শিরোনাম
রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র মতবিরোধ

প্রতিদিন ডেস্ক

জঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র মতবিরোধ

জঙ্গিবাদ নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মতবিরোধ চলছে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। গতকাল অনলাইনে প্রকাশিত তাদের অ্যা রিফট ইমার্জেস ইন অ্যাফোর্টস টু কুয়েল টেরোরিজম  ইন সাউথ এশিয়া শিরোনামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএস-এর সঙ্গে জড়িত সংগঠনগুলো বাংলাদেশের ভিতরে জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন তথ্য বাংলাদেশ সরকারকে গত মাসে জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। এরপর ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি অস্বাভাবিক হামলা ও হুমকির ঘটনা ঘটে গেছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, ওই সতর্কবার্তাগুলো ছিল সঠিক। ঢাকার ক‚টনৈতিক পাড়ায় ইতালীয় সাহায্য সংস্থার এক কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর দেশের উত্তরাঞ্চলে গুলি করে খুন করা হয় এক জাপানি কৃষিবিদকে। শিয়া মুসলমানদের এক বিরাট জমায়েতে পুলিশি বেষ্টনীর মধ্যেই বোমা হামলা চালানো হয়। ঘটনাস্থলে এক কিশোর নিহত হয় এবং আহত হয় আরও বহু মানুষ। প্রতিটি ঘটনার পর ইসলামিক স্টেট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে এর দায় স্বীকার করে। কিন্তু জঙ্গি হামলা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সতর্কবার্তা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি সন্দেহ প্রকাশ করেন। এমনকি যখন বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলো দেশটিতে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের ওপর হামলা হতে পারে বলে সতর্ক থাকতে বলছিল, সে সময়ও বাংলাদেশের কর্মকর্তারা ইসলামিক স্টেট বা আইএস বাংলাদেশে নেই বলে বারবার দাবি করছিলেন। তারা বলছিলেন, ইরাক যুদ্ধের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে অতীতে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, এখনো তাই করছে। নিউইয়র্ক টাইমস তাদের রিপোর্টে আরও বলেছে, এই অঞ্চলে জঙ্গিবাদের উত্থান বিধ্বংসী হতে পারে। যা ভারত ও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করতে পারে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের ভিতরে কিছু চরমপন্থি দল বেড়ে উঠছে, এদের কয়েকটির সঙ্গে আবার বিরোধী দলেরও যোগসাজশ রয়েছে। বাংলাদেশে বেশ কয়েক বছরের গণতন্ত্রের পরে এ বছর আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে চরমপন্থা।

যারা এ বছর ইসলামের ভিত্তি বা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কথা বলতেন, এমন চার বুদ্ধিজীবীকেও হত্যা করেছে। একই সময়ে বিদেশি নিরাপত্তা সংস্থাগুলো লন্ডন, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য শহরে বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশির বিষয়ে জানতে পারে যারা ইসলামিক স্টেটের হয়ে যুদ্ধও করছেন আবার সদস্য সংগ্রহও করছেন। এসব চরমপন্থি ও জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যকার যোগাযোগ ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশের জন্য নতুন বিপদ ডেকে আনতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত মাসের সতর্কবার্তার ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশি ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাসের সম্পর্ক রয়েছে। যদিও তারা জঙ্গিবাদবিরোধী সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে। প্রায় এক মাস আগে, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিতফাইভ আইস অ্যালায়েন্স’-এর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তথ্য পায় যে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। গত ২৫ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়া তার নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ওপর সতর্কবার্তা জারি করে। সেখানে বলা হয়, ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের ওপর জঙ্গি হামলা হতে পারে।’ এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে টেস্ট ম্যাচ খেলতে ঢাকায় আসার সফর বাতিল করে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ক্রিকেট দল। জঙ্গিবাদ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভয়কে গত ২৭ সেপ্টেম্বর নাকচ করে দেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই সময়ই জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্ভাব্য এই হামলার বিষয়ে নিজেদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানান মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে এই সতর্কবার্তাকে হতাশাব্যঞ্জক বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। (পরে) তার সফরসঙ্গী ও উপদেষ্টা গওহর রিজভী গণমাধ্যমকে এ কথা জানান। গওহর রিজভী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো ‘ব্যবস্থা নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত কোনো তথ্য’ দেয়নি এবং কোথা থেকে তারা এসব তথ্য পেয়েছে তাও জানায়নি।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিকালে জগিং করার সময় ঢাকার ক‚টনৈতিক জোনে ইতালির এনজিওকর্মী তাভেলা সিজারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পরই হত্যার দায় স্বীকার করে মোবাইল মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রাম এবং সন্দেহভাজন টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে বার্তা পাঠায় ইসলামিক স্টেট। এ বার্তার সত্যতা নিশ্চিত করে ইসলামিক প্রচারণা পর্যবেক্ষণকারী একটি গোয়েন্দা সংস্থার ওয়েবসাইট। তবে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই বার্তা সঠিক নয়। একই কথা তারা বলে জাপানি নাগরিক হত্যা ও শিয়া জমায়েতে (তাজিয়া মিছিলে) বোমা হামলার পরও। বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেটের অবস্থানের সম্ভাব্যতা আছে, এমন ধরে নেওয়াকে হঠকারিতা বলেও মন্তব্য করেন গওহর রিজভী। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিরোধী দল এই প্রচারণা চালাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর