস্ফোরক কোনো কিছু নিয়ে বিমানবন্দরে আসতে পারে, যা মেটাল ডিটেক্টরে ধরা পড়বে না, এমন তথ্য গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আমাদের দেওয়া হয়েছে। এ কারণে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এপিবিএনের সিনিয়র এএসপি আলমগীর হোসেন শিমুল জানান, বিদেশিদের অনুরোধে এবং সরকারের নির্দেশে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। দর্শনার্থী প্রবেশে সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করে তিনি জানান, দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশের জন্য থাকা ৫টি কাউন্টার বন্ধ রেখে ভিতর-বাইরে তল্লাশি করা হচ্ছে। এ জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান বলেন, আমরা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে নাশকতামূলক ঘটনা ঘটতে পারে বলে তথ্য পেয়েছি। এ কারণে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে যাতায়াত করা যাত্রী ও বিদেশি যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা শাখার সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ‘কি পয়েন্ট ইন্সটলেশন’ বা কেপিআই জোন এবং আশপাশ এলাকায় বেশকিছু চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচলকারীদের ব্যাগেজ ও দেহ তল্লাশি করা হয়। এসব চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলেও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তা পর্যবেক্ষণ করছেন। গতকাল এসব চেকপোস্ট বেশ সক্রিয় ছিল। আজ চেকপোস্টগুলো আরও সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। সূত্র জানায়, সরকারি ব্যবস্থাপনার রেডিও-টেলিভিশন সেন্টার, আনবিক শক্তি কমিশন, ডিএফপি নিয়ন্ত্রণাধীন দফতর, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ, ওয়াসা, গ্যাস সরবরাহের স্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে পুলিশি পাহারার পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়। এ ছাড়া কূটনৈতিক পাড়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়।

সর্বশেষ খবর