বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ইন্টারনেট ছিল না দেড় ঘণ্টা

ফেসবুক ভাইবার হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ফেসবুক, ভাইবার,  হোয়াটসআ্যাপ, মেসেঞ্জারসহ ইন্টারনেটভিত্তিক বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুরোধে নিরাপত্তার স্বার্থে এই  নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। গতকাল সকাল থেকে দুই দফা নির্দেশনার মাধ্যমে এই সাইটগুলো বন্ধ করে  দেওয়া হয়। বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এগুলো বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে গতকাল দুপুর দেড়টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ ছিল। যদিও এটি ভুলবশত হয়েছে বলে দাবি করেছে বিটিআরসি। এ প্রসঙ্গে বিকালে সচিবালয়ে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘দেশ ও জাতির নিরাপত্তার স্বার্থেই অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি অনলাইন  যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যান্য অ্যাপ যেমন ট্যাংগো, আইএমও, টুইটারসহ অন্যগুলোও নজরদারিতে রয়েছে।’ তবে ইন্টারনেট বন্ধ করার কোনো নির্দেশনা ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অ্যাপগুলো বন্ধ করার সময় এ সমস্যা হতে পারে।’ বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে প্রথম নির্দেশনায়  ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে আরেকটি নির্দেশে লাইন, ট্যাংগো, হ্যাংআউটসহ আরও কয়েকটি মাধ্যম বন্ধের কথা জানানো হয়। প্রথমে মৌখিকভাবে ও পরে দুটি লিখিত আদেশে বিটিআরসিসহ মুঠোফোন অপারেটর, ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) ও সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এদিকে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড রিভিউ আবেদন খারিজের দুই ঘণ্টা পর দুপুরে বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। যদিও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধের বিষয়টি ‘ভুলবশত’ হয়েছে বলে দাবি করে বিটিআরসি। এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির সচিব সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের জানান, যারা গেটওয়ে সার্ভিসগুলো চালায়, তারা ভুল করে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিল। তাদের সামাজিক  যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ করতে বলা হয়েছিল। তবে তারা মেইন সুইচটিই বন্ধ করে দেয়। ফলে কিছুক্ষণ ইন্টারনেট ছিল না। একইভাবে সামাজিক যোগাযোগ বন্ধ করতে গিয়ে ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের ওপর কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে বলে জানান বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী শাহজাহান মাহমুদ। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিএনপি-জামায়াতসহ ২০-দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধের সময় ‘ভাইবার’ ও ‘হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইন্টারনেটে  যোগাযোগের কয়েকটি মাল্টিমিডিয়া অ্যাপ কয়েক দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নাশকতাকারীরা মোবাইল  ফোনে কথা না বলে ইন্টারনেটভিত্তিক এসব অ্যাপ ব্যবহার করায় তাদের শনাক্ত করতে সমস্যা হচ্ছে। সম্প্রতি দুই বিদেশি নাগরিক হত্যা ও পুলিশের তল্লাশি  চৌকিতে হামলার ঘটনার পর গত ৮ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে জঙ্গিরা কার্যক্রম চালাচ্ছে। জঙ্গিদের যোগাযোগ ও অর্থায়ন বন্ধে তাদের শনাক্ত করতে কিছু ‘অ্যাপ’ বন্ধ করাসহ ইন্টারনেটের ওপর ‘সাময়িক কড়াকড়ি’ আরোপেরও ইঙ্গিত দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে এক অনুষ্ঠানে আবারও তিনি একই কথা বলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এবং গতকাল যুদ্ধাপরাধীদের রায়কে কেন্দ্র করে বহুল ব্যবহৃত এই সাইটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী সাধারণ গ্রাহকরা বেশ ভোগান্তিতে পড়েন। যদিও প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ‘জাতির বৃহত্তর স্বার্থে’ গ্রাহকদের এই কষ্ট মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বন্ধ হওয়া অ্যাপগুলো চালু হতে পরবর্তী নির্দেশনা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

সর্বশেষ খবর