সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
রিমান্ডের দাবিতে মানববন্ধন

জেলগেটে নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর  হোসেনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এক বছরের বেশি সময় ধরে তার বিরুদ্ধে নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাকে আগামী সপ্তাহে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পলাতক ও বিদেশে আটক থাকার কারণে নূর হোসেনকে আমরা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারিনি। দেশে ফেরত আনায় আগামী সপ্তাহে দুদক আইন অনুযায়ী এখন তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এই অনুসন্ধানের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। গত বছরের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার পর ধীরে ধীরে নূর হোসেনের অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সম্পদ ভাণ্ডারের তথ্য বের হতে থাকে। প্রভাব খাটিয়ে, প্রতারণা করে, হত্যার ভয় দেখিয়ে বিভিন্নজনের কাছ  থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ওই সম্পদ।

সম্পদের পরিমাণ : দুদক জানায়, ১৯৮৫ সালে নূর  হোসেন একজন ট্রাক হেলপার ছিলেন। এখন তার নামে রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার শিমরাইল মৌজায় ৩৭৩ নম্বর দাগে প্রায় ১১ শতাংশ জমির ওপর সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাঁচতলা বাড়ি। এবিএস পরিবহনের লাক্সারি ৩২টি বাস, শিমরাইল মৌজায় ৭২ ও ৭৩ নম্বর দাগে ১০ শতাংশ জমির ওপর পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ছয় তলা বাড়ি। একই মৌজায় ৩১২ নম্বর দাগে ১০ তলা ফাউন্ডেশনে নির্মিত ছয় তলা ভবন। রসুলবাগে সাড়ে আট কাঠা জমির ওপর সাত তলা ভবন ও সিদ্ধিরগঞ্জ মৌজায় ১০ শতাংশ জমির ওপর সাত তলা ভবন।

রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের দাবিতে বিক্ষোভ : নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে নিহতদের স্বজনরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জের ধনুহাজী রোড এলাকায় এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূূচি পালন করা হয়। নূর হোসেনকে ভারত থেকে হত্যাকাণ্ডের সাড়ে ১৮ মাস পর দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। শুক্রবার আদালতে  শুনানি শেষে ১১ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে নূর হোসেনকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিহতদের স্বজনরা। রবিবার বেলা সাড়ে ১০টায় আধা ঘণ্টাব্যাপী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে নিহতদের আত্মীয়স্বজনরা। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেলিনা ইসলাম বিউটি, নজরুলের ছোটভাই আবদুস সালাম, শ্যালক শফিকুল ইসলাম, নজরুলের সহযোগী নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের, নজরুলের সহযোগী যুবলীগ নেতা নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ছোটভাই মিজানুর রহমান রিপন প্রমুখ। মানববন্ধনে উপস্থিত লোকজন নূর হোসেনের রিমান্ডের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। মানববন্ধনে সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিলে সাত খুনের আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। এর পেছনে আর কারা জড়িত রয়েছে তাদের নাম জানা যাবে। তিনি বলেন, আমাদের পরিবারকে নিয়ে এখন আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। সাত খুনের ঘটনায় নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের বলেন, ঘাতক নূর হোসেনের মুখ থেকে আমরা জানতে চাই প্রকৃত অপরাধী কারা। তাই নূর হোসেনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। নিহতদের স্বজনরা বলেন, কোনো প্রকার জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই নূর হোসেনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এতে করে অনেক অপরাধীই অধরা রয়ে গেছে। মানববন্ধন শেষে নিহতদের স্বজনরা একটি বিক্ষোভ-মিছিল করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের রাস্তায়। মানববন্ধনকারীদের হাতে ছিল ‘নূর হোসেনের ফাঁসি চাই’, ‘সাত খুনের সুষ্ঠু বিচার চাই’ ইত্যাদি লেখা ফ্যাস্টুন, ব্যানার, পোস্টার ও নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড। মানববন্ধনে নিরাপত্তা দিতে এএসপি ফোরকান শিকদারের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ উপস্থিত ছিল।

সর্বশেষ খবর