বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাংলাওয়াশের অপেক্ষা

মেজবাহ্-উল-হক

‘এলাম’ ‘দেখলাম’ ‘জয় করলাম’ -রোমান সম্রাট জুলিয়াসের বাণীটা  টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা এখন বলতেই পারেন, ‘মাঠে নামব, খেলব, জিতব’! সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে জয়টা যে এতো সহজে আসবে তা কে ভেবেছিল? প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের পরাজয়ের পর তো ‘কাগজে-কলমে’ জিম্বাবুয়ের শক্তি বেড়ে গিয়েছিল হাজারগুণ! কিন্তু মাঠে নামার পর দেখা গেল ভিন্ন চিত্র! প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে পারছে না দলটি। ‘দুর্বল’ এই জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেই আজ বাংলাওয়াশের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক দাপুটে পারফরম্যান্সের বড় অবদান ছিল ওপেনার সৌম্য সরকারের। ইনজুরির কারণে তিনি দলে নেই। সাকিব তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রাণ। একাই দুই ক্রিকেটারের ভূমিকা পালন করে থাকেন। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে ছাড়া দল গঠন করতে হিমশিম খেতে হয় নির্বাচকদের। দ্বিতীয় ম্যাচে সেই সাকিবও ছিলেন না। আর মাশরাফি তো ইনজুরি নিয়েই খেলছেন। এরপরেও জিম্বাবুয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছে না। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের দাবি, বাংলাদেশ ১৯৯৭ সালে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার পর সবচেয়ে ‘দুর্বল’ দলের বিরুদ্ধে সিরিজ খেলছে এবার। প্রথম দুই ম্যাচে এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি জিম্বাবুয়ে ম্যাচ জিততে পারে! সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, বাজেভাবে ম্যাচে হারার পরও জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটারদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। সফরকারীদের শরীরী ভাষা দেখে মনে হয়েছে যেন তারা বাংলাদেশে পিকনিক করতে এসেছেন! কোনো দলের ভিতর যখন সিরিয়াসনেস না থাকে তখন তাদের জয় পাওয়াটা কঠিন হয়ে যায়। তবে প্রতিপক্ষ দুর্বল না শক্তিশালী, তা নিয়ে ভাবছে না বাংলাদেশ। টাইগাররা মনোযোগী নিজেদের পারফরম্যান্স নিয়েই। আগের দিন ম্যাচ শেষে মাশরাফি বলেছিলেন, ‘প্রতিপক্ষ কে সেটা বড় বিষয় নয়। আমরা কেমন খেলছি সেটাই আসল। আমরা খুবই সিরিয়াস। প্রতিটি ম্যাচেই আমরা সেরাটা দেখানোর চেষ্টা করব। বাংলাদেশের জার্সিতে যখন খেলতে নামি তখন প্রতিপক্ষ যেই হোক আমরা জয়ের চেষ্টাই করব।’ কোনো বিজয়ের পর দুর্বলতা আর চোখে পড়ে না। তাছাড়া প্রতিপক্ষের অনেক বেশি দুর্বলতার কারণে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে টাইগারদের দুর্বলতা। যেমন সিরিজের দুই ম্যাচেই ব্যর্থ বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। গত তিন সিরিজে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টপ অর্ডার ব্যাটিংয়ে যে দৃঢ়তা দেখা গেছে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে তা চোখে পড়ছে না। এই সিরিজে দেখা যাচ্ছে, শুরুর দিকে দ্রুত উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ছে দল। সেখান থেকে মিডল অর্ডার ও লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা লড়াই করে একটা মোটামুটি স্কোর দাঁড় করাচ্ছে। আর তাতেই দিশেহারা হচ্ছে যাচ্ছে জিম্বাবুয়ে। তাই মাশরাফিদের ব্যাটিংয়ের সমস্যাটা থেকে যাচ্ছে অগোচরেই। দুই ম্যাচেই ব্যর্থ তিন ও চার নম্বরে ব্যাট করতে নামা লিটন কুমার দাস ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ব্যাটিং করার পর আর নিজেকে যেন খুঁজে পাচ্ছেন রিয়াদ। যদিও আগের সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। তবে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচেই ফ্লপ মাহমুদুল্লাহ। প্রথম ম্যাচে ৯ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে করেছেন ৪ রান। আর লিটন প্রথম ম্যাচে রানের খাতাই খুলতে পারেননি, দ্বিতীয় ম্যাচে করেছেন মাত্র ৭ রান। তবুও তাদের প্রতি আস্থা হারাননি অধিনায়ক মাশরাফি। দুই ব্যাটসম্যানই শেষ ম্যাচে জ্বলে উঠবেন বলে আশাবাদী টাইগার দলপতি। তবে বোলাররা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন ভালোভাবেই। সে কারণে দুই ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ব্যক্তিগত সাফল্য-ব্যর্থতা যাই থাকুক এখন মাঠে বাংলাদেশ খেলে একটি ‘ইউনিট বা টিম’ হয়ে। আর ‘টিম-বাংলাদেশ’র কাছে শেষ ম্যাচেও উড়ে যাবে জিম্বাবুয়ে -এমন বিশ্বাস ক্রিকেটামোদীদের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর