শিরোনাম
সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অস্বস্তি কাটেনি পোশাক খাতে

জিন্নাতুন নূর

অস্বস্তি কাটেনি পোশাক খাতে

দুই বিদেশি নাগরিক ও ব্লগার হত্যা এবং তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার ঘটনায় পোশাক আমদানিকারক বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়েছে। এতে একদিকে বিভিন্ন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে তাদের সফর যেমন স্থগিত করছেন, অনেকেই আবার নিরাপত্তার জন্য উদ্যোক্তাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করছেন। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সূত্র জানায়, বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের  প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেশের বাইরে গিয়ে বৈঠকের জন্য উদ্যোক্তাদের বিদেশে আসা-যাওয়াসহ বিভিন্নভাবে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে নিরাপত্তাঝুঁকি নিয়ে ক্রেতাদের অস্বস্তি থাকায় দ্বিতীয়বারের মতো ক্রেতাপ্রতিনিধিদের সংগঠন বায়ার্স ফোরামের বৈঠকও পিছিয়ে গিয়েছে। এ অবস্থায় ক্রেতাদের আশ্বস্ত করতে শিগগিরই একটি বৈঠক করতে যাচ্ছে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। আর এ বৈঠকে ক্রেতাদের কাছ থেকে সাম্প্রতিক ইস্যুতে প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও দিকনির্দেশনা জানতে চাওয়া হবে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য নিজ দেশসহ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ইত্যাদি দেশে যেতে বলছেন। খরচ বেশি হলেও অর্ডার পেতে বিক্রেতারা ক্রেতার আবদার পূরণ করছেন। তবে পোশাক মালিকরা জানিয়েছেন, আসছে হেমন্ত মৌসুমের ক্রয়াদেশ দেওয়ার জন্য এখন ‘পিক আওয়ার’। আর এ সময় ক্রেতাদের সফর স্থগিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, এ খাতে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি। এ ছাড়া দেড় মাস বাদেই বড়দিনের মৌসুম। কিন্তু এ সময় হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক ঘটনায় কম করে হলেও অর্ধশতাধিক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান উদ্বেগ জানিয়েছে। বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যেখানে এ মৌসুমে ক্রেতাদের অর্ডার দেওয়ার কথা, সেখানে ক্রেতা দেশে আসতে ভয় পাচ্ছেন। তাদের সফর বাতিল করছেন। ব্যবসা ধরে রাখতে দেশের বাইরে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হচ্ছে আমাদের। আশঙ্কা করছি উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।’ বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয় করে এমন বড় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে এইচঅ্যান্ডএম, ওয়ালমার্ট, ইন্ডিটেক্স, বেস্ট সেলার, ভিএফ করপোরেশন, সিয়ার্স, ক্যারিফোর, জেসি পেনি, গ্যাপ ইত্যাদি। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে এরই মধ্যে অনেক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের সফর স্থগিত করেছে। এ ছাড়া নেদারল্যান্ডসের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডএ, যুক্তরাষ্ট্রের চেরোকি গ্লোবাল ব্র্যান্ডের ক্রেতাপ্রতিনিধিরা তাদের সফর বাতিল করেছেন। মার্কিন প্রতিষ্ঠান লিভাইস, ওয়ালমার্ট এবং টার্গেটও তাদের প্রতিনিধিদের সফর স্থগিত করেছে। বিজিএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগের চেয়ে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হয়েছে। ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে আমরা শিগগিরই একটি বৈঠকের ব্যবস্থা করছি। যেহেতু কয়েকটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ওপর বাংলাদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা আছে, সে কারণে কয়েকটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান সতর্কতা পালন করছে।’ তিনি বলেন, ক্রেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে গিয়ে বৈঠকের জন্য উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তবে তিনি জানান, শিগগিরই বায়ারস ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পোশাক মালিকরা জানান, কারখানাগুলোতে এখন বড়দিনের পণ্য রপ্তানির কাজ চলছে। এ ছাড়া আগামী মৌসুমের পোশাকের অর্ডার এখনই আসার কথা। কিন্তু ক্রেতাদের সফর বাতিল ও দেশের বাইরে গিয়ে বৈঠক এটি স্পষ্ট করে যে, নিরাপত্তা নিয়ে ক্রেতাদের অস্বস্তি এখনো কাটেনি। এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ক্রেতাদের অনেকেই বাংলাদেশে আসতে চাইছেন না। আর যেসব ক্রেতা বাংলাদেশে আসতে চাইছেন না, ব্যবসার স্বার্থে তাদের পছন্দমতো জায়গায় গিয়ে বিক্রেতাদের বৈঠক করতে হচ্ছে, যা পোশাক খাতের জন্য নেতিবাচক। হেনস অ্যান্ড মউরিটজ, সিয়ার্স হোল্ডিং করপোরেশন ও ওয়ালমার্টের জন্য পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক জানান, তিনি বাংলাদেশে আসা তার তিনজন বিদেশি ক্রেতার নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা করেছেন। তবে তার বেশ কয়েকজন ক্রেতা ইতিমধ্যে সফর বাতিলও করেছেন। বাংলাদেশের পোশাক ক্রেতাদের মধ্যে অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান ভিএফ করপোরেশনের একজন মুখপাত্র ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে জানান, তারা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি মনে করি না যে এ ঘটনায় আমাদের পোশাকশিল্প ঝুঁকির মধ্যে আছে। দুশ্চিন্তার কারণ নেই।’ তবে তিনি এ কথা স্বীকার করেন, সম্প্রতি কয়েকজন ক্রেতা সফর বাতিল না করলেও কারখানা সফরে যেতে চাননি। এদিকে প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহের প্রথম সোমবার বায়ারস ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু বিদেশি হত্যার ঘটনায় গত মাসের ৫ অক্টোবর এ বৈঠক বাতিল করা হয়। এরপর নিয়মমতো চলতি মাসের ২ নভেম্বর এ বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। যদিও বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ বলছে শিগগিরই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে পরিস্থিতি উত্তরণে বায়ারস ফোরামের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য জানানোও হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কিছু নিশ্চিত হয়নি। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড সিয়ার্স, লবলোস ও পেরি এলিসের কাছে পোশাক রপ্তানিকারক বিজিএমইএর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ক্ল্যাসিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ বিষয়ে ভুল বার্তা নিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক ক্রেতা আমাদের জন্য বড় অর্ডার নিয়ে আসছিলেন। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে তিনি তার সফর স্থগিত করেছেন। আমাদের তিনি দুবাই যেতে বলেছিলেন। কিন্তু আমরা আপাতত বৈঠকটি স্থগিত করেছি।’

 

সর্বশেষ খবর