শিরোনাম
বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

গোয়েন্দা জালে জাপানি নাগরিকের খুনিরাও

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও রংপুর

গোয়েন্দা জালে জাপানি নাগরিকের খুনিরাও

রংপুরে জাপানের নাগরিক হোশি কোনিও হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া তিন খুনি এখন গোয়েন্দা জালে। তবে আরও কিছু তথ্য-প্রমাণের জন্য অধীর অপেক্ষায় গোয়েন্দারা। যদিও তিন খুনিকেই পুরোপুরি নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র। অন্যদিকে নেপথ্য মদদদাতাকেও চিহ্নিত করার দাবি করেছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে তিনি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অবস্থান করছেন। তবে নিরাপত্তাবোধ না করায় শিগগিরই লন্ডনে পাড়ি জমানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছেন তিনি। সূত্র জানায়, তিন খুনির একজন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের। তিনি মোটরসাইকেল চালিয়েছিলেন। বাকি দুজন রংপুর এলাকার বাসিন্দা। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ছিনতাই, চুরি ও রাহাজানির মামলা রয়েছে। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে হত্যাকাণ্ডে জড়াতে প্রলুব্ধ করা হয়েছে তাদের। সন্দেহভাজন তিন খুনির ছবি সংগ্রহ করে প্রত্যক্ষদর্শীদের দেখানোর পর তারা নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, কিলিং মিশন সম্পন্ন করার আগে খুনিরা ঘটনাস্থল ও আশপাশ একাধিকবার রেকি করেছিল। কৌশল হিসেবে তারা ওই এলাকায় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কও ব্যবহার করেনি। অ্যানালগ সোর্সের মাধ্যমেই তারা কিলারদের সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে। এর বাইরে ওই ঘটনায় আটকদের কাছ থেকেও তদন্ত-সহায়ক কিছু তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করেন তিনি। সূত্র জানায়, কোনিও হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী একটি রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা। ইতিমধ্যে বিদেশে পালিয়ে গেলেও তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। ইন্টারপোলের মাধ্যমে ওই দেশের পুলিশকে অবহিত করার উদ্যোগও তারা নিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এদিকে মামলার তদন্তভার কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মামুনুর রশিদ মামুনকে পরিবর্তন করে একই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম জাহিদুল ইসলামকে দেওয়া হয়েছে। এর আগে ১৭ অক্টোবর মামলার বাদী কাউনিয়া থানর তৎকালীন ওসি রেজাউল করিমকে রংপুরের পীরগঞ্জ থানায় বদলি করা হয়। তিনি বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনকে আসামি করে কোনিও হত্যা মামলা করেছিলেন। কোনিও হত্যা মামলার আসামি হুমায়ুন কবির হীরা ও বিএনপি নেতা রাশেদ-উন-নবী খান বিপ্লব এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হীরার ছোট ভাই রংপুর জেলা জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক কামাল হোসেন তিন খুনির মধ্যে রয়েছেন কি না, জানতে চাইলে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার ওসি জাহিদুল ইসলাম। তবে তিনি বলেন, তিন খুনিকে শনাক্তের পর মূল পরিকল্পনাকারীকেও শনাক্ত করা হয়েছে। এখন তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। মূল পরিকল্পনাকারী কোন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা এবং তার নাম কী, জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত পর্যায়ে সব তথ্য প্রকাশ করা ঠিক হবে না। কোনিও হত্যাকাণ্ড তদন্তে পুলিশ সদর দফতরের গঠন করা কমিটির প্রধান পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ুন কবীর জানান, তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। শিগগিরই কোনিও হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খোলাসা হবে। ৩ অক্টোবর কোনিও খুন হওয়ার পরপরই হুমায়ুন কবির হীরা ও রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য রাশেদ-উন-নবী খান বিপ্লবকে আটক করা হয়। দুই দিন পর তাদের কোনিও হত্যা মামলায় আসামি করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে নেওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় রিমান্ড বাতিল করে বিপ্লবকে কারাগারে পাঠানো হলেও হীরাকে দুই দফায় ১৫ দিন রিমান্ড নেওয়া হয়। ১৯ অক্টোবর হীরাকে কোতোয়ালি থানার একটি হত্যা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিপ্লব ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের ছোট ভাই।

অন্যদিকে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছিল, তাদের গত কয়েক দিনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এরা হলেন কোনিওর বাড়িওয়ালা জাকারিয়া বালা, তার স্ত্রী আয়েশা জাকারিয়া, রিমান্ডে থাকা মামলার আসামি হুমায়ুন কবির হীরার স্ত্রী সুলতানা খাতুন, যে বাড়ির সামনে কোনিওকে হত্যা করা হয় সেই বাড়ির বাসিন্দা মুরাদ হোসেন ও কোনিওকে আনা-নেওয়া করা রিকশাচালক মোন্নাফ আলী। প্রসঙ্গত, রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়া এলাকার জাকারিয়া বালার বাড়িতে ভাড়া থেকেই কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের আলুটারি গ্রামে জাপানি কোয়েল ঘাসের খামার করেছিলেন কোনিও। পাশেই জাকারিয়া বালার শ্যালক হীরার মাছের খামার। প্রতিদিন তারা একই সঙ্গে মোন্নাফ আলীর রিকশায় করে খামারে যেতেন। ৩ অক্টোবর রিকশায় করে খামারে যাওয়ার পথে বেলা ১০টার কিছু পরে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন কোনিও। এদিন হীরা তার সঙ্গে ছিলেন না। তিন দুর্বৃত্ত কোনিওকে গুলি করে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।

সর্বশেষ খবর