মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অনিশ্চয়তা দূর করতে সবার অংশগ্রহণ জরুরি

জুলকার নাইন

অনিশ্চয়তা দূর করতে সবার অংশগ্রহণ জরুরি

হুমায়ূন কবির

দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের পর সর্বশেষ তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার ঘটনা পরিস্থিতি আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে বলে মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির। তিনি বলেন, পরিস্থিতি উত্তরণের দায়িত্ব এখন শুধু সরকারের নয়। সবার অংশগ্রহণ জরুরি। সরকার চাইলে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতাও নিতে পারে। তিনি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা কূটনীতিক হুমায়ূন কবির বলেন, শিয়া সম্প্রদায়ের কোনো অনুষ্ঠানের ওপর হামলার ঘটনা বাংলাদেশের জন্য অভাবনীয় বিষয়। বহু বছর ধরে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন এ দেশের আশুরায় তাজিয়া মিছিল বের করে আসছে। এটি নিয়ে কখনো কোনো বিশেষ আগ্রহ নেই। তবে প্রতিবছর এটি হয়ে আসছে এবং সবাই সহযোগিতা করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শিয়া-সুন্নির বিষয়টি তো কখনো আলোচনায়ও আসেনি। সেখানে এ ধরনের সংঘাত ও বোমা হামলার ঘটনা তো পরের বিষয়। সেই বিবেচনায় এটি নিশ্চয় আমাদের জন্য অভাবনীয় ও নেতিবাচক। কারণ এখানে একজন তরুণ নিহত এবং শতাধিক অংশগ্রহণকারী আহত হয়েছেন। তাই আমার ধারণা, সারা বাংলাদেশের মানুষই এ ধরনের ন্যক্কারজনক হামলায় স্তম্ভিত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সহ-সভাপতি হুমায়ূন কবির বলেন, তাজিয়া মিছিলে হামলার ঘটনাটি আন্তর্জাতিক বিশ্বেরও নজরে পড়েছে। কারণ সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় এমনিতেই আমরা চাপের মধ্যে ছিলাম। যেহেতু বাইরের বিশ্বে শিয়া-সুন্নির বিভেদটি নিয়ে এক ধরনের স্পর্শকাতরতা ও সংবেদনশীলতা আছে, সেহেতু আমরা না চাইলেও এখানকার ঘটনাটিকেও একই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার প্রবণতা বহির্বিশ্বের মধ্যে আসছে। তাদের শঙ্কা থাকবে, এখানেও আবার শিয়া-সুন্নি বিভেদ প্রবেশ করল কি না। তিনি বলেন, আমি মনে করতে চাই না, এ ধরনের কোনো বিভেদ বাংলাদেশে আছে এবং এর সঙ্গে হামলার ঘটনার কোনো সম্পৃক্ততা আছে। তবে এখনই কোনো উপসংহারে যাওয়া যাবে না। কারণ সত্যিকার অর্থে কী ঘটছে বা ঘটেছে তা আমরা এখনো জানি না। হুমায়ূন কবির বলেন, এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের। তাজিয়া মিছিলের বোমা হামলার ঘটনা ও আগের দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত তাদেরই হাতে। যত দ্রুততম সময়ে পেশাদার ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে আসলে কী ঘটেছে তা জানা সম্ভব হবে, ততই দেশের ভাবমূর্তির জন্য স্বস্তিদায়ক। তাহলেই বিশ্ব সম্প্রদায়ে বাংলাদেশ বিষয়ে যেসব নেতিবাচক কথা উচ্চারিত হচ্ছে, তা দূর হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেকগুলো ইতিবাচক বিষয় আছে। সর্বশেষ জাতিসংঘে গৃহীত এসডিজিতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। আগের এমডিজিতেও বাংলাদেশ প্রশংসিত। এরই মধ্যে অহেতুক বিদেশি হত্যাকাণ্ড ও তাজিয়া মিছিলে হামলার মতো ঘটনা কালি ছিটিয়ে দিচ্ছে। সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, পরিস্থিতি এমন অবস্থায় চলে এসেছে যে এখন আর শুধু সরকারের দায়িত্বের বিষয় নেই। এখন সরকার ও জনগণ দুটো বিষয়ই সামনে চলে এসেছে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি, জনগণের বহুদিনের সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের সংস্কৃতি সবই এখন হুমকির মুখে চলে এসেছে। তাই এখন দায়িত্ব সবার। সরকারের দিক থেকে যথাসম্ভব দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে কারা সংশ্লিষ্ট এটি বের করে নিয়ে আসা প্রয়োজন। এ কাজে সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া দরকার। জনগণের পক্ষ থেকে যে কোনো সহযোগিতার মানসিকতা রাখতে হবে। একই সঙ্গে সরকার যদি প্রয়োজন মনে করে তাহলে দেশের বাইরের কারও সহযোগিতাও নিতে পারে। বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা নিয়েও যদি এ ধরনের অনিশ্চয়তাময় পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসা যায়, সেটাই মঙ্গলজনক।

সর্বশেষ খবর